Advertisement
১১ মে ২০২৪
রেশনের গমও অখাদ্য

কেরোসিনে কোপ, ক্ষুব্ধ মমতার চিঠি মোদীকে

রাজ্য জুড়ে রেশনে কেরোসিন আর গম নিয়ে ঘোরতর সমস্যা দেখা দিয়েছে। এক দিকে কেন্দ্র বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ায় কেরোসিন কম মিলছে। অন্য দিকে গমের মান খুব খারাপ। দশা তার বর্ষায় ভিজে যাওয়া চিনির বস্তার মতো।

কাজী গোলাম গউস সিদ্দিকী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৬ ০৪:১৯
Share: Save:

রাজ্য জুড়ে রেশনে কেরোসিন আর গম নিয়ে ঘোরতর সমস্যা দেখা দিয়েছে। এক দিকে কেন্দ্র বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ায় কেরোসিন কম মিলছে। অন্য দিকে গমের মান খুব খারাপ। দশা তার বর্ষায় ভিজে যাওয়া চিনির বস্তার মতো। দলা পাকানো। অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলো আর খাওয়ার উপযোগী থাকছে না। অগত্যা তা ফেরত পাঠিয়ে ভাল গম আনতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার।

কেরোসিন ছাঁটাই নিয়ে চিন্তিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। পশ্চিমবঙ্গের জন্য বরাদ্দ কেরোসিনের কোটা কমানোর প্রতিবাদ জানিয়ে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছেন তিনি। রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বুধবার এ কথা জানিয়ে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে লিখেছেন, সারা পশ্চিমবঙ্গেই, বিশেষ করে পাহাড়, ডুয়ার্স, জঙ্গলমহল এবং আয়লা-বিধ্বস্ত সুন্দরবন এলাকায় কেরোসিনের প্রয়োজন খুব বেশি। এই অবস্থায় রাজ্যের বরাদ্দ থেকে বছরে ছ’হাজার ২০০ কিলোলিটার কেরোসিন কেটে দেওয়া হয়েছে। এটা বাংলার পরিস্থিতির বিচারে মোটেই ঠিক হয়নি বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

রান্নার জ্বালানি তো বটেই, সেই সঙ্গে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আলো জ্বালাতেও কেরোসিন দরকার। এই দফায় রাজ্যের প্রাপ্য কেরোসিনের বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় বিধানসভা নির্বাচন চলাকালীন। তার আগে পশ্চিমবঙ্গের জন্য কেন্দ্র বছরে ৮০ হাজার ২৬২ কিলোলিটার কেরোসিন বরাদ্দ করছিল। সেটাও প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয় বলে খাদ্যমন্ত্রীর অনুযোগ। তিনি জানান, রেশন কার্ডের সংখ্যার নিরিখে রাজ্যের প্রয়োজন এক লক্ষ ২৬ হাজার কিলোলিটার কেরোসিন। সেই প্রয়োজন তো মেটানো হচ্ছেই না। যেটুকু পাওয়া যাচ্ছিল, তার থেকেও কেটে নেওয়া হচ্ছে অনেকটা। শুধু তা-ই নয়, কেরোসিনের বরাদ্দে আরও কোপ পড়তে পারে বলে খবর আসায় চিন্তা বেড়েছে রাজ্যের।

পশ্চিমবঙ্গে রেশন কার্ডের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ন’‌কোটি। এমনিতেই চাহিদার তুলনায় কম কেরোসিন আসছিল। তার উপরে বরাদ্দ ছাঁটাইয়ের ফলে রেশন কার্ডধারীরা এখন কেরোসিন পাচ্ছেন আরও কম। রাজ্যে সরকারি ভাবে কেরোসিনের উৎস শুধু কেবল রেশন দোকানই। জ্যোতিপ্রিয়বাবুরা খবর পেয়েছেন, রাজ্যের বরাদ্দ থেকে আরও চার হাজার কিলোলিটার কেরোসিন কমিয়ে দেওয়া হবে শীঘ্রই। খাদ্যমন্ত্রী জানান, কেন্দ্রের এই একতরফা সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকার মানবে না। তাঁর অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের বরাদ্দ ছাঁটাই করে সেই কেরোসিন পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে। মন্ত্রীর কথায়, ‘‘এটা চলতে পারে না।’’

কেরোসিনে কোপের পাশাপাশি চলতি মাসে রাজ্যের রেশনে যে-গম দেওয়া হচ্ছে তার মান অত্যন্ত খারাপ। অনেক রেশন দোকান প্রায় দলা পাকানো গম দিচ্ছে। অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস ডিলার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু জানান, সাধারণ ভাবে রেশনে যে-গম আসে, তা কখনও ভাল, কখনও খারাপ। এ মাসে যে-গম এসেছে, তার মান খুব খারাপ। খাদ্য দফতরের খবর, জুনে যে-গম রাজ্যে এসেছে, তার মান এতটাই খারাপ যে, তা ফেরত পাঠিয়ে নতুন করে ভাল গম আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

খাদ্যমন্ত্রী জানান, রাজস্থান ও পঞ্জাব থেকে দু’‌রেক গম পাঠানো হয়েছিল। তার মান খারাপ বলে সেই রেক ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই দু’টি রেকের সব গম যে ফেরত যায়নি, এখন রাজ্যের রেশন দোকানে পাওয়া নিম্ন মানের গম তারই প্রমাণ বলে জানাচ্ছেন রেশন ডিলারদের একাংশ। খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, রাজস্থান ও পঞ্জাবের যে-সব কেন্দ্র থেকে গম পাঠানো হবে, সেখানে এ বার খাদ্য দফতরের অফিসার পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ট্রেনে গম তোলার আগেই অফিসারেরা গমের মান পরীক্ষা করবেন। মান ঠিকঠাক না-থাকলে ট্রেনে তোলার আগেই পত্রপাঠ তা বাতিল করে দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE