পশ্চিমবঙ্গে তিন বছর কোনও মাওবাদী হামলা হয়নি। মাওবাদী উপদ্রুত রাজ্যের তালিকা থেকে তাই বাংলাকে বাদ দেওয়ার কথা ভাবছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তবে মাওবাদী মোকাবিলায় মোদী সরকারকে নড়ে বসতে হচ্ছে ছত্তীসগঢ়ের পরিস্থিতি নিয়ে। মূলত সুকমায় হামলার সূত্রেই আজ ১০টি মাওবাদী প্রভাবিত রাজ্যের বৈঠক ডাকেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সেখানে মূলত আলোচনা হয় সব থেকে বেশি মাওবাদী উপদ্রুত রাজ্য ছত্তীসগঢ় নিয়েই। বৈঠকে রাজ্যগুলির মধ্যে সমন্বয়ের লক্ষ্যে একটি ‘ইউনিফায়েড কম্যান্ড’ গড়ার উপরে জোর দেন রাজনাথ।
অধিকাংশ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এলেও বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবর্তে এসেছিলেন ডিজিপি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ ও রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব মলয় দে। তাঁরা বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে কেন্দ্রের বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া নিয়ে সরব হন। পশ্চিমবঙ্গের বক্তব্যকে সর্মথন জানায় অ-বিজেপি রাজ্যগুলি। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বলেন, ‘‘কেন্দ্র যদি অর্থ বরাদ্দই কমিয়ে দেয় তবে এই ধরনের বৈঠক করাটা অর্থহীন।’’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব মহর্ষিও স্বীকার করে নেন, ‘‘অধিকাংশ রাজ্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবিতে আজ সরব হয়েছিল।’’
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব বৈঠকে মেনে নেন, পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘মাওবাদী উপদ্রুত ৩৫টি জেলার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের কোনও জেলা নেই। তবে নিরাপত্তা খাতে যে ১০৬টি জেলায় কেন্দ্র বাড়তি অর্থ দেয়, তার মধ্যে রাজ্যের ৩টি জেলা রয়েছে।’’ রাজ্যকে উপদ্রুত তালিকা থেকে বাদ দিলে ৩ জেলার ওই বাড়তি বরাদ্দও বন্ধ হতে পারে। এখানেই আপত্তি বাংলার। কারণ, পরিকাঠামোর উন্নয়ন ঘটিয়েই মাওবাদী সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব। রাজ্য সেই পথে হেঁটেই সাফল্য পেয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় অর্থ কমিয়ে দিলে উন্নয়ন ব্যাহত হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অবশ্য জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গকে উপদ্রুত তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ভাবনা শুরু হলেও বিহার-ঝাড়খণ্ড-ওড়িশার মাওবাদী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন:আগের রাতেও সাগর ঠিক ছিল: বান্ধবী
বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধিরা জানান, তিন বছর মাওবাদী হামলা না হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই যে ভাবে সিআরপিএফের জোনাল দফতর সরিয়ে নেওয়ার আলোচনা হচ্ছে, তা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী।
এই মুহূর্তে মাওবাদী সমস্যা সবচেয়ে তীব্র ছত্তীসগঢ়ে। সুকমায় সর্বশেষ হামলার পর এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ ‘মিশন সুকমা’ চালানোর জন্য যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা কার্যত সমর্থন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সূত্রের খবর, খুব দ্রুত ওই এলাকায় বড় অভিযান চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্য থেকে মাওবাদী মোকাবিলায় মোতায়েন আধাসেনাদের পাঠানো হবে। পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে ২৫ কোম্পানি সিআরপিএফ। হাত পড়বে তাতেও।
রাজনাথের বক্তব্য, সুকমায় শুধু গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল না, ওই হামলা ছিল সকলের ভাবনার বাইরে। ভবিষ্যতে মাওবাদীদের থেকে এক কদম এগিয়ে থাকাটা জরুরি। এর জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ও তথ্যের আদানপ্রদান আরও বাড়ানোর উপরে জোর দেন তিনি। রাজনাথের কথায়, ‘‘তেলঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশের তুলনায় ছত্তীসগঢ়ের বস্তার থেকে মাত্র ২০% ও সুকমা থেকে মাত্র ৪% গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া যায়।’’ এই ছবি বদলানোর উপরে জোর দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর দাবি, নোটবন্দির ফলে মাওবাদীদের অর্থবল কমেছে। কিনতে সমস্যা হচ্ছে বলেই অস্ত্র লুঠ করতে মরিয়া হয়ে উঠছে তারা। সুকমায় দু’বার হামলা হয়েছে সেই কারণেই। লুঠ হওয়া অস্ত্র যাতে মাওবাদীরা ব্যবহার করতে না পারে, তার জন্য বন্দুকে বায়োমেট্রিক ট্রিগার ব্যবহারের উপরে জোর দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে মাওবাদী দমনে সেনা ও বায়ুসেনা ব্যবহার নিয়ে যে জল্পনা চলছিল তা উড়িয়ে দিয়ে রাজীব মহর্ষি বলেছেন, ‘‘এর কোনও প্রশ্নই নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy