সুর মেলাতে: জয়দেবের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশে অনুব্রত মণ্ডল। বৃহস্পতিবার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
গেরুয়াধারী বাউলদের সমাবেশে এসে বিজেপি-কে ‘গেরুয়া-খোঁচা’ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ এখানে বাউল উৎসবের সূচনা করে হাজার খানেক গেরুয়াধারী বাউলের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,‘‘আপনারাই গেরুয়ার অধিকারী। কারণ, যাঁরা মানবতার কথা বলেন, তাঁরাই গেরুয়াধারণ করতে পারেন। অনেকে এই রঙ নিয়ে বিভেদের খেলায় নেমেছে। তাঁদের থেকে সাবধান হবেন।’’
বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলির অভিযোগ হল, সমাজের সর্বস্তরে তারা গেরুয়াকরণের রাজনীতি করে। লাল রঙে বামপন্থীদের যেমন রাজনৈতিক একাধিপত্য ছিল, গেরুয়া নিয়ে তেমনই অধিকার দাবি করে বিজেপিও। বাউলদের সামনে রেখে বিজেপি-র গেরুয়া-রাজনীতিকে আক্রমণ করাই ছিল মমতার আজকের বক্তৃতার মূল সুর।
তাঁর মন্তব্য: ‘‘আমি রামকে মানব, রাবণকে নয়।’’ যা শুনে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘‘ভালো কথা ওঁর এখন গেরুয়া রঙের কথা মনে পড়েছে। নীল-সাদা ছাড়াও যে কোনও রঙ হয় তা তিনি বুঝতে পারছেন। আর রাম নাম করুন। এক সময় দস্যু রত্নাকরও রাম নাম করেছিলেন।’’
বক্তৃতায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন,‘‘গেরুয়া ত্যাগের প্রতীক। ভেদাভেদের নয়। এখন চোর, চরিত্রহীন, ডাকাত সর্দাররাও গেরুয়া ধারণ করছেন। দেশ চালাচ্ছেন, রাজ্য দখলের স্বপ্ন দেখছেন।’’ হিন্দুত্বের মোড়কে বিজেপি ভেদাভেদ ছড়িয়ে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতিই করছে বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী। অপরপক্ষে তাঁর বিরুদ্ধে তোষণের রাজনীতি করার অভিযোগ বার বার করে আসছে মোদীর দল। সেই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আরও একবার জানিয়ে দেন, ‘‘সংখ্যালঘুদের কাছে টেনে নিতেই হবে। আর সংখ্যাগুরুরা তো চিরন্তনভাবেই থাকবেন। সবাইকে নিয়ে চলাই হল আসল ধর্ম।’’ মুখ্যমন্ত্রী নিজেও সে পথেই চলছেন। সদ্য গঙ্গাসাগর থেকে ফিরে বোলপুরে এসেছেন তিনি। বোলপুর সফর শুরুই করেছেন কঙ্কালীতলা মন্দির দর্শন করে। আবার পাথরচাপড়ির দাতা বাবার মাজার বা সংখ্যালঘুদের সমস্যা নিয়েও খোঁজ রাখেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
শুধু দল হিসেবে বিজেপি-ই নয়, মমতার কথায় খোঁচা ছিল সদ্য দলত্যাগী মুকুল রায়ের উদ্দেশেও। এদিন এক বারও মুকুলের নাম মুখে আনেননি মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বিজেপি নেতাদের একাংশকে বার বার ‘মিথ্যাবাদী, দুর্নীতিগ্রস্ত, চোর, চরিত্রহীন’ বলে অভিহিত করেছেন। অনেকে মনে করছেন, এই আক্রমণ মুকুলের উদ্দেশে। বীরভূমের মাটিকে বেছে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এ কথা বলারও কারণ রয়েছে। দিন কয়েক আগেই মুকুল রায় বীরভূমে এসে মিছিল-মিটিং করে গিয়েছেন। এখানকার শাসক দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত(কেষ্ট) মন্ডল সম্পর্কে ‘হাটে হাঁড়ি ভাঙার’ কথাও জানিয়ে গিয়েছেন মুকুল। তার প্রেক্ষিতে এ দিন মমতা বলেন,‘‘শুধু কুৎসা করছে। কেষ্টকে প্ররোচনা দিচ্ছে। ডাকাত সর্দার এসে জ্ঞান দিয়ে যাচ্ছে।’’
সরকার চালানোর ক্ষেত্রেও যে বিজেপি প্রতি পদে সমস্যা তৈরি করছে তা এদিন জানান মুখ্যমন্ত্রী। সিপিএমের দেনার দায়ে সরকার চালানোয় যে মুশকিলের হয়ে দাঁড়াচ্ছে সে কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,‘‘১০ বছর আগে যে ঋণ নেওয়া হয়েছিল তার আসল এখন শোধ করতে হচ্ছে। আমরা যখন ক্ষমতায় আসি তখন বছরে ২১ হাজার কোটি টাকা কাটত। এ বছর ৪৮ হাজার কোটি টাকা কেটে নিয়ে যাবে। তার পরেও উন্নয়ন চালিয়ে যাচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy