খোশমেজাজে। সোমবার নারায়ণগড়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সুমন বল্লভ
চ্যালেঞ্জটা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত জিতেছেন এবং তা হইহই করেই। তারই উদ্যাপনের সাক্ষী রইল সোমবারের নারায়ণগড়।
বিধানসভা নির্বাচনের অন্তিম অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সদ্যপ্রাক্তন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রর তরজা চরমে উঠেছিল। বিরোধী দলনেতাকে মমতা বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমি চ্যালেঞ্জ করছি, হিম্মত থাকে তো নারায়ণগড় থেকে জিতে দেখান।’’ সূর্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘‘দেখা হবে লড়াইয়ের ময়দানে।’’
১১ এপ্রিল, বিধানসভা ভোটের দ্বিতীয় দফায় সেই লড়াইটা হয়েছিল। দল তাঁকে যাদবপুরে মনোনয়ন দিতে চাইলেও নারায়ণগড়ের ডাক্তারবাবু লড়েছিলেন নিজের ভিটে থেকেই। ভোটের তিন দিন আগে সূর্যের গড়ে প্রচারে এসে মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ ছিল, ‘‘আমাকে নারায়ণগড় দিন। যা চাইবেন তাই দেব।’’ শেষ পর্যন্ত নারায়ণগড়ে ‘সূর্যাস্ত’ হয়েছে। মধুর বদলার পরে সোমবার নারায়ণগড়ে এসে কথা রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দিয়েছেন নারায়ণগড়-প্যাকেজ।
নারায়ণগড়ের জন্য এ দিন কয়েকটি প্রকল্প ঘোষণা করেন মমতা। জানান, নারায়ণগড়ে একটি মাল্টিসুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হবে, ৩০০ শয্যার। এ ছাড়া রথিপুরে সরকারি কলেজ, বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজের সমস্যা কাটাতে গৌমাতে বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন এবং খাদ্য দফতরের গুদামও তৈরি হবে নারায়ণগড়ে।
এ দিন মমতা সরকারের কাজের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘‘৪৯ বছরের ইতিহাসে একক দল হিসেবে ক্ষমতায় এসেছি। কারণ এত দেনা সত্ত্বেও যা কাজ করেছি, তা গত ৪০ বছরে হয়নি। আমি খোঁজ নিয়েই বলছি, গত ৪০ বছরে এত কাজ হয়নি।’’
মুখ্যমন্ত্রীর বরাবরের আক্রমণের কেন্দ্রে ছিল বামফ্রন্ট। চলতি ভোটের সমীকরণ দেখিয়েছে, রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠে এসেছে কংগ্রেস। মমতা তাই উন্নয়নের প্রতিযোগিতার তালিকায় সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের জমানাকেও টেনে এনেছেন।
অবশ্য ছাড় পাননি নারায়ণগড়ের ভূমিপুত্র। বাম জমানার স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যবাবুকে কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরের হাল, হাসপাতালে রোগী আর যমালয়ে জীবন্ত মানুষ যেন এক ছিল! আর এখন সস্তার ওষুধ, মাল্টিসুপার স্পেশ্যালিটি সুবিধা।’’
যে সুবিধা তিনি দিচ্ছেন, তার কোনওটাই যে বন্ধ হবে না, তা এ দিন জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে দেনার দায় মাথায় নিয়ে এখনই যে নতুন কিছু দেওয়া সম্ভব নয়, ঘুরিয়ে তা-ও বুঝিয়ে মমতা বলেন, ‘‘কেন্দ্র কেরোসিনের কোটা কমিয়ে দিয়েছে। অনেকের কাছে আর কেরোসিন পৌঁছবে না। তার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছি। আজও অনুরোধ করলাম। চেষ্টা করলাম বাজার থেকে কিনে দেওয়া যায় কিনা। কিন্তু তা সম্ভব নয়। ইন্ডিয়ান অয়েল কেরোসিন নিয়ন্ত্রণ করে। প্রচুর খরচ। তাই ইচ্ছা থাকলেও পারছি না।’’
সভায় উপস্থিত এক আমলার ব্যাখ্যা, নির্বাচনের আগে খাদ্য সুরক্ষা মিশনের আওতার বাইরে থাকা প্রায় ২ কোটি মানুষকে দু’টাকা কেজি দরে চাল দিতে এই মুখ্যমন্ত্রীই প্রায় ৫০০০ কোটি টাকার দায় মাথায় নিয়েছিলেন। সেই দায় এখন বইতে হচ্ছে। খাদ্য সুরক্ষা মিশনে সস্তার চাল কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। একই ভাবে কেরোসিন নিয়ন্ত্রণ করে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক। ভর্তুকির রাজনীতি থেকে তিনি যে খানিকটা হলেও সরে যেতে চাইছেন, এটা রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতির জন্য মঙ্গল।
এই সভা নিয়ে সরকারি বি়জ্ঞাপনে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর নাম না থাকা নিয়ে নানা অঙ্ক কষা হচ্ছিল নানা মহলে। সে সব কেটে যায়, যখন মমতার গাড়ি থেকে সভাস্থলে নামেন শুভেন্দু।
সভায় জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা মুখ্যমন্ত্রীকে বক্তব্যের জন্য আহ্বান জানালে মমতা বলেন, আগে শুভেন্দু বলবে। সভায় শুভেন্দু বলেন, ‘‘বাংলার জনগণমন অধিনায়িকা কথা দিয়েছিলেন। তিনি কথা রেখেছেন।’’ প্রশান্তির হাসি তখন মুখ্যমন্ত্রীর মুখে।
প্রচারে এসে সূর্যকান্তকে হারানোর আর্জির সঙ্গে সঙ্গে আরও একটা কথা বলে গিয়েছিলেন মমতা। ঘাসফুল ফোটালে নারায়ণগড়ে এসে সেখানকার বিখ্যাত ডালবড়া খাবেন। রমজানের কারণে এ দিন মঞ্চে বসে তা না খেতে পারলেও গাড়িতে তুলে নিয়েছেন সেই ডালবড়া। গাড়িতে ওঠার সময় হাসিমুখে আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘আবার আসব হাসপাতালের শিলান্যাসের দিন।’’
এ দিনের সভায় আরও একটি উপাদান চোখে পড়েছে। এত কাল পশ্চিম মেদিনীপুর দেখে এসেছে মমতার জেলাসফরের সভায় জেলাশাসক নন, মাইক থাকে পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের হাতে। এ দিন কিন্তু তা দেখা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy