পাশে-আছি। অসুস্থ অরিত্রকে দেখতে সহকর্মীরা।
গুরুতর অসুস্থ হয়েছিলেন আগেও। তখন পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কলেজের বন্ধুরা। আর এবার পাশে পেয়েছেন নাট্যদলের সহকর্মীদের। তাঁরাই হলদিয়ার নাট্যকর্মী অরিত্র গিরিকে সুস্থ ভাবে ঘরে ফেরাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
হলদিয়া পুর এলাকার আজাদহিন্দ নগরের বাসিন্দা অরিত্র কিছুদিন প্রাথমিক শিক্ষকতা করলেও নাট্য কর্মী হিসাবে তাঁর পরিচিতি রয়েছে। স্থানীয় নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত তিনি। ওই নাট্যদলের ‘গুলশন’ এবং ‘আবর্ত’ নামের দু’টি নাটকে অরিত্রই ছিলেন সেরা অভিনেতা। কিন্তু বছর বত্রিশের অরিত্র বেশ কিছুদিন ধরেই অগ্ন্যাশয়ের রোগে ভুগছেন। চিকিৎসাশাস্ত্রে যার নাম ‘প্যানক্রিয়াটিক কারসিনোমা’। এ বছর কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে অরিত্রের চিকিৎসা হয়েছে। তবে গত বৃহস্পতিবার তাঁর পরিবার চিকিৎসার জন্য তাঁকে দিল্লি নিয়ে গিয়েছেন।
অরিত্রের দিল্লি যাওয়ার আগে নাট্যদলের সহকর্মীরা তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত। নাট্যদলের কর্ণধার দীপেন্দ্রনাথ দে বলেন, ‘‘অরিত্র প্রতিভাবান অভিনেতা। শুধু ভাল নাটক করা নয়, ও ভাল গান লিখতে এবং গাইতেও পারে।’’ অরিত্রকে মানসিক ভাবে চাঙ্গা এবং আর্থিক সাহায্য করতেই বৃহস্পতিবার ওই নাট্যদলের সদস্যরা হাজির ছিলেন তাঁর বাড়িতে। ওই দিন নাট্যকর্মী সিঞ্জন বন্দ্যোপাধায়, কৃষ্ণেন্দু পাত্র, বিশ্বদীপ গুহ, রবি দাস-সহ অনেকেই ছিলেন ওই দলে।
অরিত্রের বন্ধুরা জানান, ইতিমধ্যেই চিকিৎসায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। টাকার জন্য যাতে অরিত্রর চিকিৎসা বন্ধ না হয়ে যায়, সে জন্য তাঁরা পথে নেমে অর্থ সংগ্রহের কথা ভাবছেন।
অরিত্রের বাবা অসীম গিরি বলেন, ‘‘আমার ছেলে বছর দু’য়েক আগেই প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পেয়েছিল। স্কুলটি প্রায় ৮০-৯০ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় ও বারবার বদলির আবেদন করেছিল। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। অসুস্থ শরীর নিয়ে আর স্কুল করতে পারছিল না অরিত্র। তাই একসময় স্কুলও বন্ধ হয়ে যায়।’’
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের মার্চে অসুস্থতার জন্য অরিত্রর কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হয়েছিল। সেই সময় তাঁর মা আরতিদেবী একটি কিডনি ছেলেকে দিয়েছিলেন। কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপন করতে যে অর্থের দরকার ছিল, সে সময় তা-ও ছিল না ওই পরিবারের কাছে। তখন এগিয়ে এসেছিলেন অরিত্রর হলদিয়া গভর্নমেন্ট কলেজের বন্ধুরা। সকলের সহায়তায় অরিত্রর কিডনি বদল হয়েছিল। তার পরে সাংস্কৃতিক মঞ্চেও দাপিয়ে বেড়াতেন তিনি। কিন্তু অগ্ন্যাশয়ের রোগ তাঁকে কাবু করে দেয়।
তাতে অবশ্য চিন্তিত নন অরিত্র। দিল্লি রওনার হওয়ার আগে বিছানায় শয্যাশায়ী অরিত্র বলেন, ‘‘আমার নাটকের বন্ধুরা পাশে রয়েছেন। তাই অনেকটা মনের বল ফিরে পাচ্ছি। ফিরে এসে আবার নাটক করতে চাই।’’ ছেলে যে সুস্থ হয়ে ফিরবে, তা নিয়ে আশাবাদী মা-ও। আরতিদেবীর কথায়, ‘‘ওর মনের জোর অনেক। ছেলে ঘরে ফিরে আসবেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy