ভেঙে পড়েছে মন্দিরের একাংশ। নিজস্ব চিত্র।
জঙ্গলের মাঝে পোড়ামাটির প্রাচীন এক মন্দির। মন্দির ভেদ করে ডালপালা ছড়িয়েছে বট-অশ্বত্থ। এমন মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে নিজস্বী নেওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি করেন পর্যটকরা। কেউ আবার ছুঁয়ে দেখেন ইতিহাসের প্রত্ন-কঙ্কাল। মন্দিরটির ভিতরে এখন আর ঢোকা যায় না। বাইরে থেকে দেখেই আশ মেটান পর্যটকরা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের জামবনি ব্লকের চিল্কিগড়ের জঙ্গলের মাঝে রয়েছে পরিত্যক্ত কয়েক শতাব্দী প্রাচীন এই বিষ্ণু মন্দিরটি। আনুমানিক পাঁচশো বছরেরও বেশি পুরনো এই মন্দিরটির জরাজীর্ণ অবস্থা। চিল্কিগড়ের কনকদুর্গা মন্দিরের পাশেই রয়েছে মন্দিরটি। কনকদুর্গা মন্দির চত্বরে বেড়াতে আসা পর্যটকরা আসেন এই বিষ্ণু মন্দিরে। কয়েক বছর আগে পর্যটন দফতরের টাকায় কনকদুর্গা মন্দির চত্বরের পরিকাঠামো উন্নয়ন ও সৌন্দর্যায়নের কাজ হয়েছিল। কিন্তু প্রাচীন বিষ্ণু মন্দিরটির ব্যাপারে আজ পর্যন্ত কিছুই ভাবা হয়নি। চিল্কিগড় রাজ পরিবারের প্রয়াত সদস্য বিজয়েশচন্দ্র ধবলদেব এক সময় জরাজীর্ণ পুরনো মন্দিরটি সংস্কারের জন্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে চিঠি দিয়েছিলেন। বিজয়েশবাবুর মৃত্যুর পরে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। বিপজ্জনক এই মন্দিরটি ভেঙে পড়লে অঘটনের আশঙ্কা রয়েছে, মানছেন স্থানীয়রাই।
‘দেবী কনকদুর্গা: ইতিহাস ও লোকবিশ্বাস’ বইটির রচয়িতা গবেষক মৃণালকান্তি শতপথী লিখেছেন, আনুমানিক ১৪৭৫ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল। মন্দিরে উত্তর ভারতীয় ও ওড়িশা শৈলির মিশ্রণ রয়েছে। পঞ্চরত্ন ও অলিন্দযুক্ত মন্দিরটির উচ্চতা ৩০ ফুট। দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ফুট বিশেক। মন্দিরটি পুব মুখো। সামনে খিলানযুক্ত প্রবেশপথ। মন্দিরের গায়ে ও চূড়োতে এক সময় অনেকগুলি মৈথুন-মূর্তিও ছিল। মন্দিরের গায়ে এমন শিল্প রীতির কারণে মন্দিরটিকে কমপক্ষে পাঁচশো বছরের বেশি পুরনো বলে মত গবেষকদের। সরু পোড়া ইট, মাকড়া পাথর, চুন-সুরকি ও পোড়া টালি দিয়ে মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল। প্রায় সাড়ে পাঁচশো বছর আগে চিল্কিগড়ের ব্রাহ্মণ রাজা বিশ্বরূপ ত্রিপাঠীর আমলে মন্দিরটি তৈরি হয়। ত্রিপাঠী রাজা ছিলেন বিষ্ণুর উপাসক। পরে মন্দিরটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। ১৭৪৯ সালে চিল্কিগড়ের সামন্তরাজা গোপীনাথ মত্তগজ সিংহ স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে ওই মন্দিরের পাশে আটচালা বানিয়ে কনকদুর্গার বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৩৭ সালে সেই আটচালার স্থানে কনকদুর্গার বর্তমান মন্দিরটি তৈরি হয়।
গবেষক মৃণালকান্তি শতপথীর আক্ষেপ, “বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের রাসমঞ্চ ও মন্দির গুলির সময়াময়িক হওয়া সত্ত্বেও চিল্কিগড়ের প্রাচীন বিষ্ণু মন্দিরটি অবহেলিত থেকে গিয়েছে।” চিল্কিগড় রাজ পরিবারের বর্তমান সদস্য তথা কনকদুর্গা মন্দির উন্নয়ন কমিটির সভাপতি বিরজেশচন্দ্র দেও ধবলদেব বলেন, “ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সবেক্ষণ কর্তৃপক্ষকে পুরনো মন্দিরটির সংস্কারের আবেদন জানিয়ে ফের চিঠি দেব।” জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সমীর ধল বলেন, “আমরা পুরনো বিষ্ণু মন্দিরটির চারপাশ কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে দেব বলে ঠিক করেছি। যাতে নিরাপদ দূরত্ব থেকে পর্যটকরা ছবি তুলতে পারেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy