Advertisement
০২ মে ২০২৪

আস্থা নেই গৌতমে, অরূপকে পাহাড়ে তুললেন মুখ্যমন্ত্রীই

কয়েকদিন আগে তাঁর প্রশাসনিক দায়িত্ব কিছুটা খর্ব হয়েছিল। এ বার দলে তাঁর সাংগঠনিক দায়িত্বও কাটছাঁট করলেন তৃণমূল নেত্রী। দিন কয়েক আগে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের প্রশাসনিক ক্ষমতা কিছুটা খর্ব করা হয়। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে তাঁকে অব্যাহতি দিয়ে সেই জায়গায় আনা হয়েছে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে দলের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীকে।

দার্জিলিঙের পথে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে সৌজন্য বিনিময় পাহাড়ের এক বাসিন্দার। ছবি: সন্দীপ পাল।

দার্জিলিঙের পথে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে সৌজন্য বিনিময় পাহাড়ের এক বাসিন্দার। ছবি: সন্দীপ পাল।

অনির্বাণ রায় ও রেজা প্রধান
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৫ ০৩:৫৬
Share: Save:

কয়েকদিন আগে তাঁর প্রশাসনিক দায়িত্ব কিছুটা খর্ব হয়েছিল। এ বার দলে তাঁর সাংগঠনিক দায়িত্বও কাটছাঁট করলেন তৃণমূল নেত্রী।

দিন কয়েক আগে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের প্রশাসনিক ক্ষমতা কিছুটা খর্ব করা হয়। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে তাঁকে অব্যাহতি দিয়ে সেই জায়গায় আনা হয়েছে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে দলের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীকে। এ বার দলেও তাঁর গুরুত্ব কমালেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার দার্জিলিঙে পাহাড়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পরে সেখানে মমতা জানিয়ে দেন, গৌতমবাবুর পাশাপাশি দলের তরফে দার্জিলিং পাহাড়ের দেখাশোনা করবেন যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও। দলনেত্রী পাহাড়ের নেতাদের সরাসরি অরূপবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার নির্দেশও দেন।

পুরভোটে শিলিগুড়ি দখল করতে ব্যর্থ গৌতমবাবু। তারপর থেকেই তাঁর ডানা ছাঁটার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এনবিএসটিসি-র পাশাপাশি জলপাইগুড়ি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকেও তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর বদলে সেই দায়িত্ব পেয়েছেন সাংসদ বিজয় বর্মণ।

গৌতমবাবুর ডানা ছাঁটার কারণ হিসেবে দলের এক শীর্ষ নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘শিলিগুড়ি পুরভোটের ফলাফলের পরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর উপর দলনেত্রীর আস্থা একটু কমেছিল। সেই কারণে অন্যান্য নেতাদের উত্তরবঙ্গের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’’ তৃণমূল অন্দরের আরও খবর, এই পরিস্থিতিতে শিলিগুড়ির মেয়র তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী সিপিএমের অশোক ভট্টাচার্যের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে গৌতমবাবুর বৈঠকের খবরও দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ভাল চোখে দেখেননি। সব মিলিয়ে দলনেত্রীর কাছে তাঁর গুরুত্ব অনেকটাই কমে যায়। কিন্তু অরূপবাবুকেই কেন দায়িত্ব দেওয়া হল? মন্ত্রী তো বটেই, তার উপর কলকাতাকেন্দ্রিক অরূপবাবুর মতো ব্যস্ত নেতার পক্ষে পাহাড়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা আদৌ সম্ভব হবে কি? এই বিষয়ে অরূপের বক্তব্য অবশ্য জানা যায়নি।

তৃণমূলের এক সূত্রে জানা গিয়েছে, গৌতমবাবু একক দায়িত্বে থাকার সময় পাহাড়ের সব বুথে কমিটি থাকলেও, সেখানে সংগঠন গত দু’বছরে তেমন বাড়েনি। জিএনএলএফ বা অন্য মোর্চা, বিরোধী দলের শক্তি হ্রাস হলেও, তার ফায়দা মোর্চার ঘরেই গিয়েছে। পাহাড়ে মুখ্যমন্ত্রী বারবার আসায় জিটিএ-র উপর প্রশাসনিক চাপ বাড়লেও, সংগঠন হিসেবে তৃণমূল মোর্চার উপরে চাপ বাড়াতে পারেনি। এমনকী তৃণমূল একক শক্তিতে পাহাড়ে গত বছরে বড় কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিও নিতে পারেনি। দলের নেতাদের একাংশের দাবি, সরকারি নানা পদের দায়িত্ব সামলাতে ব্যস্ত গৌতমবাবুও পাহাড়ে খুব বেশি সময় দিতে পারেননি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যানের পদ-সহ মোট ১০টি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলান।

এই সব কথাই দলনেত্রীর কানে পৌঁছেছিল। তার পরেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে দলের একাংশ মনে করছে। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূল টিমের মতো, সকলে এক সঙ্গে কাজ করে। এতে গুরুত্ব কম বেশির কিছু নেই।’’

তিনি জানান, পাহাড়ের যুবক যুবতীরা খেলাধুলো ভালবাসে। অরূপবাবু যুবকল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে পাহাড়ে অনেক কাজ করবেন। তাঁর কথায়, ‘‘সংগঠন দেখার কাজেও ওঁর সাহায্য পেয়ে উপকৃত হব। এখন থেকে অরূপবাবু তিন মাসে একবার পাহাড়ে আসবেন।’’ তৃণমূলের পাহাড় কমিটির মুখপাত্র বিন্নি শর্মার কথায়, অনেক বিষয়ে এত দিন কলকাতায় রাজ্য নেতৃত্বের অনুমোদন বা যোগাযোগ প্রয়োজন হতো, অরূপবাবু দায়িত্বে আসায় তাতে সুবিধে হবে। অরূপবাবুর সঙ্গে দেখা করতে তাঁরা কলকাতায় যাবেন বলে বিন্নি জানান।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের নিয়ে দার্জিলিঙের কফিশপে কফি খেতে গিয়ে সেখানকার কর্ণধারের সঙ্গে অরূপবাবুর পরিচয় করান মমতা। কলকাতা ও কালিম্পঙে শাখা খুলতে অনুরোধও করেন। সে জন্য তাঁদের অরূপবাবুর সঙ্গেই যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘটনাচক্রে, কফিশপে মুখ্যমন্ত্রীর এই পরিচয় পর্ব যখন চলছে, তার আগে দাজির্লিং ছেড়ে গৌতমবাবু সরকারি কাজে কার্শিয়াঙে চলে গিয়েছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE