Advertisement
০৩ মে ২০২৪

বন‌্ধ তুলতে আর্জির সঙ্গেই চ্যালেঞ্জ মমতার

দুপুরে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে অনুরোধ। সন্ধ্যায় নবান্নে চ্যালেঞ্জ। পুরভোটে বিপুল জয়ের পরে মঙ্গলবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আজকের ফলের পরে অনুরোধ করব, বন্ধ তুলে নিন।’’ আর সন্ধ্যায় নবান্ন থেকে বেরোনোর মুখে তিনি বললেন, ‘‘বন্ধ করতে দেব না। প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বন্ধ তুলে নিতে আবেদনও জানিয়েছি।’’ রাতে ফেসবুকে এক ধাপ এগিয়ে বললেন, ‘‘এই বন্ধ-সংস্কৃতি বন্ধ করুন।’’ মুখ্যমন্ত্রীর যাবতীয় অনুরোধ ও চ্যালেঞ্জ উড়িয়ে দিয়ে সিপিএম, বিজেপি-সহ বিরোধী শিবির জানিয়ে দিয়েছে, বৃহস্পতিবার বন্ধ হবেই।

তাল ঠুকছেন দু’পক্ষই।

তাল ঠুকছেন দু’পক্ষই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪৭
Share: Save:

দুপুরে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে অনুরোধ।

সন্ধ্যায় নবান্নে চ্যালেঞ্জ।

পুরভোটে বিপুল জয়ের পরে মঙ্গলবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আজকের ফলের পরে অনুরোধ করব, বন্‌ধ তুলে নিন।’’ আর সন্ধ্যায় নবান্ন থেকে বেরোনোর মুখে তিনি বললেন, ‘‘বন্‌ধ করতে দেব না। প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বন্‌ধ তুলে নিতে আবেদনও জানিয়েছি।’’ রাতে ফেসবুকে এক ধাপ এগিয়ে বললেন, ‘‘এই বন্‌ধ-সংস্কৃতি বন্ধ করুন।’’

মুখ্যমন্ত্রীর যাবতীয় অনুরোধ ও চ্যালেঞ্জ উড়িয়ে দিয়ে সিপিএম, বিজেপি-সহ বিরোধী শিবির জানিয়ে দিয়েছে, বৃহস্পতিবার বন্‌ধ হবেই।

মুখ্যমন্ত্রী আর্জি জানানোর আগের দিন, সোমবার থেকেই ধর্মঘট ব্যর্থ করার লক্ষ্যে ময়দানে নেমে পড়েছিল রাজ্য প্রশাসন। পুরভোটে নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে মঙ্গলবার মমতাও বাম-বিজেপির ডাকা বন্‌ধের বিরোধিতায় নেমে পড়লেন। তাঁর নির্দেশে রাস্তায় নেমে ধর্মঘট ব্যর্থ করার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে নবান্নে। এ দিনই রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে কাল, বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত বন্‌ধের দিন জনজীবন সচল রাখার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। বন্‌ধের দিন রাজ্য সরকারি কর্মীদের বাধ্যতামূলক ভাবে অফিসে আসার নির্দেশ দিয়ে আজ, বুধবার বিজ্ঞপ্তি জারি করবে সরকার। আজই বেলা ১১টায় সব জেলার পুলিশ সুপার, কমিশনারেটের প্রধান, সব রেঞ্জের ডিআইজি, আইজি-কে নিয়ে ভিডিও-সম্মেলন করবেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বন্‌ধে জনজীবন সচল রাখার জন্য রাজ্য প্রশাসনকে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়ারই নির্দেশ দেবেন বলে নবান্ন সূত্রের খবর।

ভোট চলাকালীন বিশাখাপত্তনমে (দলীয় সম্মেলনে) পড়ে থাকার জন্য সিপিএমের রাজ্য নেতাদের একহাত নেন মমতা। পুরভোটে নিরঙ্কুশ জয়ের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরে পরেই হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাড়িতে বসে তিনি অভিযোগ করেন, সিপিএম মানুষের পাশে থাকে না। কোনও কাজ করে না। শুধু টিভিতে ভাষণ দেয়। যখন এখানে ভোট হচ্ছে, তখন ওঁরা সব বিশাখাপত্তনমে গিয়ে বসে আছেন। তার পরেই বলেন, ‘‘খাটতে হয়, বুঝলেন। মানুষের পাশে থাকতে হয়। নির্বাচনের ফল না-দেখেই বন্‌ধ করছে! আরে, ওরাও তো কিছু আসনে জিতেছে। কে যে কার বিরুদ্ধে বন্‌ধ করছে কে জানে! প্রথমে ওদের বন্‌ধ ছিল কেন্দ্রীয় নীতির বিরুদ্ধে। পরে তা আমাদের বিরুদ্ধে হয়ে গেল! আবার তাকে সমর্থন করে বসল বিজেপি। সিপিএম-বিজেপি এক হয়ে গিয়েছে।’’ সিপিএম ও বিজেপি-কে কটাক্ষ করে মমতার মন্তব্য, ‘‘এখন বিজেপি আর সিপিএম এ ওর কোলে, ও এর আঁচলে দোলাদুলি করছে। দোলাও দোলাও দোলাও আমার হৃদয়!’’

কাজ করতে হয় বলে মমতা যে-মন্তব্য করেছেন, তার জবাবের ঢঙেই বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘‘মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করাটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মানুষের অনেক সমস্যা আছে। কিন্তু তার মধ্যেই তৃণমূল যে একদলীয় ব্যবস্থা কায়েম করতে চাইছে, তার প্রতিবাদ করতে হবে। ঘরে চুপচাপ বসে থাকলে কেউ রক্ষা পাবেন না।’’ বন্‌ধের পথ থেকে সরে আসার জন্য মমতা এ দিন যে-আবেদন জানিয়েছেন, এ ভাবেই তা উড়িয়ে দিয়েছেন বিমানবাবু।

তাঁরা যে নীতিগত ভাবেই বন্‌ধ-ধর্মঘটের বিরোধী, মুখ্যমন্ত্রী হয়ে বারে বারেই তা বলে এসেছেন মমতা। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমরা বন্‌ধের বিপক্ষে। ওই দিন (বৃহস্পতিবার) আমাদের স্বচ্ছ বাংলা গড়ার কর্মসূচি আছে। অনেক দিন আগে থেকেই তা ঠিক হয়ে আছে। ‘নির্মল বন্ধন’। স্বচ্ছ বাংলা গড়ার শপথ নেব আমরা। বিশ্ব ব্যাঙ্ক, ইউনিসেফ— সকলেই এই অনুষ্ঠানে যুক্ত। ওই দিন কোনও বন্‌ধ হবে না। সে-দিন আমার সব ছাত্রছাত্রী কিন্তু রাস্তায় থাকবে। কিছু ঘটলে তার দায় সিপিএমের উপরে বর্তাবে।’’ বন্‌ধে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও এ দিন আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রামবাংলা আর শহর আমাদের সঙ্গে রয়েছে। সকলকে অনুরোধ করব, দোকানপাট যেন খোলা রাখেন। যদি কিছু ঘটে, সরকার অ্যাকশন নেবে। ক্ষতিপূরণ দেবে।’’ বন্‌ধ ব্যর্থ করতে অবশ্য বলপ্রয়োগ হবে না বলেই দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ ভাবে বন্‌ধ প্রতিরোধ করা হবে। কেউ কোনও রকম বল প্রয়োগ করবে না।’’

ভোটের ফলের উল্লেখ করে জনগণ তাঁদের সঙ্গেই আছে বলে মমতা যে-দাবি করেছেন, তার জবাব দিতে গিয়ে আমজনতারই দ্বারস্থ হয়েছেন বিমানবাবু। তিনি বলেন, ‘‘উনি (মমতা) কী বোঝাতে চাইছেন? সরকারের বিরোধিতাই করা যাবে না! রাজার বিরোধিতা করা যাবে না! এর প্রতিবাদে মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে।’’ বন্‌ধ ব্যর্থ করতে শাসক দলের রাস্তায় নামার সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করে বিমানবাবুর দাবি, ‘‘মানুষ রাস্তায় না-বেরোলে শাসক দলের কর্মীরা লজেন্স চুষবেন! তার পরে যদি তাঁরা জোর করে দোকান খোলেন, তাতে তো বন্‌ধের বাস্তবতাই প্রমাণিত হবে।’’

ধর্মঘটের প্রশ্নে অনড় থাকলেও ইডেনে কলকাতা নাইট রাইডার্স বা কেকেআর-এর খেলা নিয়ে বিজেপি-সিপিএম দু’পক্ষই নরম। সিপিএমের তরফে জানানো হয়েছে, সিএবি-র কর্তারা এলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে। ক্রীড়ামোদী, যাঁরা খেলা দেখতে আসবেন, তাঁদেরও ছেড়ে দেওয়ার জন্য শ্রমিক সংগঠনগুলির কাছে আবেদন জানিয়েছেন বিমানবাবু। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহও বলেন, ‘‘বন্‌ধ তুলে নেওয়ার জন্য আইপিএল-কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে আবেদন করেছেন। কারণ, ওই দিন কেকেআর-এর খেলা আছে। খেলা রাত ৮টা থেকে। কিন্তু তার প্রক্রিয়া তো শুরু হয়ে যাবে সন্ধ্যা ৬টায়। তাই ওই আবেদনে সাড়া দিয়ে ১০ ঘণ্টা বন্‌ধ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। কিন্তু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বন্‌ধ করতেই হবে।’’

মুখ্যমন্ত্রী জনজীবন স্বাভাবিক রাখার আশ্বাস দিলেও পরীক্ষার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কোনও ঝুঁকি নিচ্ছে না। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই পরীক্ষাসূচি বদল করেছে। বৃহস্পতিবার, বন্‌ধের দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ্যার যে-পরীক্ষা আছে, তা কবে হবে, সেই ব্যাপারে এ দিনও অনিশ্চয়তা কাটেনি। উপাচার্য সুরঞ্জন দাস দিল্লিতে। তাই পরীক্ষার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়। পরীক্ষার এক দিন আগেও বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না-পারায় ৮০ হাজার পরীক্ষার্থী চরম বিভ্রান্তিতে পড়েছেন।

সিপিএমের ডাকা বন্‌ধের বিরোধিতা করেছে আনন্দমার্গও। সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, ১৯৮২ সালের ৩০ এপ্রিল বিজন সেতুতে আনন্দমার্গের ১৭ জন সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসিনীকে খুন করা হয়। তার প্রতিবাদে প্রতি বছর ওই দিন তাঁরা মৌনী মিছিল করে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তাই সিপিএম বন্‌ধ ডাকলেও ওই দিন তাঁদের মিছিল হবে। আনন্দমার্গের তরফে জানানো হয়েছে, তারা এই বন্‌ধকে ধিক্কার জানাচ্ছে। যে-সিপিএম ৩৪ বছর ধরে বাংলায় সন্ত্রাস চালিয়েছে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাদের বন্‌ধ ডাকা সাজে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE