প্রতীকী ছবি।
শব্দ দৌরাত্ম্য রুখতে বিশ্বকর্মা পুজোর সময় তৎপর হয়েছিল পুলিশ-প্রশাসন। কাঁথি, তমলুক, হলদিয়া-সহ পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় মণ্ডপে মাইক তাণ্ডবে রাশ টানাও গিয়েছিল। এ বার দুর্গা পুজোর মণ্ডপে শব্দ-দূষণ রুখতে উদ্যোক্তাদের আগাম সতর্ক করছে পুলিশ-প্রশাসন। জেলার প্রতি ব্লকে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে পুজো কমিটির প্রতিনিধিদের বৈঠকে ডেকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, মাইক বাজানোর ক্ষেত্রে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দিষ্ট করে দেওয়া শব্দসীমা ভাঙা যাবে না, ফাটানো যাবে না নিষিদ্ধ শব্দবাজি। নিয়ম ভাঙলে কড়া পদক্ষেপের হুঁশায়ারিও দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু নিয়ম মেনে পুজো মণ্ডপে মাইক বাজছে কিনা, তা মাপা হবে কী ভাবে? জানা যাচ্ছে, খামতি সেখানেই। কারণ, এ ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত যন্ত্র বা পরিকাঠামো, কোনওটাই নেই।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজোর মণ্ডপ-সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাইকের শব্দসীমা পরিমাপের জন্য জেলার বেশ কয়েকটি থানাকে নির্দিষ্ট যন্ত্র দেওয়া হয়েছিল কয়েকবছর আগে। ওই যন্ত্র ব্যবহার করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশ-কর্মীরা দেখতে পারেন, মাইকের চোঙ বা সাউন্ড-বক্স নির্দিষ্ট মাত্রার থেকে জোরে বাজছে কিনা। সেই মতো ব্যবস্থাও নেওয়া যায়। কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুরের অনেক থানার আধিকারিকরাই জানাচ্ছেন, তাঁদের কাছে শব্দমাত্রা পরিমাপের যন্ত্র নেই। ফলে, দুর্গোৎসবে কী ভাবে শব্দ দৌরাত্ম্যে রাশ টানা যাবে, প্রশ্ন থাকছেই।
শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে সচেতনতার কাজে যুক্ত নন্দকুমারের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তা মানবেন্দু রায় জানাচ্ছেন, বিশ্বকর্মা পুজোর আগেই জেলার পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকের কাছে মণ্ডপে জোরে মাইক, সাউন্ডবক্স বাজানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছিল। কাঁথি, হলদিয়া ও তমলুক শহরের কিছু জায়গায় পুলিশ পদেক্ষেপ করায় শব্দদূষণের মাত্রাও কম ছিল। কিন্তু জেলার অধিকাংশ গ্রামীণ এলাকায় পুলিশি নজরদারির অভাবে বহু মণ্ডপেই তারস্বরে মাইক ও সাউন্ড-বক্স বেজেছিল বলেই মানবেন্দুর অভিযোগ। তাঁর মতে, ‘‘দুর্গাপুজোর কর্তাদের নিয়ে পুলিশ-বৈঠকে আগাম সতর্কতার পাশাপাশি মণ্ডপগুলিতে শব্দমাত্রা পরিমাপের জন্য পরিদর্শন করলে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে।’’
শারদোৎসবে শব্দ তাণ্ডব রুখতে তৎপর রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও। পর্ষদের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, পুজোর চারদিনই পর্ষদের নজরদারি দল কলকাতা-সহ সংলগ্ন জেলাগুলির বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরবে। পুলিশ-প্রশাসনের মাধ্যমে পুজো কমিটিগুলিকেও এ বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। জেলার বেশিরভাগ দুর্গাপুজো উদ্যোক্তারই দাবি, শব্দসীমা মানার ক্ষেত্রে তাঁরা সচেতন। যেমন কোলাঘাট শহরের নতুন বাজারে এক দুর্গাপুজোর উদ্যোক্তা অসীম দাস বলেন, ‘‘মণ্ডপ চত্বরে মাইক ও সাউন্ড-বক্স বাজানোর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মাত্রা বজায় রাখার জন্য আমাদের সংস্থার তরফে প্রচার চালানো হয়।’’
তবে তার বাইরেও মাইকের দাপট যে কান ঝালপালা করে, তা মানছেন জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। কিন্তু শব্দ পরিমাপক যন্ত্র না থাকলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে কী ভাবে?
পুলিশকর্তারা এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তবে জেলা পুলিশের এক কর্তার ব্যাখ্যা, এখন স্মার্টফোনে শব্দসীমা পরিমাপের অ্যাপ থাকে। কিন্তু মামলা হলে তা কি গ্রহণযোগ্য, সেই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy