ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেওয়ার সঙ্গে মিষ্টিমুখ ও ভুরিভোজের আয়োজন তো রয়েছেই। ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার দিনে ভাই-বোনের হাতে উপহার তুলে দেওয়ার রীতিও রয়েছে। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতি বছরই বদলে গিয়েছে এই উপহারের তালিকা।
বছর খানেক আগে পর্যন্তও বোনেরা দাদা-ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে হাতে তুলে দিত জামা-প্যান্টের পিস। তারও আগে পাজামা-পাঞ্জাবি দেওয়ার প্রচলনও ছিল। আবার ভাইরাও দিদি-বোনকে দিত শাড়ি। আর এখন দিদি-বোনের জন্য সালোয়ার-কামিজের চাহিদাই বেশি। আর তমলুকের স্থানীয় বাজারে ঢঁু মেরে জানা গেল, এ বছর ভাইবোনের আদানপ্রদানের জন্য সবথেকে বেশি চাহিদা ঘড়ি আর মোবাইল ফোনের। তাই ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার কেনাকাটার জন্য জেলার কোলাঘাট, মেচেদা, পাঁশকুড়া, চণ্ডীপুর, ময়না, নন্দকুমারের মত ব্লক সদরের বাজারে ভিড় শুধু পোশাকের দোকানে নয়, ভিড় জমছে ঘড়ি আর মোবাইলের দোকানেও।
তমলুকের শঙ্করআড়া এলাকার এক পোশাক দোকানে গিয়ে দেখা গেল মহিলা ক্রেতাদের ভিড়। ওই দোকানের মালিক অনিল জানা বলেন, “এবছর টি-শার্টের চেয়ে জামার চাহিদা অনেকটাই বেশী। তবে ট্রাউজার্সের চাহিদা কম।” ওই দোকানেই ভাইদের জন্য জামা কিনতে এসেছিলেন ব্যবত্তাহাটের অঞ্জনা সামন্ত। তাঁর কথায়, “জামা-প্যান্ট দুই দিতে গেলে অনেকটাই খরচ হবে। তাই ভাইদের জন্য শুধু জামাই কিনলাম।” একই দৃশ্য দেখা গেল শহরের পাঁশকুড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি পোশাকের দোকানে। দোকানের মালিক অজয় দে-র কথায়, “আগে ভাইফোঁটায় উপহার হিসেবে পাঞ্জাবি-পাজামার চাহিদা ছিল। এ বার পুজোয় মোদী কুর্তা হিট ছিল। ভাইফোঁটাতেও সেটাই বাজার মাতাচ্ছে।”
তবে এ বার ভাইফোঁটায় মোবাইল ফোন আর ঘড়ির বিক্রিই সবচেয়ে বেশি হচ্ছে, এমনটাই দাবি শহরের এক দোকানদারের। জেলার অন্যতম ব্যস্ত বাজার দিঘা-মেচেদা সড়কের ধারে চণ্ডীপুর বাজারে সোনার গয়না, ঘড়ি ও মোবাইল ফোনের দোকান রয়েছে ব্যবসায়ী সুমন কল্যাণ বেজের। তাঁর কথায়, “দিদি-বোনেদের সোনার তৈরি হালকা ওজনের কানের দুল, আংটি, গলার হার উপহার দেওয়ার চল রয়েছে। তবে গত কয়েক বছর ধরে ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার উপহার হিসেবে হাত ঘড়ি ও মোবাইল ফোন দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।” ভাইকে মোবাইল ফোন দেওয়ার কথা জানালেন পাঁশকুড়ার বাসিন্দা গৃহবধূ দীপিকা দাসও। তিনি বলেন, “ভাই কলেজে পড়ে। এবার ভাইফোঁটায় ওকে মোবাইল ফোন দেব। এতে ক্যামেরা রয়েছে, আবার যোগাযোগ করতেও সুবিধা হবে।” কোলাঘাটে নতুন বাজারের মোবাইল ফোনের ব্যবসা রয়েছে শৈবাল দাসের। তিনি বলেন, “ফোন কিনলে ভাই-বোনের মধ্যে যোগাযোগের সুযোগ বাড়ে। আর আজকের দিনে সাধ্যের বাজেটের মধ্যে ভাল মোবাইল ফোন পাওয়া যাচ্ছে। গত বছর ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার উপহার দেওয়ার জন্য আমার দোকান থেকে চারজন ক্রেতা মোবাইল কিনেছিলেন। আর এ বার একদিনেই বিক্রি করলাম পাঁচটা।”
আবার ভাইকে উপহার দেওয়ার জন্য শুক্রবার তমলুক শহরের একটি দোকানে হাতঘড়ি কিনতে এসেছিলেন ময়নার গৃহবধূ অণিমা সামন্ত। অণিমাদেবীর কথায়, “ভাই স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। এ বার ভাইফোঁটায় ওকে হাত ঘড়ি দেব ঠিক করেছিলাম। তাই কিনতে এসেছিলাম।” মেচেদা বাজারের ঘড়ি দোকানদার রণজিত্ দে’র মতে, “পুজোয় এমনিতেই জামাকাপড় কেনা হয়। তাই এই সময় আর পোষাকের প্রতি আগ্রহ কমই থাকে। এখন অনেক কম দামে ব্র্যান্ডেড ঘড়ি পাওয়া যাচ্ছে। তাই ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার উপহার হিসেবে হাতঘড়ি দেওয়ার প্রবণতা আগের চেয়ে বাড়ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy