ট্রেন দাঁড় করিয়ে চলছে অবরোধ। নিজস্ব চিত্র।
নতুন ট্রেন না দিয়েই হাওড়া-বেলদার একমাত্র প্যাসেঞ্জার ট্রেনটিকে ওড়িশার জলেশ্বর পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা স্টেশনে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় অবরোধ করল ‘বেলদা-হাওড়া লোকাল বাঁচাও কমিটি’। কমিটির বক্তব্য, নতুন ট্রেন না দিয়ে কোনও মতেই যাত্রাপথ সম্প্রসারণ করা যাবে না। এ দিনের অবরোধের জেরে আটকে পড়ে নিউদিল্লি-পুরী ভায়া আদ্রা নীলাচল (নন্দনকানন) এক্সপ্রেস, বেঙ্গালুরু-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস-সহ বেশ কিছু ট্রেন। পরে রেলের আধিকারিকদের তরফে আলোচনার আশ্বাস পেয়ে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা। খড়্গপুরের ডিআরএম গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অবরোধ ওঠার পরে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।”
বেলদা-হাওড়া প্যাসেঞ্জার ট্রেনকে জলেশ্বর পর্যন্ত সম্প্রসারিত করার ঘোষণায় পর থেকেই লাগাতার বিক্ষোভ-অবরোধ করছেন নিত্যযাত্রীরা। আগে আন্দোলনে নেমেছিল ‘বেলদা ফেডারেশন অফ ট্রেডার্স অর্গানাইজেশন’ও। এ দিন অবশ্য ‘বেলদা-হাওড়া লোকাল বাঁচাও কমিটি’ নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন এই অবরোধের ডাক দেয়।
বস্তুত, টানা আন্দোলনের জেরে গত ২০১১ সালে চালু হয় প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি। বেলদা থেকে হাওড়া যাওয়ার জন্য এত দিন এই একটিই মাত্র প্যাসেঞ্জার ট্রেন ছিল। রেল বাজেটে সেই ট্রেনেরই যাত্রাপথ সম্প্রসারিত হওয়ায় ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয় এলাকাবাসীর মধ্যে। তাঁদের বক্তব্য, এর ফলে তাঁদের যাতায়াত দুঃসহনীয় হবে। কমিটির এক আহ্বায়ক মৃণালকান্তি দত্ত বলেন, “বেলদা-হাওড়া রুটে চলে যথেষ্ট লাভজনক ছিল ট্রেনটি। তা ছাড়া ট্রেনটি জলেশ্বর থেকে ছাড়ালে আমরা যাব কোথায়? নতুন ট্রেন না দিয়ে সম্প্রসারণের প্রতিবাদ করতেই অবরোধ করছি।”
সকাল ৬টা থেকে বেলদা স্টেশনের সামনে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে দাঁড়িয়ে থাকা বেলদা-হাওড়া প্যাসেঞ্জারের সামনে ডাউন লাইনে শুরু হয় অবরোধ। দাঁতনে আটকে যায় বেঙ্গালুরু-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস, ডাউন বাঘাযতীন প্যাসেঞ্জার। মেদিনীপুরে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় নিউদিল্লি-পুরী ভায়া আদ্রা নীলাচল (নন্দনকানন) এক্সপ্রেস। খড়্গপুরে এসে আটকে যায় হাওড়া-পুরী ধৌলি এক্সপ্রেস। দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। পরে ফোনে খড়্গপুরের এডিআরএম প্রবীরকুমার মণ্ডলের সঙ্গে কথা হয় সংগঠনের। সকাল সওয়া ন’টা নাগাদ অবরোধ ওঠে।
অবরোধে ছিলেন জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রাজা রায়, ট্রেডার্স অর্গানাইজেশনের সম্পাদক লক্ষ্মণ সাহু। তবে রেলের কোনও আধিকারিক এ দিন আসেননি। রাজা রায় বলেন, “একমাত্র ট্রেনকে সম্প্রসারিত করলে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়বেন। তাই আমরাও এই আন্দোলনের সমর্মথন করেছি। মঙ্গলবার রেল কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসার আশ্বাস দিয়েছেন।”
অবরোধে সামিল হন বেলদার জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যেরাও। এ দিন স্টেশন চত্বরে অন্য সংগঠনগুলির ব্যানারের সঙ্গে টাঙানো হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি-সহ তৃণমূল পরিচালিত ওই ব্যবসায়ী সমিতির ব্যানার। তাকে ঘিরেই বিতর্ক বাধে। কারণ বনধ্-অবরোধের বিরোধী বলেই দাবি করেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অবশ্য বিতর্ক উঠতেই সমিতির সদস্যেরা ব্যানার খুলে নেন।
সমিতির সভাপতি দীপক সাহার যুক্তি, “দু’দিন আগে আমরা এই লোকাল ট্রেনটি নিয়ে স্মারকলিপি জমা দিয়েছিলাম। ২১শে জুলাইয়ের আগে ব্যানার আর খোলা হয়নি।” নারায়ণগড় ব্লক তৃণমূল সভাপতি মিহির চন্দ বলেন, “কেন ওই ব্যানার ওখানে টাঙানো হয়েছিল, তা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির কাছে জানব। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেবো।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy