গামছা থেকে মিলেছে এমনই সব জিনিস। নিজস্ব চিত্র।
নিছকই মজা, নাকি কোনও সংকেত!
গিধনি স্টেশনে উদ্ধার হওয়া ব্যাগটিকে ঘিরে এমনই প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে গোয়েন্দারা। পরিত্যক্ত ওই ব্যাগে থাকা সাদা রঙের সবুজ ডুরে গামছাটি ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের।
পুলিশের উদ্বেগের অবশ্য কারণ রয়েছে। ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সীমানাবর্তী পশ্চিম মেদিনীপুরের জামবনি থানার অন্তর্গত এই এলাকাটি এক সময় মাওবাদীদের ঘাঁটি ছিল। ২০০৮-২০১১ পর্বে অবশ্য গোটা জামবনি থানা এলাকা জুড়ে বহু হামলা-নাশকতার ঘটনা ঘটিয়েছে মাওবাদীরা। ওই সময় এমন ডুরে গামছায় মুখ ঢেকে জঙ্গলমহলে ঘুরে বেড়াতেন মাওবাদীদের লোকজন। মাওবাদী শীর্ষনেতা প্রয়াত কিষেনজিও গামছায় মুখ ঢেকে সংবাদমাধ্যমের সামনে হাজির হতেন। পুলিশের দাবি, এক এক রঙের গামছার ব্যবহার করে নির্দিষ্ট সাংগঠনিক বার্তা পৌঁছে দেওয়া হত গোপন ডেরায়। ফলে, গামছার বিষয়টিকে মোটেই হাল্কা ভাবে দেখতে রাজি নয় পুলিশ। কারণ, পুলিশের উদ্যোগে এসওজি বিভাগ জঙ্গলমহলের বিভিন্ন সন্দেহ ভাজন ফোন নম্বরে আড়ি পাতে। ফোন ট্যাপের সূত্র ধরে বেশ কয়েকজন মাওবাদীরা আগে ধরাও পড়েছিল। পুলিশের অনুমান, এখন মাওবাদীদের লোকজন ফোনের পরিবর্তে সংকেতের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে।
ঘটনা হল, সোমবার স্বাধীনতা দিবসের সকালে গিধনি স্টেশনের তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেড সংযোগকারী পিলারের উপরের খাঁজের আড়ালে ছিল নীল রঙের সাধারণ ব্যাগটি। ব্যাগটিকে ঘিরে বোমাতঙ্ক ছড়ায়। খবর পেয়ে রেল পুলিশ কর্মীদের পাশাপাশি, জামবনি থানার পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়ার, সিআরপিএফ জওয়ানরা গোটা প্ল্যাটফর্ম চত্বর ঘিরে ফেলেন। আসে পুলিশের কুকুর। তন্নতন্ন করে স্টেশন চত্বরে তল্লাশি চালানো হয়। তবে এ জন্য দক্ষিণ পূর্ব রেলের ওই শাখায় (খড়্গপুর-টাটানগর) রেল চলাচলে কোনও ব্যাঘাত ঘটেনি। মেদিনীপুর থেকে পুলিশের বম্ব স্কোয়াড এসে ব্যাগটি উদ্ধার করে। দেখা যায়, ব্যাগটির গায়ে একটি বাংলা বেসরকারি বিনোদন চ্যানেলের নাম প্রিন্ট করা ছিল।
দক্ষিণ পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ জানান, বম্ব স্কোয়াড ব্যাগ খুলে একটি ভাঙা মোবাইল ফোন, ফোনের চার্জার, গামছা, তেলের শিশি, দু’টি সাবানের টুকরো উদ্ধার করেছে। তিনি বলেন, “ব্যাগটিকে কে কীভাবে খাঁজের আড়ালে রাখল, সে ব্যাপারে রেল পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।”
পুলিশের একাংশের বক্তব্য, এ ধরনের ব্যাগ রেখে যাওয়ার ঘটনাটি মাওবাদীদের ‘ডামি রান’ হতে পারে। পুলিশ কতটা সতর্ক সেটা বোঝার চেষ্টার জন্য কেউ ব্যাগটি রেখে থাকবে। কিন্তু, স্টেশনে নজর এড়িয়ে কীভাবে কেউ পিলারের এত উপরে শেডের খাঁজে ব্যাগটি রাখলেন, প্রশ্ন উঠেছে। এক পুলিশ কর্তার বক্তব্য, “বিষয়টিকে আমরা গুরুত্ব দিয়েই তদন্ত করে দেখছি।” পুলিশ সূত্রের খবর, মোবাইল হ্যান্ডসেটটির আইএমইআই নম্বরটির সূত্র ধরে ব্যাগের মালিকের পরিচয় জানার চেষ্টা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy