Advertisement
E-Paper

কর্মী-সঙ্কটে ঝাঁপ বন্ধ গ্রন্থাগারের

সার সার আলমারিতে বই রয়েছে। রয়েছে পাঠকদের চেয়ার-টেবিল। নেই শুধু কর্মী। আর কর্মী-সঙ্কটেই বন্ধ হয়ে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ১৭টি গ্রন্থাগার। যেগুলি চালু রয়েছে, তার বেশিরভাগও খোলা হয় সপ্তাহে দু’দিন। বারবার আবেদন জানানোর পরেও গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগের কোনও উদ্যোগ নজরে আসছে না।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৬ ০১:০৩
কর্মী সঙ্কটে মাঝেমধ্যেই বন্ধ থাকে মেদিনীপুরের অরবিন্দ স্টেডিয়ামের সামনের গ্রন্থাগার। — নিজস্ব চিত্র।

কর্মী সঙ্কটে মাঝেমধ্যেই বন্ধ থাকে মেদিনীপুরের অরবিন্দ স্টেডিয়ামের সামনের গ্রন্থাগার। — নিজস্ব চিত্র।

সার সার আলমারিতে বই রয়েছে। রয়েছে পাঠকদের চেয়ার-টেবিল। নেই শুধু কর্মী। আর কর্মী-সঙ্কটেই বন্ধ হয়ে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ১৭টি গ্রন্থাগার। যেগুলি চালু রয়েছে, তার বেশিরভাগও খোলা হয় সপ্তাহে দু’দিন। বারবার আবেদন জানানোর পরেও গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগের কোনও উদ্যোগ নজরে আসছে না। এমনকী চতুর্থ শ্রেণির কর্মীও নিয়োগ হচ্ছে না। ফলে চলতি বছরে আরও বেশ কয়েকটি গ্রন্থাগারে তালা পড়ার আশঙ্কা।

২০০৬ সালের পর থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা গ্রন্থাগার বিভাগে একজন কর্মীও নিয়োগ করতে পারেনি। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৬ সালে কয়েকজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের তোড়জোর হয়েছিল। সেই সময় দফতরের এক অস্থায়ী কর্মীর বয়স ৩৭ বছর হয়ে যাওয়ায় তাঁকে ইন্টারভিউতে ডাকা যায়নি, স্থায়ী চাকরিও দেওয়া যায়নি। তিনি আদালতে যান। আদালত নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ দেয়। তখন থেকেই নিয়োগ বন্ধ। জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক ইন্দ্রজিৎ পান অবশ্য জানালেন, ২০১৩ সালে ওই মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তারপরেও কেন শূন্যপদে নিয়োগ হচ্ছে না? জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিকের জবাব, “চতুর্থ শ্রেণির কর্মী থাকলেও গ্রন্থাগার খোলা রাখা যায়। গ্রন্থাগারিক নিয়োগে সরকার নিশ্চয় পদক্ষেপ করবে।”

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৬ সালে স্থগিত হয়ে যাওয়া নিয়োগ প্রক্রিয়া ফের চালু করতে পুনরায় অর্থ দফতরের অনুমোদন প্রয়োজন। আদালতে মামলা প্রত্যাহারের নথি-সহ নতুন করে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল অর্থমন্ত্রকে। কিন্তু বারবার চিঠি দিয়েও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ।

পরিসংখ্যান বলছে, জেলায় গ্রন্থাগার কর্মীর ২২৫টি পদই এই মুহূর্তে শূন্য। এই পরিস্থিতিতে একজনের অবসর মানে নতুন করে আরও দু’টি গ্রন্থাগারের ঝাঁপ বন্ধ হওয়া। অথচ জেলা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই গ্রন্থাগারগুলিতে গল্প, উপন্যাস, ইতিহাস, বিজ্ঞান থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের পাঠ্যবই, সবই রয়েছে। পাঠ্যপুস্তক কিনতে অপারগ ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে এই উদ্যোগ। তাছাড়া, আম পাঠকের জন্য একাধিক সংবাদপত্রও রাখা হয়। কিন্তু গ্রন্থাগার বন্ধ থাকলে সে সব থেকে আর লাভ কী?

যেমন, কেশিয়াড়ি ব্লকের জ্যোতিকৃষ্ণপুর, বাঘাস্তি, খাজরা গ্রামীণ গ্রন্থাগার বন্ধ। গগনেশ্বর উদয়ন ক্লাব ও পাঠাগার সপ্তাহে দু’দিন খোলা হয়। গ্রন্থাগারিক দিবাকর মণ্ডল বলেন, ‘‘আমি কেশিয়াড়ি শহিদ স্মৃতি পাঠাগারের দায়িত্বে। তাই সপ্তাহে দু’দিন ওখানে যায়। যে দু’দিন ওখানে যায় সে দু’দিন এই পাঠাগার খোলে পিওন।’’ বন্ধ রয়েছে ঝাড়গ্রামের বহড়াদাড়ি বাণী বিদ্যাপীঠ, চর্চিতা নবারুণ পাঠাগার, লালডাঙা ফণীন্দ্র স্মৃতি সঙ্ঘ, হরপড়িয়া গ্রামীণ গ্রন্থাগার, সবং ব্লকের মোহাড়ের সৃজনী পাঠাগার, দাঁতনের অগ্নিবীণা পল্লি উন্নয়ন পাঠাগার, নহপাড় পল্লি উন্নয়ন পাঠাগারগুলি।

যেগুলি চালু রয়েছে সেখানেও কর্মী সঙ্কটে ভুগছে গ্রন্থাগারগুলি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, জেলা গ্রন্থাগারে ১০ জন কর্মী থাকার কথা। রয়েছেন ৩ জন। ৭টি পদ শূন্য। শহরের গ্রন্থাগারে ৪ জন করে কর্মী থাকার কথা। ১৫টি শহর গ্রন্থাগারে ৬০ জন কর্মীর পরিবর্তে রয়েছেন মাত্র ১৯ জন!

পরিস্থিতি মোকাবিলায় আপাতত তাই একটি কমিটি গড়েছে জেলা পরিষদের শিক্ষা স্থায়ী সমিতি। তিন সদস্যের কমিটিতে রয়েছেন জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক ইন্দ্রজিৎ পান, জেলা পরিষদের সচিব প্রবীর ঘোষ ও শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র। কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে বারবার দফতরের আধিকারিক থেকে মন্ত্রীর কাছে গিয়েও তদ্বির করার জন্যই এই কমিটি। শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষের কথায়, ‘‘মামলার জন্য চতুর্থ শ্রেণির ২৪টি পদেও লোক নেওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে সেই জট কাটানো ও বাকি কর্মী নিয়োগে পদক্ষেপ করতেই এই কমিটি।’’

stadium
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy