Advertisement
E-Paper

এসেছি চাকরির আশায়, বললেন ঢুকতে ব্যস্ত যুবক

সাধনপুরে ‘মাটি উৎসবে’র চত্বরে ঢোকায় সে কী তাড়াহুড়ো বছর তিরিশের যুবকের! আসানসোল নিউটাউনের বিনোদ রজক (নাম পরিবর্তিত) ধাক্কা-টাক্কা খেয়ে বললেন, ‘‘সরি। কী জানেন, দিদির সভায় এসেছি, যদি চাকরি-টাকরি মেলে এই ভেবে। ঢুকতে না পারলে তো কেলেঙ্কারি!’’

বর্ধমানের সাধনপুরে মাটি উৎসবের মঞ্চে কৃষকরত্ন পুরস্কার দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার। ছবি: উদিত সিংহ

বর্ধমানের সাধনপুরে মাটি উৎসবের মঞ্চে কৃষকরত্ন পুরস্কার দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার। ছবি: উদিত সিংহ

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪৬
Share
Save

সাধনপুরে ‘মাটি উৎসবে’র চত্বরে ঢোকায় সে কী তাড়াহুড়ো বছর তিরিশের যুবকের! আসানসোল নিউটাউনের বিনোদ রজক (নাম পরিবর্তিত) ধাক্কা-টাক্কা খেয়ে বললেন, ‘‘সরি। কী জানেন, দিদির সভায় এসেছি, যদি চাকরি-টাকরি মেলে এই ভেবে। ঢুকতে না পারলে তো কেলেঙ্কারি!’’

বিনোদ একা নন। কাতারে কাতারে লোক বিনা পয়সায় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাসে চেপে মঙ্গলবার হাজির হন মাটি উৎসবের জন্য সাড়ে ৬ কোটি টাকা খরচে তৈরি করা স্থায়ী মেলা প্রাঙ্গণে। কিন্তু তাঁদের অনেকেই চাষবাস থেকে যোজন দূরে। কিছু চাষি ছিলেন অবশ্যই, কিন্তু তাঁরা উৎসবের উদ্দেশ্য জানেন না বলে মেনে নিয়েছেন। গত বছর বধর্মানেই মুখ্যমন্ত্রীর ‘মাটিতীর্থ কৃষিকথা’ অনুষ্ঠানে হাজির ছিল কৃষি থেকে দূরে থাকা পাঁচমেশালি জনতা— সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে বিরোধীদের টিপ্পনী, ‘‘মাটি উৎসবের ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ।’’

পুলিশের হিসেবে মাটি তীর্থে এ দিনের হাজিরা ৫০ হাজার ছুঁইছুই। প্রশাসনের ঘোষিত উদ্দেশ্য, সভায় আসা লোকেরা মেলায় সরকারের বিভিন্ন দফতরের ১০৬টি স্টল ঘুরে দেখবেন। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে স্টলে থাকা আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। নতুন প্রযুক্তি থেকে জৈব সার থেকে কম জলে চাষ—আসবে আলোচনায়।

বাস্তবে যাঁরা এলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকে বিনোদের মতো ‘দায়ে পড়ে’। শাসক দলের নেতাদের নির্দেশের অন্যথা করার সাহস নেই বলে এসেছে একটা অংশ। কেউ এসেছেন মজা লুঠতে। ইঞ্জিনিয়ার, কলেজ পড়ুয়া, মুদির দোকানদারদের অনেকে এসেছেন ‘ঝামেলা’ এড়াতে। আর ছিলেন ‘পাট্টি কর্মী’রা, যাঁদের হাজিরা নিখাদ দলীয় আনুগত্যে। মাটি উৎসব নয়, ‘দিদি’ই দ্রষ্টব্য।

মেলার মাঠ তখনও ভর্তি হয়নি। বর্ধমান ১ ব্লকের সৌভিক যশ দাঁড়িয়েছিলেন এক পাশে। ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়র সৌভিক কি চাষবাসে আগ্রহী? জবাব এল, “কৃষি বা মাটির সঙ্গে সম্পর্ক নেই। আসতে বলা হয়েছিল, এসেছি।’’ মানকর থেকে আসা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য সাগরিকা দত্ত বললেন, “কী জন্য এসেছি, বলতে পারব না। এলাকার নেতারা (তৃণমূল) আমাদের বাসে করে নিয়ে এল। আনন্দ করতে করতে চলে এলাম।” গলা খাদে নামিয়ে জামালপুরের শেখ রাজোয়ার, মেমারির সুলেখা মাঝিরা বলেছেন, “সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাই, না এলে সমস্যা। বুঝতেই পারছেন...।”

কৃষিজীবী? ছিলেন তাঁরাও। তবে রসুলপুরের সুব্রত ঘোষ, চাঁদু রাজবংশীরা জানেন না কেন এসেছেন মাটি উৎসবে। বলেও ফেললেন, ‘‘এখানে চাষের কিছু হচ্ছে না কি, চাষ তো করি আমরাও?’’

উৎসবে হাজির সিপিএমের জেলা পরিষদ সদস্য সাহেবা খাতুন। উপস্থিতির কারণ জানতে চাইতেই চাদরে মুখ ঢেকে হাঁটা দিলেন অন্য দিকে। পিছু ধাওয়া করে ফের একই প্রশ্ন করতে জবাব এল, ‘‘আমাকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে, তাই এসেছি।’’

প্রশাসন সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর সভা ভরাতে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের একটা বড় অংশের দম বেরিয়ে গিয়েছে। প্রশাসনের কর্তাদের অনেকে লোক জোগাড় করার জন্য তৃণমূল নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। আবার কোথাও তৃণমূলের নেতারা নিজেদের উদ্যোগে লোক এনেছেন। সে জন্য তৃণমূলের পতাকা লাগানো গাড়ি রাস্তায় দেখা গিয়েছে, দলের পতাকা হাতে তৃণমূলের নামে স্লোগান দিতেদিতে লোকজন মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকছে, এমনও দেখা গিয়েছে।

কাঁধে ঘাসফুল-পতাকা ঝুলিয়ে এসেছিলেন মেমারির বুথ স্তরের তৃণমূল নেতা সুপ্রভাত কুমার, আউশগ্রামের ভেদিয়া গ্রাম কমিটির সম্পাদক সুকান্ত মণ্ডলেরা। বললেন, “কী একটা হচ্ছে যেন, সে জন্য লোক আনতে বলেছিল নেতারা। সে লোক নিয়ে এসেছি।” তাঁদের জিজ্ঞাসা, “আমাদের দিদি তো রাজনৈতিক নেত্রী। তাঁর সভায় দলের লোক ছাড়া আর কে আসবে!”

তা বলে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় এলে চাকরি মিলবে, এ ধারণা এল কোথা থেকে? তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের উষ্মা, “কে, কী বলেছে, তার জবাব কেন দেব!”

mati utsav mamata bandyopadhyay saumen dutta

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}