আলোর দোকানে ভিড়। ছবি: সোহম গুহ।
মাটির প্রদীপ বা মোমবাতি নয়। এ বার দীপাবলিতে এলইডি আলো দিয়ে ঘর সাজাতে হবে!
মেয়ের আবদারে শহরের একটি বৈদ্যুতিন সামগ্রীর দোকনে এসে এলইডি আলোর খোঁজ করছিলেনর কাঁথির বিশ্বরঞ্জন দাস। তাঁর কথায়, “মেয়ের স্কুলের বন্ধুরা এ বার তাদের বাড়িতেও বৈদ্যুতিন আলোর আলোকসজ্জা করবে বলে জানিয়েছে। সেই শুনে মেয়েরও বায়না এলইডি আলো দিয়েই বাড়ি সাজাতে হবে।” তা হলে কী এলইডি আলোর ঝলকানিতে হারিয়ে যাচ্ছে প্রদীপের আলোর স্নিগ্ধতা?
প্রশ্নের জবাবে বিশ্বরঞ্জনবাবু বলেন, “যুগ পাল্টেছে মশাই। আগে কালীপুজোর সময় আমরা মাটির প্রদীপ, মোমবাতি দিয়ে ঘরে দীপাবলির আলোকসজ্জা করেছি। সে সব এখন হারিয়ে যাচ্ছে। এখনকার ছেলেমেয়েরা প্রদীপ বা মোমবাতির মিনমিনে আলোতে নয়, বৈদ্যুতিন উজ্জ্বল আলোর রঙবেরঙের আলোকমালায় দীপাবলি করতে চায়।” তবে তিনি বলেন, “দীপাবলিতে ঠাকুরের আসনের সামনে জ্বালানোর জন্য দু’চারটে প্রদীপ ও এক প্যাকেট মোমবাতিও অবশ্য কিনতে হবে।”
শুধু বিশ্বরঞ্জনবাবু নন, প্রায় একই বক্তব্য কাঁথির ধমর্দাসবাড়ের গৌতম দাস, বিদ্যাসাগর পল্লির দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও জালালখাঁবাড়ের সন্ধ্যা কামিলার। গৌতমবাবুর কথায়, “প্রদীপের আলোয় একটা স্নিগ্ধতা আছে সেটা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। কিন্তু বৈদ্যুতিন আলোর উজ্জ্বলতার কাছে তা ম্লান মনে হয়।” পেশায় ব্যাঙ্ক কর্মী সন্ধ্যা কামিলা বৈদ্যুতিন আলো কিনতে কিনতেই বলে ওঠেন, “প্রদীপের আলো জ্বালাতে নানান ঝক্কি ঝামেলা সামলাতে হয়। প্রদীপের সলতে পাকিয়ে তেল দিয়ে প্রদীপ জ্বালাতে অনেক সময় দরকার হয়। ব্যস্ততার যুগে মানুষের সময় কোথায়?”
দীপাবলির আগে এলইডি আলোর চাহিদাও বাড়ছে বলে জানালেন কাঁথি শহরের বৈদ্যুতিন সামগ্রী বিক্রির একটি দোকানের মানস মাইতি। মানসবাবুর কথায়, “গত কয়েকবছর ধরেই এলইডি আলো দিয়ে দীপাবলি উৎসব পালনের ঝোঁক বেড়েছে। ঝোঁক সামাল দিতে প্রতি বছর বৈদ্যুতিন সামগ্রীর চাহিদাও বেড়েছে।”
রঙবেরঙের এলইডি আলোর চাহিদা বাড়ায় বিক্রি বেড়েছে মোমবাতির। কাঁথি সুপার মার্কেটের বিশিষ্ট পাইকারি বিক্রেতা চন্দন নন্দের কথায়, “গত কয়েক বছরে প্রতি বার ২৫ শতাংশ করে মোমবাতি বিক্রির হার কমেছে। এখন দীপাবলির আলোকসজ্জার জন্য কেউ মোমবাতি ব্যবহার করেন না। জন্মদিন আর পুজো পার্বনের মধ্যেই মোমবাতির ব্যবহার সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।”
প্রদীপেরও বিক্রি কমায় সংকটে মুখে কাঁথির পদ্মপুকুরিয়া, কেশুরকুন্দা, রামনগরের মহম্মদপুর কুমোরপাড়ার শিল্পীরা। আগে দুর্গাপুজোর সময় থেকেই প্রদীপ তৈরির কাজ শুরু হয়ে যেত। এখন সেই ব্যস্ততা অতীত। মহম্মদপুরের বাদল বেরা , উত্তম বেরার কথায়, “চাহিদা না থাকায় কুমোরপাড়ার কেউ আর প্রদীপ তৈরি করতেও চান না।” তাই দীপাবলির এলইডি আলোর ঝলকানির মাঝেও অন্ধকারেই থাকবে কুমোরপাড়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy