Advertisement
১৯ মে ২০২৪
প্রশাসনে ভরসা নেই বানভাসিদের

বাঁধ সংস্কারে নামুক সেনা, চায় ঘাটাল

এ বার আর রাজ্যের সেচ দফতরের উপরে ভরসা রাখতে পারছেন না বানভাসি ঘাটালের মানুষ। তাঁদের দাবি, এ বার যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সেনা নামিয়ে বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু হোক। সেই সঙ্গে শহরকে ঘিরে থাকা ১৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীবাঁধের কী অবস্থা তাও সরেজমিন দেখার ব্যবস্থা করুক রাজ্য সরকার।

মেরামতি: বাঁধা হচ্ছে প্রতাপপুরে শিলাবতীর বাঁধ। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।

মেরামতি: বাঁধা হচ্ছে প্রতাপপুরে শিলাবতীর বাঁধ। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।

অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৭ ০২:০৬
Share: Save:

বছর চারেক আগে পাঁশকুড়ার রানিহাটিতে কাঁসাই নদীর বাঁধ ভেঙেছিল। জল কমার আগেই বাঁধের গুরুত্ব বুঝে সেচ দফতর বাঁধ মেরামতির কাজ শুরুও করেছিল। কিন্তু কয়েক কোটি টাকা খরচের পরেও বাঁধ সংস্কারে ব্যর্থ হয়েছিল সেচ দফতর। শেষ পর্যন্ত নামানো হয়েছিল সেনা। আধুনিক মানের যন্ত্র, নিখুত পরিকল্পনায় ওই বাঁধ বাঁধতে সক্ষম হয়েছিল সেনা। রেহাই পেয়েছিলেন পাঁশকুড়া এবং তমলুক ব্লকের হাজার হাজার মানুষ।

তা মাথায় রেখেই এ বার আর রাজ্যের সেচ দফতরের উপরে ভরসা রাখতে পারছেন না বানভাসি ঘাটালের মানুষ। তাঁদের দাবি, এ বার যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সেনা নামিয়ে বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু হোক। সেই সঙ্গে শহরকে ঘিরে থাকা ১৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীবাঁধের কী অবস্থা তাও সরেজমিন দেখার ব্যবস্থা করুক রাজ্য সরকার।

ঘাটালের বাসিন্দাদের দাবি, পাঁশকুড়ার কাঁসাই নদীর বাঁধটির চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয় ঘাটালের শিলাবতী নদীর বাঁধ। তাই পাঁশকুড়া থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে সরকার দ্রুত সেনার সাহায্য নিয়ে বাঁধের মেরামতি শুরু করুক। যদিও সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রতাপপুরে শিলাবতীর বাঁধ মেরামতির যাবতীয় প্রস্তুতিই নেওয়া হচ্ছে।”

মরসুমের প্রথম বর্ষাতেই বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় উদ্বেগে ঘাটালবাসী থেকে জেলা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। কারণ, নাগাড়ে বৃষ্টি সঙ্গে জলাধারগুলি থেকে জল ছাড়লেই জলমগ্ন হয় ঘাটাল। বর্ষার ঘাটালে এটাই দস্তুর। ঘাটালবাসীর দাবি, দ্বিতীয় বন্যা শুরুর আগেই প্রতাপপুরে শিলাবতীর বাঁধ সংস্কার জরুরি। তা না হলে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার আগেই ফের ভাসবে ঘাটাল।

জলপথ: ঘাটালের গোপীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড। নিজস্ব চিত্র।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ঘাটাল মহকুমায় শিলাবতী, কংসাবতী, রূপনারায়ণ-সহ অসংখ্য নদ-নদী ও খাল রয়েছে। নদী বাঁধ রয়েছে ১৫৩ কিলোমিটার। এর অধিকাংশই মূলত মাটির। বরাবরই বাঁধের এক পাড়ে বন্যা হয়। তাতেই ফি বছর জলমগ্ন হয় মহকুমার পাঁচটি ব্লক ও পাঁচটি পুরসভার একাংশ। বাকি অংশে বন্যা না হলেও বাঁধ ভাঙায় এ বার সেই অংশও প্লাবিত। তাই জল কমলেও স্বস্তিতে নেই প্লাবিত এলাকার মানুষ। তাঁদের আশঙ্কা, নতুন করে বাঁধ ভেঙে বিপদ যে বাড়বে না তার নিশ্চয়তা কী?

ঘাটালের এক প্রবীণ ব্যবসায়ীর কথায়, “বর্ষায় ঘাটালে বানভাসি হওয়া নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু বাঁধ ভাঙলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ে। আবার শহরের প্রাণকেন্দ্রই ডুবে গেলে তাতে ক্ষতির পাশাপাশি জনজীবনে দুর্ভোগ আরও বাড়ে।” তাই দ্রুত সেনা নামিয়ে বাঁধ মেরামতি ও সেইসঙ্গে বাঁধের সঠিক নজরদারির দাবিতে সরব দুর্গত এলাকার মানুষ। ঘাটালবাসীর দাবির যৌক্তিকতা মানছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারাও।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জনান, ১৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীবাঁধের ঠিক কোথায় কী অবস্থা তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তার উপরে বাঁধের দু’পাশে জল দাঁড়িয়ে গেলে মাটির বাঁধের যে কোনও জায়গায় চিড় ধরে যেতে পারে। সেই চিড় বড় ফাটলের রূপ নিতে কতক্ষণ!

ব্লক: ঘাটাল, চন্দ্রকোনা-১ ও ২,দাসপুর ১ ও ২,
কেশপুর, দাঁতন ১ ও ২, সবং, পিংলা

মৃত- ৪

জলবন্দি- প্রায় দু’লক্ষ

ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি- হিসেব চলছে

ক্ষতিগ্রস্ত চাষজমি: ৩৯ হাজার হেক্টর

জেলা: পূর্ব মেদিনীপুর

ব্লক: পাঁশকুড়া ১, কোলাঘাট, রামনগর

মৃত- ০

জলবন্দি- হিসেব চলছে

ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি- হিসেব চলছে

ক্ষতিগ্রস্ত চাষজমি: ৮১ হাজার হেক্টর

জেলা: ঝাড়গ্রাম

ব্লক- সাঁকরাইল • গ্রাম- ২৬ • জলবন্দি-১৬৬১ মৃত-১
ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-২৯৫ ক্ষতিগ্রস্ত চাষজমি- ৬৫৫ হেক্টর

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Flood Ghatal ঘাটাল
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE