প্রবল গরমে বেলা বাড়তেই রাস্তা সুনসান। ঘরে ঢুকেও নিস্তার নেই। সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলা ছাড়া করার কিছুই নেই। গরম থেকে বাঁচতে তাই শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) কেনার দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই। নিময় না মেনেই অনেকে বাড়িতে এসি লাগাচ্ছেন। এরফলে বাড়ছে ভোল্টেজের সমস্যা।
বাড়িতে এসি মেশিন বসানোর আগে বিদ্যুৎ দফতরের অফিসে গিয়ে ফর্ম পূরণ করতে হয়। দফতরের কর্মীরা উপভোক্তার বাড়ি গিয়ে বিদ্যুতের মিটারের ক্ষমতা ও অন্যান্য পরিকাঠামো খতিয়ে দেখেন। তারপরেই এসি বসানোর অনুমতি দেওয়া হয়। তবে এসি বসানোর আগে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ‘সিকিউরিটি ডিপোজিট’ হিসেবে জমা দিতে হয়।
এই সব নিয়ম যদিও রয়েছে খাতায়-কলমেই। নিয়মের তোয়াক্কা না করেই অনেকে বাড়িতে এসি লাগাচ্ছেন বলে অভিযোগ। অনেকে বিদ্যুৎ দফতরকে না জানিয়েই বাড়িতে এসি লাগাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ একটি এসির জন্য অনুমতি নিয়ে একাধিক এসি লাগাচ্ছেন। ফলে বিদ্যুতের ভোল্টেজ ওটা-নামার সমস্যা বাড়ছে। বিদ্যুৎ দফতরের খড়্গপুর ডিভিশনের এক আধিকারিকের কথায়, “খড়্গপুর শহরে এখন যে হারে এসি বসানো হচ্ছে তার ৯০ শতাংশেরও অনুমতি নেওয়া হচ্ছে না। আমাদের পক্ষেও সবটা জানা সমস্যার। ফলে বিদ্যুতের ভোল্টেজের ওঠা-নামার সমস্যা বাড়ছে।’’
প্রতিটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী ট্রান্সফর্মারের নির্দিষ্ট ক্ষমতা রয়েছে। কোনও এলাকায় বিদ্যুৎ দফতর যে ক’টি এসি বসানোর অনুমতি দেয়, সেই অনুযায়ী ট্রান্সফর্মারের ক্ষমতা বাড়ানো হয়। যে ব্যক্তির বাড়িতে এসি বসানো হবে, প্রয়োজনে ওই বাড়ির মিটার বদলেও দেওয়া হয়। দরকার পড়লে বাড়ির ওয়ারিংয়ের তারও বদলানো হয়। যদিও অনেকে বিদ্যুৎ দফতরকে না জানিয়ে বাড়িতে এসি বসানোয় এলাকার বিদ্যুতের চাহিদা স্থানীয় ট্রান্সফর্মারের ক্ষমতার অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে। ফলে বিদ্যুতের ভোল্টেজের স্থায়িত্বও নষ্ট হচ্ছে।
সুভাষপল্লি এলাকার বাসিন্দা রেলকর্মী গোবিন্দ গোপ বলেন, “মাস খানেক ধরেই এলাকায় বিদ্যুতের ভোল্টেজ কম। কখনও কখনও ভোল্টেজ হঠাৎ বেড়ে যাচ্ছে। শীতকালে এই সমস্যা ছিল না। গরম পড়তেই সমস্যা বাড়ছে। বিদ্যুৎ দফতরের এ বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।’’ খড়্গপুরের ঝাপেটাপুরের এক বাসিন্দা বলেন, “আমার বাড়িতে একটি এসি বসানোর অনুমতি রয়েছে। এই গরমে দোতলার ঘরে লাগানোর জন্য আর একটি এসি মেশিন কিনেছি। দ্বিতীয় এসি
মেশিনের জন্য নতুন করে আর আবেদন করার প্রয়োজন আছে কি না, জানিনা।”
নিয়ম না মেনে এসি বসানোর প্রবণতা বাড়তে থাকলে বিপদ আসন্ন বলে দাবি করছেন বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকরা। বাড়িতে না জানিয়ে এসি লাগালে ট্রান্সফর্মারের উপর চাপ পড়বে। ফলে ভোল্টেজ ওঠা-নামার সমস্যা চলতেই থাকবে। দীর্ঘদিন এই সমস্যা চললে ট্রান্সফর্মার পুড়েও যেতে পারে। এমনকী বাড়িতে শর্ট সার্কিটের সম্ভাবনাও রয়েছে।
নিয়ম না মেনে এসি লাগানোর ক্ষেত্রে কেন কঠোর হচ্ছে না দফতর?
দফতরের খড়্গপুরের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার কমলকুমার মাইতি বলেন, “আমাদের কাছে আপাতত এ ধরনের কোনও অভিযোগ নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে কেউ অনুমতি ছাড়া এসি চালালো ট্রান্সফর্মার পুড়ে যেতে পারে। এমনকী বাড়িতে অগ্নি সংযোগও ঘটতে পারে। এ জন্য মানুষের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy