প্রতীকী ছবি।
অস্কার জয়ী তথ্যচিত্রের সূত্রে উত্তরপ্রদেশের অখ্যাত গ্রাম হাপুর এখন শিরোনামে। তবে মেয়েদের দিনযাপনের পরিস্থিতির নিরিখে হাপুরের সঙ্গে বিশেষ পার্থক্য নেই পশ্চিমবঙ্গের গ্রামগুলির।
ঋতুস্রাবের ছুতমার্গ নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্রে হাপুরের অবস্থা উঠে এসেছে। বাংলার মেয়েদের একাংশ ঋতুস্রাবের সময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকেন। স্কুলের ভেন্ডিং মেশিন থেকে পাওয়া স্যানিটারি ন্যাপকিনেই গোটা দিন কাটায় কিশোরীরা। শৌচালয় ও ঋতুস্রাব নিয়ে সচেতনতার অভাবে দিনভর একটা ন্যাপকিন ব্যবহার করার পরে রাতে ফেলে দেয় ওরা।
মহিলাদের স্বাস্থ্য নিয়ে কর্মরত বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা জানাচ্ছেন, মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় এ ভাবেই দিন কাটে মেয়েদের। ঋতুস্রাব নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়েছে। কাপড়ের পরিবর্তে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার বাড়াতে ন্যাপকিন তৈরির মেশিন বসেছে। কিন্তু তার পরেও ঋতুস্রাব নিয়ে সচেতনতা তলানিতে। এমনকি স্কুল থেকে দেওয়া স্যানিটারি ন্যাপকিনের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র নিয়ম অনুযায়ী স্যানিটারি ন্যাপকিন নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে বানানোর পরে তার মান নির্ণয় করা জরুরি। কিন্তু স্কুল থেকে দেওয়া স্যানিটারি ন্যাপকিনের মান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যাচাই করা হয় না। ঋতুস্রাবের সময়ে সংক্রমণ রুখতে কাপড়ের পরিবর্তে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের উপরে জোর দেওয়া হয়। কিন্তু নিম্ন মানের ন্যাপকিনে সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ব্যবহারকারীদের একাংশ জানাচ্ছে, স্কুলের দেওয়া স্যানিটারি ন্যাপকিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে তুলো থাকে না। দ্রুত রক্ত চুঁইয়ে পড়ে। ব্যবহারকারীরা ভিজে ভাব অনুভব করে। এই অবস্থায় এক ন্যাপকিনে পুরো দিন কাটানোটা চূড়ান্ত অস্বস্তিকর হয়ে পড়ে।
হু-র মাপকাঠি
ন্যাপকিনের উপরের স্তর ঢেউ খেলানো হতে হবে।
ব্যবহার করতে হবে ভিজে ভাব শুষে নেওয়ার মতো জিনিস।
লিক বন্ধের প্রয়োজনীয় জিনিস দিতে হবে।
সিন্থেটিক জাতীয় জিনিস ব্যবহার করা যাবে না।
ত্বকে অ্যালার্জি যাতে না-হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
ন্যাপকিন তৈরির পরে মান যাচাই করতে হবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে।
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, বয়ঃসন্ধির রোগ এড়াতে শুধু ন্যাপকিন দেওয়াই যথেষ্ট নয়। ঋতুস্রাবের মতো বিষয় বোঝানো প্রয়োজন। অথচ এই নিয়ে সামাজিক ছুতমার্গ চরমে। তাই ন্যাপকিন ব্যবহারের কারণ ব্যাখ্যা করা দরকার। কত ক্ষণ অন্তর ন্যাপকিন বদলানো জরুরি, সেটাও পড়ুয়াদের জানানো দরকার। চিকিৎসকেরা জানান, ঋতুস্রাব চলাকালীন কমপক্ষে দিনে চারটে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করা উচিত। ব্যবহৃত ন্যাপকিন পুরু হয়ে গিয়েছে মনে হলে দ্রুত পরিবর্তন করা জরুরি। স্ত্রীরোগ চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দেহে বিভিন্ন ব্যাক্টিরিয়া রয়েছে। রক্তের সংস্পর্শে তারা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তাই দীর্ঘ ক্ষণ ভেজা ন্যাপকিন ব্যবহার করলে ব্যাক্টিরিয়া রক্তে মিশে যেতে পারে। ঘটতে পারে মারাত্মক বিপদ।’’
মহিলাদের স্বাস্থ্যসচেতনতা নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন সুজয় ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘ঋতুস্রাব নিয়ে ছেলে ও মেয়ে সকলের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হলে ছুতমার্গ কমবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy