Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
দাউদপুর শিশুশিক্ষা কেন্দ্র

টাকা পড়ে, হয়নি শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের স্থায়ী ভবন

টাকা পড়ে অন্তত তিন বছর, অথচ শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের ভবন তৈরি হয়নি আজও। কিছু অভিভাবক এবং গ্রামবাসীর একাংশের অভিযোগ, রাজনৈতিক টানাপোড়েনে স্থায়ী ভবন তৈরির কাজ থমকে রয়েছে। এই অবস্থায় অস্থায়ী কেন্দ্রেই কোনও রকমে চলছে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির পঠনপাঠন।

এমন ভাঙাচোরা ঘরেই চলে শিশুদের ক্লাস। নিজস্ব চিত্র।

এমন ভাঙাচোরা ঘরেই চলে শিশুদের ক্লাস। নিজস্ব চিত্র।

কৌশিক মিশ্র
এগরা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৪ ০০:৩৫
Share: Save:

টাকা পড়ে অন্তত তিন বছর, অথচ শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের ভবন তৈরি হয়নি আজও। কিছু অভিভাবক এবং গ্রামবাসীর একাংশের অভিযোগ, রাজনৈতিক টানাপোড়েনে স্থায়ী ভবন তৈরির কাজ থমকে রয়েছে। এই অবস্থায় অস্থায়ী কেন্দ্রেই কোনও রকমে চলছে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির পঠনপাঠন।

পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা ২ ব্লকের উত্তর দাউদপুর গ্রামের দাউদপুর মহাদেব মন্দির শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটি ২০০০ সালে অনুমোদন পায়। শুরুর দিকে দাউদপুর মহাদেব মন্দিরের মাঠে প্রায় এক বছর চলে ক্লাস। পরে কয়েকজন উদ্যোগী গ্রামবাসী দশ ডেসিমেল জমি দান করায় সেখানেই অস্থায়ী চালা তৈরি করে পঠনপাঠন শুরু হয়। সেই শুরু প্রায় তেরো বছর পরেও ওই একই পরিকাঠামো নিয়ে চলছে ৯৫ জন পড়ুয়ার ক্লাস।

ইতিমধ্যে অবশ্য সিপিএম পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের সহযোগিতায় ১৬ হাজার টাকা ব্যয়ে ওই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের রান্নাঘর তৈরি হয়েছে। বাকিটা অবশ্য ‘নেই রাজ্য’। তৈরি হয়নি শৌচাগার, ভেঙে পড়েছে বাঁশের চটার বেড়া। কয়েক’টা খুঁটির উপরে কোনও রকমে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই কেন্দ্রটি।

কেন হয়নি স্থায়ী ভবন? স্থানীয়দের একাংশের দাবি, গ্রাম পঞ্চায়েত এবং এলাকাটিতে এখনও সিপিএমের ‘দাপট’ থাকায় তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতি কিংবা জেলা পরিষদ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। অভিযোগ, পঞ্চায়েত সমিতিও চাইছে কেন্দ্রটিকে সরিয়ে অন্য নতুন জায়গায় স্থায়ী ভবন তৈরি করতে। এতে অবশ্য স্থানীয়েরা বেঁকে বসেছেন। ফলে জট কাটেনি।

অভিভাবক তথা উত্তর দাউদপুর গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যা টগরী শিট বলেন, “দুই পার্টির টানাটানিতে ছেলেমেয়েদের ক্ষতি হচ্ছে।” তা মানছেন তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ পার্থসারথি দাসও। এই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটি যখন অনুমোদন পায়, তখন তিনি বাম-পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির মত্‌স্য কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন বলে স্থানীয়েরা জানান। তাঁর দাবি, “বর্তমান জায়গাতেই স্থায়ীভবন তৈরির ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলাম। কিন্তু, কিছু জনের বাধায় তা সম্ভব হয়নি।” যাঁরা বাধা দিচ্ছেন তাঁরা কী তৃণমূলেরই লোকজন? এর সদুত্তর অবশ্য মেলেনি।

এগরা ২-এর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রকাশ রায়চৌধুরী অবশ্য এর জন্য প্রশাসনিক গড়িমসিকেই দায়ী করেছেন। তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আরতি মুণ্ডা আবার বলেন, “বর্তমান জায়গায় আপত্তি জানিয়ে কিছু সংখ্যালঘু মানুষ আমাদের কাছে এবং জেলা পরিষদে আপত্তি জানিয়েছেন।” এই আপত্তির প্রসঙ্গে স্থানীয়দের বক্তব্য, সংখ্যালঘু প্রসঙ্গ তুলে আসলে কৌশলে শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের স্থানবদল করতে চাইছে তৃণমূল। স্থানবদল যে তাঁরা মানছেন না, তা তাঁরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।

এগরা ২ ব্লকের বিডিও মৃন্ময় মণ্ডল বলেন, “শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের সমস্যা উপরমহলে জানিয়েছি। কিন্তু, কোনও নির্দেশ না আসায় ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।” মহকুমাশাসক অসীমকুমার বিশ্বাস শিশুদের দুর্ভোগের কথা শুনে বিষ্মিত। তিনি দ্রুত উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার অশ্বাস দিয়েছেন।

এই চাপানউতোরের মধ্যেই বরাদ্দ তিন লক্ষেরও বেশি টাকা টাকা ফিরে যেতে বসেছে শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের। ওই কেন্দ্রের দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়া অয়ন শিট, শম্পা দাম তৃতীয় শ্রেণির শেখ সফিরুদ্দিনরা অবশ্য এত সব জানে না। তাঁদের কাতর আর্তি, স্থায়ী ভবন তৈরি হোক, পাকা শৌচালয় হোক এখন কাজের কাজ কতটা হয়, দেখার সেটাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE