তিস্তা-তর্কের পরে এ বার আত্রেয়ী-আর্তি। আর্তি এবং দাবি। দাবি: আত্রেয়ীর জলের ভাগ চাই এ-পার বাংলারও। আর্ত প্রশ্ন: ও-পার বাংলা আত্রেয়ীতে বাঁধ দিয়ে এ-পারের প্রাপ্য রুখছে কেন?
পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি হতে দেবেন না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত তাঁর আপত্তিতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরে শেখ হাসিনার সঙ্গে তিস্তা নিয়ে সরকারি ভাবে তাঁর কোনও আলোচনা হচ্ছে না। কেন্দ্রের কাছ থেকে এমন আশ্বাস পেয়ে ঢাকা সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গী হচ্ছেন মমতা। কিন্তু কোনও রকম আগাম আলোচনা ছাড়াই বাংলাদেশ সরকার কী করে আত্রেয়ী নদীর উপরে বাঁধ দিল, সেই প্রশ্ন তুলে এ বার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার জন্য আত্রেয়ী নদীর জলের ভাগ দিতে হবে। তাঁর প্রশ্ন, তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ প্রশ্ন তুলেছে। আত্রেয়ীর জলের ভাগ নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলব না কেন?
তিস্তার শাখানদী আত্রেয়ী কী করে বাঁধ দিয়ে আটকে দেওয়া হল, বৃহস্পতিবার বিধানসভায় সেচ দফতরের বাজেট-বিতর্কে সেই প্রসঙ্গ টেনে আনেন আরএসপি বিধায়ক নর্মদাচন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘‘আত্রেয়ী নদীর উপরে বাংলাদেশের দিকে বাঁধ দেওয়ায় দক্ষিণ দিনাজপুরের দিকে জল কমে গিয়েছে। এতে সেচের ক্ষতি হচ্ছে। জলকষ্টে ভুগছেন দিনাজপুরের বিস্তীর্ণ অংশের মানুষ। অথচ রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে চুপ করে রয়েছে।’’
জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘‘আত্রেয়ীর উপরে বাঁধ দেওয়ার বিষয়টি নজরে আসার পরেই সরকার সক্রিয় হয়েছে। সেচ দফতরের তরফে বিষয়টি জানানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। এই নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।’’ রাজীববাবু জানান, তিনিও কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী উমা ভারতীকে চিঠি লিখে এবং দেখা করে বিষয়টি জানিয়েছেন। মন্ত্রীর কথায়, ‘‘এটি দু’দেশের সম্পর্কের বিষয়। তাই যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, সেটা নেবে প্রধানমন্ত্রীর অফিস ও বিদেশ মন্ত্রক।’’
আত্রেয়ী আদতে তিস্তারই শাখানদী। সেচ দফতর সূত্রের খবর, উপগ্রহ-চিত্রে দেখা গিয়েছে, এই নদী উৎসস্থল থেকে কিছু দূর পর্যন্ত মাটির নীচ দিয়ে বয়ে গিয়েছে। তার পরে বাংলাদেশে ঢুকে তার জলপ্রবাহ এসেছে মাটির উপরে। অভিযোগ, এই নদী বাঁক নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাটের ঢোকার আগে বাংলাদেশ সরকার বাঁধ দিয়ে তার গতিপথ আটকেছে। সরকারের এক মুখপাত্র জানান, বছর তিনেক আগে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার চিরিবন্দর উপজেলায়, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ঠিক দু’কিলোমিটার আগে আত্রেয়ীর উপরে বাঁধ দেওয়ার কাজ শুরু হয়। এখন, সেই বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে, বালুরঘাটের দিকে আত্রেয়ীর জলপ্রবাহ কমে গিয়েছে।
দফতরের কর্তারা জানান, নদীতে জল কমে যাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের কাছে অভিযোগ জানান। টানা কয়েক মাস উপগ্রহ-চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আত্রেয়ীতে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ফলে বালুরঘাটের দিকে বিশেষত গরমে নদীতে প্রায় জলই থাকছে না। তবে বর্ষার সময় বাড়তি জল হলে বাঁধ উপচে তা বালুরঘাটের দিকে আসতে পারে।
মন্ত্রীর কথায়, আত্রেয়ী নদীতে বহু রিভার লিফটিং পাম্প রয়েছে। ফলে পর্যাপ্ত জল নদীতে ‘রিচার্জ’ না-হলে অর্থাৎ ফিরে না-এলে সেই সব পাম্প চালানো মুশকিল। তা ছাড়া দু’দেশের মধ্যে বয়ে যাওয়া নদীতে বাঁধ দেওয়ার যে-সব নিয়মকানুন আছে, এ ক্ষেত্রে তা মানা হয়েছে কি না, সেটা দেখার দায়িত্ব কেন্দ্রের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy