বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের নিয়ে নীতি কী হবে, তা নিয়ে তৃণমূলে বিভ্রান্তি আরও বেড়ে গেল স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে!
এত দিন দলনেত্রীর নির্দেশেই বিক্ষুব্ধ কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কলকাতা-সহ ৯২টি পুরসভার ভোটে দলের টিকিট না পাওয়া নির্দল বা ‘গোঁজ’ প্রার্থীদের বেশ কয়েক জনকে তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। ভোটের ফলপ্রকাশের দিন আবার মমতাই জয়ী নির্দলদের তৃণমূলে ফিরিয়ে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তেমন কয়েক জন ইতিমধ্যে দলে ফিরতেও শুরু করেছেন। অথচ বুধবার মমতাই আবার বিক্ষুব্ধদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিলেন! নজরুল মঞ্চে এ দিন দলের জয়ী কাউন্সিলরদের সভায় তৃণমূল নেত্রীর স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, ‘‘গায়ের জোরে কেউ কেউ নির্দল দাঁড় করিয়ে দলের চারটে লোককে হারিয়ে দিল। তোমার যখন সময় আসবে, স্যাট করে কেটে দেব!’’
যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা বিক্ষুব্ধদের বিরুদ্ধে এমন হুঁশিয়ারি দিলেন, সেখান থেকে তিনি একই সঙ্গে এই ঘোষণাও করেছেন, ‘‘কলকাতায় তো তিন জন নির্দল আমাদের দলে চলে এসেছে। এর মধ্যে আনোয়ার (৮০ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের হেমা রামকে পরাস্ত করেছেন শেখ আনোয়ার খান) তো এখানেই আছে। বাকি দু’জন আসেনি।’’ অন্য কোন জেলা থেকে জয়ী নির্দলেরা সেখানে উপস্থিত, হাত তুলে জানান দিতেও নির্দেশ দেন মমতা। উঠে দাঁড়ান বেশ কয়েক জন। দলনত্রীর এমন দ্বৈত ভূমিকায় নির্দলদের নিয়ে আতান্তরে পড়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব! কারণ শুধু যে কলকাতার জয়ী বিক্ষুব্ধ বা নির্দলদের তৃণমূলে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা-ই নয়। অন্যত্রও বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান পুরসভার ৬ জন কাউন্সিলর যেমন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, যার মধ্যে নির্দলেরাও আছেন। বাঁকুড়া পুরসভার তিন জন নির্দল কাউন্সিলরও যোগ দিয়েছেন শাসক দলে। নজরুল মঞ্চের অনুষ্ঠানের পরে তৃণমূল ভবনে তাঁরা আনুষ্ঠানিক ভাবে শাসক দলের পতাকা হাতে নিয়েছেন। বিক্ষুব্ধ নির্দলদের অনেককে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি এ বার যাঁরা টিকিট পাননি, তাঁদেরও দলের সম্পদ বলে মন্তব্য করেছেন মমতা। নতুন সব কাউন্সিলরের জন্যই এ দিন মমতার পরামর্শ, ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধন্যবাদ জানাতে হবে।
দলের একাংশের ব্যাখ্যা, নির্দলদের আসলে দুই শ্রেণিতে ভেঙে নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। বিক্ষুব্ধ হিসাবে ভোটে দাঁড়িয়ে যাঁরা নিজেরা জিতেছেন, তাঁদের অনেককেই দলে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু নির্দল দাঁড়িয়ে নিজেরা জেতেননি অথচ দলের প্রার্থীর হারের কারণ হয়েছেন, এমন বিক্ষুব্ধদের কড়া হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন মমতা। পরিস্থিতি বুঝে এই বিক্ষুব্ধদের অনেকে দলে ফিরতে চাইছেন। তাঁদের জন্য যাতে দরজা সহজে খুলে দেওয়া না হয়, সেটাই নিশ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে। শাসক দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘পুরো বিচারটাই হচ্ছে ভোটের ফল দেখে।’’ কিন্তু মমতার নানা মন্তব্যে এই রকম কোনও নির্দেশিকা স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছে না বলেই বিভ্রান্তি বাড়ছে, মনে করছে দলের একাংশ।
যে সব পুরসভা ত্রিশঙ্কু, সেখানে নির্দল বা অন্য দলের কাউন্সিলরদের নিজের দলে এনে বোর্ড গড়ার মরিয়া চেষ্টা যে তৃণমূল করছে, তা-ও এ দিন মমতার কথায় স্পষ্ট। ক’টি পুরসভা এখনও ত্রিশঙ্কু, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সীর কাছ থেকে জেনে নিয়ে মমতা বলেন, ‘‘১১টা ত্রিশঙ্কু। এর মধ্যে ৬-৭টা তো আমাদেরই হয়ে গিয়েছে!’’ বস্তুত, অন্য দল ভাঙিয়ে বা বিক্ষুব্ধদের আবার দলে ফিরিয়ে, যেন তেন প্রকারেণ পুরবোর্ড গড়ার চেষ্টা নিয়ে দলের বর্ষীয়ান নেতাদের একাংশের মধ্যেই আপত্তি আছে। এক বর্ষীয়ান নেতার মন্তব্য, ‘‘মুকুল রায় দলীয় পদে থাকাকালীন অন্য দল ভাঙানোয় চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। কিন্তু তাঁর কাজ ছিল নিঃশব্দে। এখন সবই জানাজানি হয়ে যাচ্ছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy