Advertisement
E-Paper

কানাডায় নতুন ঘর পেল অনাথ জয়দীপ

এ দিন বিকেলে আশ্রমে এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে কানাডার ওই দম্পতির হাতে জয়দীপকে আনুষ্ঠানিক ভাবে তুলে দেন ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির (সিডব্লিউসি) চেয়ারপার্সন মানসী দাস রায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৩ ০৯:৩২
কোলে দত্তক নেওয়া জয়দীপকে নিয়ে ধামসার তাকে নাচছেন কানাডার দম্পতি। সঙ্গে তাঁদের চার বছরের ছেলে এমিল। নিজস্ব চিত্র

কোলে দত্তক নেওয়া জয়দীপকে নিয়ে ধামসার তাকে নাচছেন কানাডার দম্পতি। সঙ্গে তাঁদের চার বছরের ছেলে এমিল। নিজস্ব চিত্র

ধামসার তালে ছোট্ট জয়দীপকে কোলে নিয়ে নাচের তালে পা মেলাচ্ছিলেন ক্রিস্টোফার ফিলিপ লালোর ও তাঁর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা জোয়ানা রেগো। সঙ্গে তাঁদের আত্মজ চার বছরের এমিল। নতুন ভাইকে পেয়ে আপ্লুত সে-ও। সোমবার বিকেলে ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়া নিবেদিতা গ্রামীণ কর্মমন্দির চত্বরে জয়দীপের বিদায় পর্বে আনন্দ-উচ্ছ্বাস-আবেগ আর চোখের জল মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল। নিবেদিতা গ্রামীণ কর্মমন্দিরের সরকারি দত্তক হোমের আবাসিক দু’বছর চার মাস বয়সী জয়দীপ পেল নতুন ঘর। তবে দেশে নয়, সুদূর কানাডার টরন্টোতে। আর সে অনাথ নয়।

এ দিন বিকেলে আশ্রমে এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে কানাডার ওই দম্পতির হাতে জয়দীপকে আনুষ্ঠানিক ভাবে তুলে দেন ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির (সিডব্লিউসি) চেয়ারপার্সন মানসী দাস রায়। দত্তক হোমের কো-অর্ডিনেটর সুকুমার দোলই জানালেন, ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে গোপীবল্লভপুরে রাস্তার ধারের ঝোপ থেকে অসুস্থ শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছিল পুলিশ। সঙ্কটজনক শিশুটি তৎকালীন ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর সুস্থ হয়। মৃত্যুকে জয় করার জন্য হাসপাতালের নার্সরা শিশুটির নাম দিয়েছিলেন জয়। সিডব্লিউসি-র নির্দেশক্রমে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে জয়ের ঠাঁই হয় মানিকপাড়ার সরকারি দত্তক হোমে। হোম কর্তৃপক্ষ জয়ের সঙ্গে দীপ জুড়ে নামকরণ করেন জয়দীপ।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স অথরিটি-র (কারা) মাধ্যমে অনলাইনে জয়দীপকে দত্তক নেওয়ার জন্য টরন্টোর ওই দম্পতি আবেদন করেছিলেন। ওই দম্পতির চার বছরের ছেলে রয়েছে। নাম এমিল। তাহলে ভারতীয় অনাথ শিশু দত্তক নিচ্ছেন কেন? টরন্টোর একটি সংস্থার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ক্রিস্টোফার জানালেন, তাঁর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা ভারতীয় বংশোদ্ভুত। প্রিয়াঙ্কা পেশায় টরোন্টোর একটি সংস্থার বরিষ্ঠ অর্থনৈতিক বিশ্লেষক। প্রিয়াঙ্কার আদিনিবাস মেঙ্গালুরু। তবে প্রিয়াঙ্কার জন্ম দুবাইতে। পড়াশোনা ও কর্মস্থল টরোন্টোয়। টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময়ই ক্রিস্টোফারের সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার আলাপ হয়। প্রেম থেকে পরিণয় গড়াতে সময় নেয়নি। ভারতে প্রিয়াঙ্কার আত্মীয়স্বজন আছেন। তাই মাঝে মধ্যে গোয়ায় যান বাবা-মায়ের কাছে। তবে ভারতীয় কোনও ভাষাই জানেন না প্রিয়াঙ্কা। তাঁর কথায়, ‘‘নিজে জন্মসূত্রে ভারতীয়। তাই গোড়া থেকেই ভারতীয় সন্তান দত্তক নেওয়ার ইচ্ছে ছিল। তার মধ্যে এমিল চলে এল। ও একটু বড় হতেই ওয়েবসাইট মারফত খোঁজ শুরু করি। শেষ পর্যন্ত জয়দীপকেই পছন্দ হয়।’’ ক্রিস্টোফার ও প্রিয়াঙ্কা জানালেন, তাঁদের ছোট ছেলের পরিচয় হবে ‘জয়দীপ রেগো লালোর’।

নিবেদিতা গ্রামীণ কর্মমন্দিরের সম্পাদক দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ওই দম্পতির আবেদন খতিয়ে দেখার পরে কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের অধীনস্থ সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স অথরিটি প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র দিয়েছে। অথরাইজড ফরেন অ্যাডপশন এজেন্সির মাধ্যমে গত এক বছর ভার্চুয়ালি জয়দীপের সঙ্গে আলাপচারিতা চালিয়ে যান ওই দম্পতি। জয়দীপও নতুন বাবা মা ও দাদাকে চিনতে শেখে। রবিবারই মানিকপাড়ায় আসেন ক্রিস্টোফার ও প্রিয়াঙ্কা। সঙ্গে এমিলকেও নিয়ে এসেছিলেন তাঁরা। জয়দীপকে নিয়ে সারাটা দিন কেটে যায় তাঁদের। সোমবার ছিল আনুষ্ঠানিক হস্তান্তরের দিন। এদিন সকাল থেকেই হোম চত্বরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে আবাসিকরা। ধামসার তালে নেচে ওঠে সকলে। আদিবাসী নাচের তালে যোগ দেয় ক্রিস্টোফার পরিবার।

হোম সূত্রে জানা গেল, সরকারি নিয়ম মেনে জয়দীপের পাসপোর্ট তৈরি হতে কয়েকটা দিন সময় লাগবে। ততদিন জয়দীপকে নিয়ে কলকাতার হোটেলে থাকবেন ক্রিস্টোফার ও প্রিয়াঙ্কা। এদিন শেষ বিকেলে জয়দীপের বিদায় বেলায় হোমের কর্মী কাজল নায়েক, হোমের সমাজকর্মী বর্ণালী বেজের চোখে জল। তাঁরা বলছেন, ‘‘শিশুরা আসে। পালক বাবা-মায়ের কাছে চলে যায়। আর তো কোনও দিন দেখা হবে না। তাই আনন্দের দিনেও চোখের জল বাঁধ মানছে না!’’ দেবাশিস জানান, সেন্ট্রাল অ্যাডপসন রিসোর্স অথরিটির তত্ত্বাবধানে অথরাইজড ফরেন অ্যাডপসন এজেন্সি-র মাধ্যমে নতুন বাবা-মায়ের কাছে জয়দীপ কেমন রয়েছে, তা পর্যবেক্ষণ করা হবে।

Child Adoption Jhargram
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy