Advertisement
E-Paper

মজুত গাছবোমায় বিস্ফোরণ, জখম ৮

কালীপুজোর বেশ কয়েক দিন আগে থেকে শব্দবাজিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল পুলিশ-প্রশাসন। কিন্তু সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দেদার শব্দবাজি বিক্রির অভিযোগ উঠছিলই। এ বার সেই শব্দবাজির বিস্ফোরণে ঝলসে জখম হল চার শিশু-সহ ৮ জন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৬ ০০:০০
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জখম দুই খুদে। —নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জখম দুই খুদে। —নিজস্ব চিত্র।

কালীপুজোর বেশ কয়েক দিন আগে থেকে শব্দবাজিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল পুলিশ-প্রশাসন। কিন্তু সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দেদার শব্দবাজি বিক্রির অভিযোগ উঠছিলই। এ বার সেই শব্দবাজির বিস্ফোরণে ঝলসে জখম হল চার শিশু-সহ ৮ জন। রবিবার ভোর চারটে নাগাদ ভগবানপুরের মহম্মদপুর গ্রামের এই ঘটনায় জখমদের তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একজনকে গুরুতর জখম অবস্থায় পাঠানো হয়েছে কলকাতায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মহম্মদপুর গ্রামের শিলাখালি সর্বজনীন শ্যামাপুজোয় এ বার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। প্রতি বছরের মতো এ বছরও পুজো শেষে ভোররাতে বাজি পোড়ানো হয়। তা দেখতে ভিড় জমান কয়েক হাজার গ্রামবাসী। প্রতি বছর সেই আলোর রোশনাইয়ের সঙ্গে থাকে শব্দবাজির দাপটও। অভিযোগ, এ বারও পুলিশি নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে মজুত ছিল দেদার শব্দবাজি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুজো শেষে খালের বাঁধে সারি দিয়ে একাধিক বাঁশে গাছ বোমা ফাটানো শুরু হয়। গ্রামবাসীদের ভিড়ের মাঝে একটি জায়গায় কয়েকটি কাগজের বাক্স বোঝাই করে মজুত ছিল বাজি। হঠাৎই একটি বোমার ফুলকি মজুত গাছবোমার বাক্সের উপর পড়ে। তখন বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। কাছাকাছি থাকা চার শিশু-সহ বেশ কয়েকজন ঝলসে গিয়ে গুরুতর জখম হন। স্থানীয়রাই জল দিয়ে আগুন নেভান। তমলুক জেলা হাসপাতালে বার্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আহত দুই শিশু সহদেব ও প্রশান্ত করের দিদিমা সুচিত্রাদেবী বলেন, ‘‘প্রতি বছর আমরা বাজি ফাটানো দেখতে যাই। প্রতি বছর তো বোমা ফাটানো হয়। এ বার কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল!’’

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, প্রকাশ্যে এ ভাবে শব্দবাজি ফাটানো হলেও পুলিশ-প্রশাসন ব্যবস্থা নিল না কেন? ওই কালীপূজা কমিটির সদস্য নাড়ুগোপাল দাসের কথায়, ‘‘গ্রামের এই পুজোয় দীর্ঘদিন ধরেই বাজি ফাটানোর রেওয়াজ আছে। এ বারও সেই অনুযায়ী বাজি ফাটানো হচ্ছিল। দুর্ঘটনাবশত এটা হয়েছে।’’ আর পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘পুজো মণ্ডপের কাছে বাজি ফাটানোর সময় আগুন লেগে গিয়ে কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে নিষিদ্ধ বাজি ফাটানোর জেরে এই ঘটনা হলে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

তবে দুই মেদিনীপুরেই দীপাবলির রাতে আলোর রোশনাই বাগে আনতে পারেনি শব্দাসুরকে। হলদিয়া টাউনশিপের মাখনবাবুর বাজার থেকে মেডিকো মোড় পর্যন্ত দেদার ফাটল শব্দবাজি। সুতাহাটা থেকে মহিষাদল এবং ব্রজলালচকও বাদ ছিল না। শব্দজব্দ করতে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের কথা বলা হলেও হলদিয়ায় শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগে কাউকেই গ্রেফতার করেনি পুলিশ। হলদিয়া মহকুমার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজি সামসুদ্দিন আহমেদের দাবি, ‘‘শব্দবাজির দাপট একেবারে নেই, বলা যাবে না। তবে বিগত বছরগুলির তুলনায় এ বছর পরিমাণটা অনেক কম। আসলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা আসতে একটু সময় লাগবেই।”

পুলিশি অভিযান চললেও ঘাটাল মহকুমা জুড়ে বিক্রি হয়েছে শব্দবাজি। কালীপুজোর সন্ধে থেকেই বিকট শব্দে ফেটেছে চকোলেট বোম, দোদোমা, গাছ বোমা। তবে রাতে পুলিশি টহল ও ধরপাকড় শুরু হলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। স্বস্তি পান ঘাটালবাসী। ঘাটাল শহরের কুশপাতার প্রাক্তন শিক্ষক বছর আশির দয়াময় ঘোষের হৃদ্‌রোগের সমস্যা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ রাত ন’টার পরে বৌমা বলল বারান্দায় বসুন। বাজি ফাটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তারপর প্রায় ঘন্টাখানেক বারান্দায় বসেছিলাম।’’ একই বক্তব্য ঘাটাল হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে ভর্তি রুকসানা বেগমের। তাঁর কথায়, “দু’দিনের মেয়েকে নিয়ে ভয়েই ছিলাম। তবে রাতে শব্দবাজির উৎপাত ছিল না।’’

তবে কালীপুজোর রাতে শব্দবাজির দাপট অপেক্ষাকৃত কম ছিল ঝাড়গ্রাম শহরে। পুলিশের দাবি, শব্দবাজির বিরুদ্ধে নিরন্তর অভিযান চলছে। কয়েকদিন আগে শহরে বেআইনি শব্দবাজি বিক্রি ও তৈরির অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। আটক করা হয় প্রচুর শব্দবাজি। শনিবার কালীপুজোর রাতে কয়েকটি এলাকায় শব্জবাজি ফাটলেও তার মাত্রা ছিল অনেকটাই কম।

Fire crackers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy