দ্বিতীয় ইনিংস শুরুর পর পশ্চিম মেদিনীপুর দিয়েই জেলা সফর শুরু করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চলতি মাসের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহেই নারায়ণগড়ে মমতা সভা করবেন বলে ঠিক রয়েছে। ১৮ জুন সভা হতে পারে বলে খবর। সেই মতো প্রস্তুতিও শুরু চলছে।
এ বার ভোট প্রচারে নারায়ণগড়ে এসে দলের প্রার্থী প্রদ্যোৎ ঘোষকে জেতানোর আর্জি জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘যদি সূর্যবাবুকে হারাতে পারেন তবে প্রথম সভা করব নারায়ণগড়ে। আমি এখানকার ডালের বড়া ভালবাসি। সেদিন কিন্তু বেলদার ডালের বড়া খাওয়াতে হবে!’ কথা রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি মাসের দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় সপ্তাহে বেলদায় এসে প্রশাসনিক সভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা প্রশাসনের অন্য এক সূত্রে খবর, একেবারে চূড়ান্ত না- হলেও একটি দিন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। দিনটি ১৮ জুন। ওই দিন সভা হবে ধরে নিয়েই প্রস্তুতি এগোচ্ছে। বেলদা স্টেডিয়ামে সভা হওয়ার কথা। ইতিমধ্যে প্রস্তাবিত সভাস্থল পরিদর্শন করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা। সঙ্গে ছিলেন জেলার পদস্থ প্রশাসনিক- কর্তারাও। প্রস্তাবিত সভাস্থলের সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখেছেন তাঁরা।
অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর সভার দিনক্ষণ নিয়ে এখনই কিছু বলতে নারাজ জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “প্রশাসনিক সভার দিনক্ষণ শীঘ্রই চূড়ান্ত হবে।” জেলা প্রশাসনের অন্য এক কর্তার কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর সভা বেলদায় হওয়া নিয়ে কোনও অনিশ্চয়তা নেই। সভা হবেই। নবান্ন থেকে সেই বার্তাও জেলায় চলে এসেছে। সেই মতো সভার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তবে কবে সভা হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। দু’- তিনদিনের মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে যাবে।”
ওই কর্তার কথায়, “যে সব দিন নিয়ে আলোচনা চলছে তারমধ্যে ১৮ জুনও রয়েছে। ওই দিন সভা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে তার আগেও হতে পারে।” নারায়ণগড় বিধানসভা বহুদিন ধরেই বামেদের দখলে ছিল। এখান থেকেই জিততেন সূর্যকান্ত মিশ্র। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, এ বার নারায়ণগড়ে এসে ‘কল্পতরু’ হতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেশ কিছু প্রকল্পের কথা ঘোষণা করতে পারেন তিনি। এই প্রশাসনিক সভা থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশ কিছু প্রকল্পের উদ্বোধন এবং শিলান্যাসও হবে। কী কী প্রকল্পের উদ্বোধন এবং শিলান্যাস হবে, জেলায় এখন তার তালিকা তৈরির কাজ চলছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “২০টিরও বেশি প্রকল্পের শিলান্যাস হতে পারে। ৩০টিরও বেশি প্রকল্পের উদ্বোধন হতে পারে।” জেলা প্রশাসনের এক সূত্র জানাচ্ছে, সভা থেকে জেলায় দু’টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালেরও উদ্বোধন হতে পারে। চন্দ্রকোনা-ঘাটাল সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পের শিলান্যাস হতে পারে। এই প্রকল্পে ব্যয় হওয়ার কথা প্রায় ৭৪ কোটি টাকা।
বেলদা তথা নারায়ণগড়ের জন্যও থাকবে নতুন কিছু প্রকল্প। তালিকায় থাকতে পারে আইটিআই, নার্সিং কলেজ প্রভৃতি। কী কী প্রকল্প রূপায়ণ করা জরুরি, তা দলীয় ভাবেও তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে পৌঁছনো হয়েছে বলে দলেরই এক সূত্রের দাবি। এ জন্য নারায়ণগড়ের নবনির্বাচিত বিধায়ক প্রদ্যোৎ ঘোষকে নিয়ে বৈঠক করেছেন নারায়ণগড়ের তৃণমূল নেতৃত্ব। বৈঠকে উন্নয়নমূলক কিছু প্রকল্পের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।
দলের থেকে কী মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নির্দিষ্ট কোনও প্রকল্প নিয়ে আর্জি জানানো হবে? তৃণমূলের নারায়ণগড় ব্লক সভাপতি মিহির চন্দ বলেন, “কিছু প্রকল্পের রূপায়ণ জরুরি। দলের মধ্যে আলোচনা করেই যা জানানোর দিদিকে জানাব।” আশাবাদী নারায়ণগড়ের বিধায়ক প্রদ্যোৎ ঘোষও। প্রদ্যোৎবাবু বলেন, “নারায়ণগড়ের জন্য দিদি অনেক কিছুই করবেন। একটু অপেক্ষা করতে হবে।”
দলের এক সূত্রের দাবি, মঙ্গলবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রদ্যোতবাবুর দেখা হয়। কথাও হয়। প্রদ্যোৎবাবু মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁর জেলা সফরের দিনক্ষণ জানতে চান। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, শীঘ্রই তিনি নারায়ণগড় যাবেন। তৃণমূলের অনেকেই মনে করেছিলেন, সূর্যকান্তবাবুকে হারানোয় প্রদ্যোৎবাবুকে মন্ত্রিসভায় জায়গা দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে তা হয়নি। অবশ্য জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলছেন, “এখনও সময় রয়েছে! সূর্যকান্ত মিশ্রকে হারানোর জন্য প্রদ্যোৎদাকে কোনও না- কোনও পুরস্কার দিতে পারেন দিদি! প্রশাসনিক সভার দিনই কিছু চমক থাকতে পারে!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy