ফাইল চিত্র।
যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, তখন যেমন, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও নিরাপত্তার আড়ম্বর প্রদর্শন তাঁর নাপসন্দ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ মহলের খবর, যখন যে-পদেই থাকুন, তাঁকে ঘিরে পুলিশি নিরাপত্তার বাড়াবাড়ি, রাস্তা খালি করে দেওয়া, তাঁর কনভয়কে আগে এগিয়ে দেওয়া ইত্যাদি পছন্দ করেননি তিনি। এ বার নিজের মন্ত্রীদের উদ্দেশে তাঁর নির্দেশ, গাড়িতে যেন কোনও রকম লাল-নীল আলো লাগানো না-হয়। ভিআইপি-রা যাবেন বলে জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা ‘ব্লক’ করাও চলবে না।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসার দিন থেকেই মমতা এই ধরনের বিষয় এড়িয়ে চলেছেন। এমনকি তিনি সরকারি গাড়িতে চড়েন না এবং গাড়ির মাথায় লাল-নীল বাতিও ব্যবহার করেন না। মমতার কনভয়ের পুলিশের গাড়িগুলিও যায় তাঁর গাড়ির পিছনে। খুব অনিবার্য কোনও কারণ বা প্রয়োজন ছাড়া তিনি সামনে কোনও পাইলট কার নেন না।
নিজের মন্ত্রিসভার সহকর্মীদেরও তিনি এই বিষয়গুলি বর্জন করতে বলেছেন বলে মমতার ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি। বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাঘরে কলকাতা পুলিশের পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে সে-কথারই পুনরাবৃত্তি করেন মমতা। এ দিনের অনুষ্ঠানে আইএএস, আইপিএস, ডব্লিউবিসিএস অফিসারদের সঙ্গে ডব্লিউবিপিএস-এর বৈষম্য রদেরও বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী।
পুলিশকর্মীদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘আমি মিনিস্টারদের বলেছি, গাড়িতে লাল-নীল আলো লাগাবেন না। পুলিশেরও যাঁরা আছেন, আপনারা যখন রাস্তা দিয়ে যান, হুড়হুড় করে ১৭-১৮ মিনিটে গাড়ি চালিয়ে চলে যান। এটায় কিন্তু বদনাম হয়। আমি নিজে ট্র্যাফিকে দাঁড়াতে খুব পছন্দ করি। যদি অন্য গাড়ি আটকানো হয়, আমার সঙ্গে যাঁরা থাকেন, আমি সারা ক্ষণ ওঁদের বকাবকি করি যে, কেন আটকেছে গাড়ি। আমি এক দিক দিয়ে যাব, ওরা আর এক দিক দিয়ে যাবে। রাস্তা যত সচল থাকবে, তত ভাল থাকবে।’’ তাঁর অভিযোগ, যাঁরা (ভিআইপি-রা) খুব বেশি গতিতে গাড়ি নিয়ে যান, মানুষ তাঁদের পছন্দ করে না। অনেক সময়ে তাঁদের যাওয়ার রাস্তা অন্যদের জন্য বন্ধ রাখা হয়। এ ভাবে রাস্তা ব্লক করা চলবে না বলেও এ দিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন মমতা।
ডব্লিউবিপিএস আধিকারিকদের আর্থিক সুযোগ সুবিধার কথাও বলেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘আইএএস এবং ডব্লিউবিসিএস-দের মধ্যে ভাতার বৈষম্য ছিল। স্টেট পুলিশ সার্ভিসেও এই রকম বৈষম্য আছে। যদি ডব্লিউবিসিএসেরটা আমরা সমাধান করতে পারি, তা হলে ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ সার্ভিসেরটাও সমাধান করা উচিত।’’ পুলিশের কাজে মেয়েদের আরও বেশি সংখ্যায় এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিনের অনুষ্ঠানে পুলিশকর্মীদের পদক দেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘নিচু তলার পুলিশকর্মীরা আমাদের সম্পদ। উঁচু তলায় যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের মনে রাখতে হবে, নিচু তলার কর্মীরা আপনাদের সাহায্য না-করলে সাফল্য আসতে পারে না।’’ এই অনুষ্ঠান থেকেই দূরনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে গার্ডেনরিচ জল শোধনাগারে বাড়তি ২৫ মিলিয়ন গ্যালন ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এবং আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সে নিকাশি পাম্পিং স্টেশনের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী ও মেয়র ফিরহাদ (ববি) হাকিমও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy