Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মাওবাদী সন্ত্রাসের ইতিহাসই হাতিয়ার মমতার

জঙ্গলমহলে ভোট-প্রচারের শেষ লগ্নে এসে মাওবাদী-সন্ত্রাস পর্বের অতীতকেই হতিয়ার করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার বেলপাহাড়ির এক নির্বাচনী জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “জঙ্গলমহলে নতুন করে কোনও অশান্তির বীজ রোপণ করতে দেব না। যারা বন্দুক দেখিয়ে মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে চাইবে, অশান্তির চেষ্টা করবে কিংবা ওই সব কাজে অন্তর্ঘাতে যুক্ত থাকবে, জঙ্গলমহলকে অশান্ত করার চেষ্টা করবে, তাদের রাজ্য সরকার কোনও মতেই ক্ষমা করবে না।” এ দিন দুপুরে বেলপাহাড়ির এসসি হাইস্কুল মাঠে ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী উমা সরেনের সমর্থনে নির্বাচনী সভার আয়োজন করেছিল তৃণমূল।

বেলপাহাড়ির জনসভায় বক্তব্য রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বেলপাহাড়ির জনসভায় বক্তব্য রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কিংশুক গুপ্ত
বেলপাহাড়ি শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৪ ০১:২১
Share: Save:

জঙ্গলমহলে ভোট-প্রচারের শেষ লগ্নে এসে মাওবাদী-সন্ত্রাস পর্বের অতীতকেই হতিয়ার করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার বেলপাহাড়ির এক নির্বাচনী জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “জঙ্গলমহলে নতুন করে কোনও অশান্তির বীজ রোপণ করতে দেব না। যারা বন্দুক দেখিয়ে মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে চাইবে, অশান্তির চেষ্টা করবে কিংবা ওই সব কাজে অন্তর্ঘাতে যুক্ত থাকবে, জঙ্গলমহলকে অশান্ত করার চেষ্টা করবে, তাদের রাজ্য সরকার কোনও মতেই ক্ষমা করবে না।” এ দিন দুপুরে বেলপাহাড়ির এসসি হাইস্কুল মাঠে ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী উমা সরেনের সমর্থনে নির্বাচনী সভার আয়োজন করেছিল তৃণমূল। রোদ ঠেকানোর জন্য গোটা সভাস্থল জুড়ে সামিয়ানার ব্যবস্থা ছিল। মুখ্যমন্ত্রী ও তারকাদের দেখার জন্য তাই গোটা মাঠ জুড়েই ছিল উপচে পড়া ভিড়। মহিলাদের উপস্থিতিও ছিল নজরকাড়া। এলাকাটি এক সময়ের মাওবাদী-কেন্দ্রভূমি বেলপাহাড়ি বলেই অভূতপূর্ব নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার আয়োজনও ছিল চোখে পড়ার মতো। সভাস্থলের নিরাপত্তার মূল দায়িত্বে ছিলেন আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত।

ঠিক দুপুর দু’টো নাগাদ সভাস্থলের অদূরে হেলিকপ্টারে নামেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একই কপ্টারে আসেন অভিনেতা দেব, রুদ্রনীল ও চলচ্চিত্র পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। এরপর গাড়িতে করে সভাস্থলে আসেন মুখ্যমন্ত্রী ও তারকারা। প্রথমেই রুদ্রনীল, রাজ চক্রবর্তী ও দেব বক্তৃতা করেন। রুদ্রনীল বলেন, “রাজ্যের উন্নয়নের জন্য, আমাদের ভাল থাকার জন্য উমা সরেনকে জিতিয়ে দিদির হাত শক্ত করতে হবে।” রাজের কথায়, “দিদির হাত শক্ত করে দিল্লিতে পৌঁছে আমাদের দাবি ছিনিয়ে আনতে হবে।” নাম না-করে রাহুল গাঁধী ও নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করে দেব বলেন, “আপনারা বাংলাটাই তো বলতে পারেন না। কেবল ভোটের সময় এসে খুঁত খুঁজে বেড়ান। কই বাংলার কী কী উন্নয়ন হয়েছে সেটা তো বলছেন না। ভোটের স্বার্থে রাজ্যে এসে ঝামেলা পাকিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছেন। যারা ভোট চাইতে আসছেন, তাদের আগে বাংলায় দেখা যায় নি।” জনতার উদ্দেশে দেব বলেন, “আপনারা উমাকে আশীর্বাদ করবেন।”

সভাস্থলের অদূরে কুরুমুটু ময়দানে মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার
দেখতে ভিড় জমিয়েছেন গ্রামবাসীরা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

তিন তারকার বক্তৃতার পরে দুপুর আড়াইটা নাগাদ বক্তৃতা শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। বেলপাহাড়ির ব্লক যুব তৃণমূলের সভানেত্রী অনুশ্রী করকে পাশে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সিপিএমই মাওবাদীদের নিয়ে এসে এলাকাগুলিকে পুড়িয়ে শেষ করে দিয়েছিল। অনুশ্রীর স্বামী জলদবরণ কর ও তাঁর দেওর আশিস করকে রাতের অন্ধকারে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছিল। দহিজুড়ি বাজারে বাবু বসুকে খুন করা হয়েছিল। আজও অনেকে নিখোঁজ আছেন।” তৃণমূলের সুশাসনে ‘শান্তি’ ফেরার দাবি করে মমতা এ দিন বলেন, “আগে বাম জমানায় জঙ্গলমহলে এক বছরে পাঁচশো থেকে সাতশো জন খুন হতেন। আমাদের আমলে জঙ্গলমহলে আর মৃত্যুর মিছিল দেখতে হয় না।” কিন্তু ফের পার্শ্ববর্তী রাজ্য থেকে মাওবাদীরা যে, এ রাজ্যে ঢোকার চেষ্টা করছে সে কথা এ দিন কার্যত কবুল করেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে ভোটের প্রচারের রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এখন জঙ্গলমহলে কোনও ভয় নেই। কিন্তু সিপিএম-কংগ্রেস আর বিজেপি মিলে মাঝে মাঝেই কানাকানি করে ওপার থেকে কিছু বাইরের লোকজনকে ডেকে নিয়ে এসে বলছে, একটা ল্যান্ডমাইন পুঁতে দিয়ে যাও। একটু বন্দুক দেখিয়ে দিয়ে যাও। ওই হিংসুটেরা চায় না জঙ্গলমহল শান্তিতে থাকুক। গণ্ডগোল করার চেষ্টা করলেই টেরটি পাবে। বাংলার মাটিতে আমরা এসব চলতে দেব না। আমাকে অনেক ধমক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি এসব কেয়ার করি নি। এই নিয়ে ৩৫ বার জঙ্গলমহলে এসেছি। আবার আসব।”

দু’টাকা কিলো দরে চাল, সুবর্ণরেখায় ভসরাঘাটে সেতু, কন্যাশ্রী প্রকল্পের পাশাপাশি, বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের ফিরিস্তি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যারা কুৎসা করছে তাদের ভোটের বাক্স জব্দ করে দিন। সিপিএমকে এবং ওদের বন্ধু কংগ্রেস ও বিজেপিকে একটাও ভোট দেবেন না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kingshuk gupta belpahari maoist terrorism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE