একতার-বার্তা: ঝাড়গ্রামে বিজয়া সম্মিলনীতে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
ভিন্ রাজ্যের সীমানা দিয়ে জঙ্গলমহলে হাতির ঢোকা বন্ধ করতে দুই জেলার বন দফতরকে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এলাকায় হাতির গতিবিধি নজরদারি ও হাতির ঢোকা ঠেকাতে একশো দিনের প্রকল্পে স্থানীয় গ্রামবাসীদের ‘হাতি খেদাও’ অভিযান সামিল করার নিদান দিলেন মমতা। ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার তিন ডিএফও-ও এ দিন ধমক খান মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী পুলিশের মাধ্যমে বনরক্ষী নিয়োগের প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে ফেলার নির্দেশ দেন রাজ্য পুলিশের ডিজিকে।
মঙ্গলবার ঝাড়গ্রাম এসপি অফিসের সভাঘরে প্রশাসনিক বৈঠকে ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হলেইচ্চিকে দাঁড় করিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, “আপনার এলাকায় রোজ হাতি ঘুরে বেড়াচ্ছে কেন?” মুখ্যমন্ত্রীর সফরের কয়েকদিন আগেই লালগড় ও ঝাড়গ্রামে দাপিয়ে বেড়িয়েছে দলমার পাল। রাজপাড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর জন্য তৈরি হেলিপ্যাডের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল কয়েকটি হাতি। ঝাড়গ্রামে এসে ঘনিষ্ঠ মহল মারফত মুখ্যমন্ত্রী হাতি নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভের আঁচ টের পান।
আরও পড়ুন:জয় এড়িয়ে উন্নয়ন-কথা অমিতের
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের জবাবে ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ বলেন, “ম্যাডাম আমার এলাকায় এখন কোনও হাতি নেই।” মমতা পাল্টা প্রশ্ন করেন, “হাতি নেই মানে! কয়েকদিন আগেই তো ঝাড়গ্রামে হাতি এসেছিল। বাসবরাজ বলার চেষ্টা করেন হাতি লালগড়ের দিকে ছিল। ততক্ষণে উঠে দাঁড়িয়েছেন, মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা ও খড়্গপুরের ডিএফও অরূপ মুখোপাধ্যায়। মেদিনীপুরে ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা জানান, লালগড়ের সিংহভাগ হাতি অন্যত্র চলে গিয়েছে। সে কথা শুনে মুখ্যমন্ত্রী বলে ওঠেন, “মানুষের মৃত্যু হলে ধান-টান খেয়ে নিলে আপনাদের গায়ে লাগে না! সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে, আর আপনাদের সাতখুন মাফ!’’ সরাসরি তিনি প্রশ্ন করেন হাতি তাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারি পরিকল্পনাগুলি অনুসরণ করা হচ্ছে না কেন?
ভিন্ রাজ্য থেকে হাতি ঢোকা রুখতে পরিখা কাটার পরিকল্পনার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। জঙ্গলমহলের তিন ডিএফও-কে সতর্ক করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বৈঠক শেষে তিন দিন কাজ করলেন, তারপর ঘুমিয়ে পড়লেন— এমনটা যেন না হয়।’’ মমতা জানিয়ে দেন জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে এলাকায় হাতির ঢোকা ঠেকাতে বন দফতরকে পদক্ষেপ করতে হবে। সে কাজে লাগাতে হবে স্থানীয় ‘ছেলেপিলে’দের। কারণ তাঁরা এলাকার জঙ্গলপথ জানে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, এমনতিতেই বনরক্ষীর সংখ্যা কম। সে জন্য স্থানীয় যুবকদের একশো দিনের কাজ দিয়ে হাতি তাড়ানোর কাজ করতে হবে প্রশাসনকে। এ বিষয়ে বিশেষ ভাবে তিনি সতর্ক করেন ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসকদের।
সেই সঙ্গে, পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের মাধ্যমে বন রক্ষী নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে ডিজি সুরজিৎ পুরকায়স্থের কাছে জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী।
ডিজি জানান, সে কাজ চলছে। মুখ্যমন্ত্রী তার উত্তরে বলেন, ‘‘হচ্ছে, হবে—জানি। কবে কাজ শেষ হবে সেটা জানতে চাইছি। এক মাসের মধ্যে বনরক্ষী নিয়োগ করতে হবে।’’
মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের নির্দেশে অস্বস্তি শুরু হয়েছে বন দফতরের অন্দরে। অবসরপ্রাপ্ত এক বনকর্তা বলেন, “হাতি তো গরু-ছাগল নয়, যে আটকানো যাবে!’’ ঝাড়খণ্ডে উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে হাতির পাল পশ্চিমবঙ্গে এসে ঢুকছে গত কয়েকবছর ধরে। গত জুনে ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে হাতি খেদাতে ব্যর্থ বন কর্তাদের ধমক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। হাতির দলকে খেদিয়ে ঝাড়খণ্ডে পাঠিয়ে তাদের ফের আসার বহু চেষ্টা করেছিল বন দফতর। কিন্তু সেটা করা যায়নি। উল্টে হাতিরা গত এক বছরে ক্ষয়ক্ষতির বহর বাড়িয়েছে। তাই প্রশাসনের কর্তারা অস্বস্তিতে পড়লেও, মুখ্যমন্ত্রী কড়া বার্তাকে স্বাগত জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy