Advertisement
১১ মে ২০২৪

ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চায় অমিত

বাবা বয়সের ভারে অসুস্থ। মা জঙ্গলে শালপাতা কুড়িয়ে বিক্রি করেন। অভাবের সংসারে ভাগের জমিতে লাঙল চালিয়েও উচ্চ মাধ্যমিকে ৭৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছে ঝাড়গ্রামের গজাশিমুল কেসিএম বিদ্যালয়ের অমিত মাহাতো। তার মোট প্রাপ্ত নম্বর ৩৯১। ঝাড়গ্রামের জঙ্গলঘেরা মোহনপুর গ্রামে অমিতের বাড়ি। মাটির কুঁড়ে ঘরে বিদ্যুত্‌ নেই। সারা দিন হাড়ভাঙা খাটুনির পরে রাতে কেরোসিন লম্ফের আলোয় নিয়ম করে পাঁচ-ছ’ঘণ্টা পড়েছে সে।

অমিত মাহাতো। — নিজস্ব চিত্র।

অমিত মাহাতো। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৫ ০০:২৩
Share: Save:

বাবা বয়সের ভারে অসুস্থ। মা জঙ্গলে শালপাতা কুড়িয়ে বিক্রি করেন। অভাবের সংসারে ভাগের জমিতে লাঙল চালিয়েও উচ্চ মাধ্যমিকে ৭৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছে ঝাড়গ্রামের গজাশিমুল কেসিএম বিদ্যালয়ের অমিত মাহাতো। তার মোট প্রাপ্ত নম্বর ৩৯১। ঝাড়গ্রামের জঙ্গলঘেরা মোহনপুর গ্রামে অমিতের বাড়ি। মাটির কুঁড়ে ঘরে বিদ্যুত্‌ নেই। সারা দিন হাড়ভাঙা খাটুনির পরে রাতে কেরোসিন লম্ফের আলোয় নিয়ম করে পাঁচ-ছ’ঘণ্টা পড়েছে সে। তার কোনও গৃহশিক্ষকও ছিল না। ২০১৩ সালে স্থানীয় দেবী হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিকেও ভাল ফল করেছিল অমিত। তারপর গজাশিমুল কেসিএম বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় সে। অমিতের কথায়, ‘‘তার বাবা কনক মাহাতো অসুস্থতার জন্য কাজ করতে পরেন না। মা তড়িত্‌প্রভা মাহাতো জঙ্গল থেকে শালপাতা সংগ্রহ করে বিক্রি করেন। ছোট ভাই সুমিত এ বছর মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছে।’’

এই পরিস্থিতিতে সংসারের প্রয়োজনে নিয়মিত জমিতে চাষের কাজ করতে হয় অমিতকে। এ ছাড়া একশো দিনের প্রকল্পে মাটি কাটার কাজও করে সে। অমিত বলে চলে, ‘‘একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার জন্য বই কেনার সামর্থ্যও ছিল না। স্থানীয় মোহনপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিত্‌সক সঞ্জয় মাল ও স্থানীয় বন কর্মী মলয় মাহাতো কয়েকটি বই কিনে দিয়েছিলেন। বাকি বই স্কুল থেকে পেয়েছিলাম। ভাল ফলের জন্য তাঁদের সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’’ ভূগোল অনার্স নিয়ে ভাল কোনও কলেজে ভর্তি হতে চায় অমিত। ফুটবল-পাগল অমিত মোহনবাগানের কট্টর সমর্থক। ভবিষ্যতে শিক্ষক দেখার স্বপ্ন দেখে সে। তড়িত্‌প্রভাদেবীর কথায়, “ছেলেটা অনেক কষ্ট করে ভাল ফল করেছে। ও আমাদের আশার আলো।”বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিনু বেরা বলেন, “অমিতের ইচ্ছে ও অধ্যাবসায়ের কাছে দারিদ্র কোনও বাধা হয়ে দাঁড়ায় নি। ভাল ফল করার পুরো কৃতিত্বটা আমি অমিতকেই দিতে চাই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jhargram school teacher college football
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE