ভাঙা হচ্ছে গেটের তালা। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদে সম্প্রতি রদবদল হয়েছে। বিধায়ক মৃগেন মাইতির বদলে চেয়ারম্যান হয়েছেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা। জেলাশাসকের নির্দেশেই সোমবার হাসপাতালে আচমকা পরিদর্শনে এসেছিলেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। আর তখনই দেখা গেল, হাসপাতালের একাধিক বিকল্প গেটের তালা বহু দিন খোলা হয়নি। তার চাবি কার কাছে রয়েছে, তা-ও জানা নেই।
এই ছবিই পরিষ্কার করে দিচ্ছে দুই মেদিনীপুরের একমাত্র মেডিক্যাল কলেজ-হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের মতো কোনও বিপদ হলে বিকল্প গেট দিয়ে বেরোনো মুশকিল। পরিদর্শনে আসা জেলা প্রশাসনের এক কর্তাকে এ দিন বলতেও শোনা যায়, ‘‘গেটের চাবিই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতাল কী ভাবে চলছে বেশ বোঝা যাচ্ছে!’’
সোমবার দুপুর সওয়া বারোটা নাগাদ হাসপাতালের নতুন ভবনে আসে জেলা প্রশাসনের পরিদর্শক দল। ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক সুশান্ত চক্রবর্তী, মহকুমাশাসক (সদর) দীননারায়ণ ঘোষ প্রমুখ। ছিলেন দমকলের কর্তারাও। চারতলা নতুন ভবনে সব মিলিয়ে ছ’টি ওয়ার্ড রয়েছে। একতলায় বহির্বিভাগ, প্যাথলোজি সেন্টার, দোতলায় ব্লাড ব্যাঙ্ক, দু’টি মেডিসিন ওয়ার্ড, তিনতলায় আরও দু’টি মেডিসিন ওয়ার্ড আর চারতলায় ইএনটি এবং আই ওয়ার্ড। প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫০-৬০ জন রোগী থাকেন। তা চাড়া, বহির্বিভাগে রোজ প্রচুর মানুষ আসেন। এমন ভবনে আগুন লাগলে কী হবে, এ দিন শুরুতে তাই দেখতে শুরু করে পরিদর্শক দল। সঙ্গে ছিলেন মেডিক্যালের অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিৎ সাহা, হাসপাতাল সুপার তন্ময় পাঁজা প্রমুখ। নতুন ভবনে ঢোকার দু’টি প্রধান গেট রয়েছে। একটি পূর্ব দিকে, আর একটি পশ্চিম দিকে। পশ্চিমের গেটটি নিয়মিত ব্যবহার হয়। কিন্তু পূর্ব দিকের গেটটি রোজ ব্যবহার না হওয়ায় তালায় জং ধরেছে। তা দেখে চাবি কোথায় জানতে চান মহকুমাশাসক (সদর) দীননারায়ণবাবু। বিড়ম্বনায় পড়ে মেডিক্যালের অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিৎবাবুকে বলতে শোনা যায়, ‘‘চাবি তো এখানেই থাকার কথা!’’ হাসপাতাল সুপার তন্ময়বাবুও বলেন, ‘‘এখানেই কারও কাছে রয়েছে।’’ শেষমেশ অবশ্য চাবির খোঁজ পাওয়া যায়নি। তালা ভেঙে গেট খোলা হয়! পরে হাসপাতাল সুপার তন্ময়বাবু বলেন, “নতুন ভবনের একটি গেটের চাবি নিয়ে একটা সমস্যা হয়েছিল! পরে তা মিটে গিয়েছে!”
এ দিন নতুন ভবনের দোতলা, তিনতলা, চারতলায় গিয়ে একের পর এক ওয়ার্ড পরিদর্শন করে প্রশাসনের কর্তারা। ব্লাড ব্যাঙ্ক-সহ একাধিক বিভাগও ঘুরে দেখে। প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই দু’টি করে গেট রয়েছে। একটি ব্যবহার হয়, অন্যটি হয় না। এ দিন দেখা যায়, নিয়মিত ব্যবহার না হওয়া সব গেটের তালাতেই মরছে ধরেছে। পরিদর্শক দলের নজরে এসেছে আরও কিছু অনিয়ম। যেমন, হাসপাতালের নানা জায়গায় পড়ে ছিল দাহ্যবস্তু। নতুন ভবনের বেসমেন্টেও পড়ে নোংরা-আবর্জনা। এই সব দাহ্যবস্তুতে যে কোনও সময় আগুন লাগতে পারে। হাসপাতালের কিছু এলাকায় বিদ্যুতের তার খোলা পড়ে থাকতেও দেখা যায়। আর বেশ কয়েকটি ফায়ার এক্সটিংগুইশার সিলিন্ডার মজুত বেহাল হয়ে পড়ে। বড় অঘটন ঘটলে কী ভাবে তার মোকাবিলা করা হবে, এ দিন তার মহড়াও হয়। আসে
দমকলের ইঞ্জিন।
হাসপাতাল ছাড়ার আগে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়ে যান, “বেশ কিছু ফাঁকফোকর রয়েছে। মেদিনীপুর মেডিক্যালের মতো বড় হাসপাতালে এগুলো থাকা উচিত নয়।’’ হাসপাতালের এক কর্তাও মানছেন, “কিছু ত্রুটি- বিচ্যুতি রয়েছে। হাসপাতালের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নতুন করে খতিয়ে দেখা হবে। কোথায় কী রয়েছে, কী প্রয়োজন, সবই
দেখা হবে!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy