Advertisement
০৪ মে ২০২৪

জেলা ‘নির্মল’, ঘোষণা হয়তো মাটি মেলায়

‘নির্মল’ হওয়ার পথটা কেমন ছিল? ২০১৫ থেকে বর্ধমানকে ‘নির্মল’ করতে লক্ষ্য নেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু টাকার অভাব, পঞ্চায়েতগুলি সে ভাবে সক্রিয় না হওয়ায় সেই লক্ষ্যে পৌঁছনো যায়নি, দাবি এক কর্তার।

আড়াল: মাটি মেলায় আসবেন অতিথিরা। তার আগে ঘিরে ফেলা হয়েছে কালনা রোডের ডাম্পিং গ্রাউন্ড। —নিজস্ব চিত্র।

আড়াল: মাটি মেলায় আসবেন অতিথিরা। তার আগে ঘিরে ফেলা হয়েছে কালনা রোডের ডাম্পিং গ্রাউন্ড। —নিজস্ব চিত্র।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:১০
Share: Save:

কখনও টাকার অভাব। কখনও স্থানীয় পঞ্চায়েতগুলির অসহযোগিতার অভিযোগ।— নানা কারণে বারবার ধাক্কা খেয়েছে সাবেক বর্ধমানের ‘নির্মল’ হওয়ার ‘প্রশাসনিক স্বপ্ন’। কিন্তু বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সাবেক বর্ধমান, বর্তমানে পূর্ব ও পশ্চিম, দু’ভাগই ‘নির্মল’ হয়েছে বলে প্রশাসনের কর্তাদের দাবি। আরও দাবি, সব ঠিক থাকলে মঙ্গলবার ‘মাটি মেলা’র মঞ্চ থেকে দুই জেলাকেই ‘নির্মল’ হিসেবে ঘোষণা করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শুক্রবার বিকেলে অতিরিক্ত জেলাশাসক (‌জেলা পরিষদ) বাসব বন্দ্যোপাধ্যায় পূর্ব বর্ধমানের ২৩ জন বিডিও-কে চিঠি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ‘নির্মল জেলা’ ঘোষণা করতে চলার কথা জানিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। সে জন্য ইতিমধ্যেই জেলার প্রতিটি ব্লকে আগামী বৃহস্পতিবার বিশেষ অনুষ্ঠান করার জন্য তিনি বিডিও-দের অনুরোধ করেছেন। ওই চিঠিতে আরও জানানো হয়েছে, প্রতিটি এলাকায় পড়ুয়াদের নিয়ে শোভাযাত্রার মাধ্যমে বাসিন্দাদের অভিনন্দন জানানো, এলাকা যাতে ‘নির্মল’ থাকে, সে জন্য গ্রামবাসীদের শপথবাক্য পাঠ ও আলোচনাসভাও যেন আয়োজন করা হয়। এ ছাড়াও ‘মিশন নির্মল বাংলা’ সম্পর্কিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়েও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) অনুরাগ শ্রীবাস্তবও বলেন, “মাটি মেলার মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী আমাদের জেলাকে নির্মল বলে ঘোষণা করতে পারেন। আমরা প্রস্তুত রয়েছি।”

কিন্তু ‘নির্মল’ হওয়ার পথটা কেমন ছিল? ২০১৫ থেকে বর্ধমানকে ‘নির্মল’ করতে লক্ষ্য নেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু টাকার অভাব, পঞ্চায়েতগুলি সে ভাবে সক্রিয় না হওয়ায় সেই লক্ষ্যে পৌঁছনো যায়নি, দাবি এক কর্তার। ২০১২-র রিপোর্ট অনুযায়ী (‌বেস লাইন সার্ভে), সাবেক বর্ধমানে ৪ লক্ষ ৪৪ হাজার ৮৮টি বাড়িতে শৌচাগার ছিল না। আরও দেড় লক্ষ বাড়িতে শৌচাগার থাকলেও তা অব্যবহৃত থাকায় নষ্ট হয়ে যায়।

সেই সময় থেকেই ধাপে ধাপে কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথ ভাবে ‘বেস সার্ভে লাইন’ রিপোর্ট অনুযায়ী শৌচাগারহীন বাড়িগুলিতে শৌচাগার তৈরির কাজ শুরু করে। পুর এলাকাতেও শুরু হয় কাজ।

জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানান, কয়েকবার টাকার অভাবে কাজ আটকে যায়। আবার শহরাঞ্চলে জায়গার অভাবে ‘কমিউনিটি শৌচাগার’ তৈরি করতে সমস্যা হয়। পঞ্চায়েত বা পুরসভাগুলিকে শৌচাগারের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে অনেকটা সময় কেটে যায় বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু সব সমস্যা মিটিয়ে কাজ শুরুর পরেও দেখা যায়, ‘বেসিক লাইন সার্ভে’র বাইরে প্রায় লক্ষাধিক পরিবারে শৌচাগার নেই।

এর পরে জেলা প্রশাসন ঠিক করে, একশো দিনের কাজ থেকে শৌচাগার তৈরি করা হবে। ধাপে ধাপে জেলার প্রতিটি পঞ্চায়েত ও ব্লককে ‘নির্মল’ বলে ঘোষণা করে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট পাঠায় জেলা প্রশাসন। ওই রিপোর্ট পেয়ে পুজোর আগে জেলায় এসেছিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতর। তাঁরা ঘুরে দেখেন, জেলায় ৫৯টি পঞ্চায়েত ‘নির্মল’ হওয়া থেকে অনেক দূরে। এর পরেই প্রশাসন অতিরিক্ত জেলাশাসক (‌জেলা পরিষদ)-কে প্রয়োজনীয় দায়িত্ব দেয়। তিনি ওই রিপোর্ট ধরে প্রতিটি পঞ্চায়েতকে ১৫ দিনের মধ্যে শৌচাগারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের নির্দেশ দেন। পঞ্চায়েত কাজ করছে কি না দেখার জন্য যুগ্ম বিডিও-র নেতৃত্বে তৈরি হয় নজরদারি দল। মাস খানেক আগে রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের দল ঘুরে গিয়ে, জেলাকে ‘নির্মল’ বলে ঘোষণা করা যেতে পারে বলে শংসাপত্র দিয়েছে।

জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ (জনস্বাস্থ্য) গার্গী নাহা বলেন, “নির্মল হওয়ার পরেও প্রতিটি পঞ্চায়েত যাতে নজরদারি চালায়, সে জন্যও আমরা উদ্যোগী হয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE