Advertisement
০২ মে ২০২৪

টিকিট পেলেন না ব্লক সভাপতি, প্রশ্ন তৃণমূলে

আপাত ভাবে দলের নির্দেশ না মানার কারণে দীপ্তিকুমারকে টিকিট দেওয়া হল না বলে মনে হলেও দলেরই একাংশ এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কারণ, দলের পদে থাকা সত্ত্বেও পঞ্চায়েত ভোটে দলের প্রার্থী হিসাবে টিকিট পেয়েছেন, জেলায় এমন নেতার সংখ্যা একাধিক।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৮ ০১:০৬
Share: Save:

দলের পদাধিকারীরা পঞ্চায়েত ভোটে লড়তে পারবেন না, এমনই নির্দেশ ছিল তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের। নির্দেশ উপেক্ষা করে পাঁশকুড়া পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে প্রার্থী পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন দলের ব্লক সভাপতি দীপ্তিকুমার জানা। একই আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন পঞ্চায়েত সদস্য মহম্মদ হানিফ। শেষপর্যন্ত ওই আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে ‘প্রতীক’ পেয়েছেন হানিফই।

আপাত ভাবে দলের নির্দেশ না মানার কারণে দীপ্তিকুমারকে টিকিট দেওয়া হল না বলে মনে হলেও দলেরই একাংশ এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কারণ, দলের পদে থাকা সত্ত্বেও পঞ্চায়েত ভোটে দলের প্রার্থী হিসাবে টিকিট পেয়েছেন, জেলায় এমন নেতার সংখ্যা একাধিক। ময়না, নন্দকুমার, চণ্ডীপুর, নন্দীগ্রাম সহ বিভিন্ন ব্লকে দলের সভাপতিরা পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী হয়েছেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই দীপ্তিবাবুর টিকিট না পাওয়া নিয়ে দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে।

দীপ্তিকুমারবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলাম ঠিকই। তবে দলীয়ভাবে আরও একজন প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। দল তাঁকেই প্রার্থী করেছে। তাই আমি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেব।’’ পাঁশকুড়া গ্রামীণ এলাকায় তৃণমূলের ব্লক সভাপতি হিসেবে কয়েক বছর ধরেই দায়িত্বে রয়েছেন। ২০০৫ সালে পাঁশকুড়ার গোবিন্দনগরে পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে উপ-নির্বাচনে সিপিএমের বিরুদ্ধে তৃণমূলের হয়ে লড়াই করে হেরে যান তিনি। তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে আর ভোটে লড়েননি দীপ্তিবাবু।

এবার পঞ্চায়েত ভোটে দলের ব্লক নির্বাচনী কমিটির দুই আহ্বায়ক নন্দকুমার মিশ্র ও জাইদুল খানের সঙ্গে কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন দীপ্তিকুমারবাবু। গোবিন্দনগর পঞ্চায়েতের ৭ নম্বর আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেন তিনি। একই আসনে তৃণমূলপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেন গোবিন্দনগর গ্রামপঞ্চায়েতের সদস্য মহম্মদ হানিফ। ওই আসনে বাম প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন সিপিআই নেতা খগেন্দ্রনাথ মাজি। খগেন্দ্রনাথবাবু শুক্রবার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন।

তৃণমূল সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার মহম্মদ হানিফ তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে দলীয় ‘প্রতীক’ পাওয়ার নথিপত্র বিডিও অফিসে জমা দেন। তাতেই স্পষ্ট হয়ে যায়, তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে দীপ্তিকুমারবাবুর স্বীকৃতি না পাওয়ার বিষয়টি। রাজনৈতিক মহলের মতে, পাঁশকুড়ায় তৃণমূলের গোষ্ঠীবিন্যাসে দীপ্তিকুমারবাবু বেশ কিছুদিন ধরে তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়া এবং সদ্য বিজেপিতে নাম লেখানো আনিসুর রহমানের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। আর তাতেই তৃণমূল জেলা নেতৃত্বে ‘রোষে’ পড়েন তিনি। পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট না পাওয়া তারই জের।

তবে দলের নির্বাচন কমিটির আহ্বায়ক তথা পাঁশকুড়ার পুরপ্রধান নন্দকুমার মিশ্র বলেন, ‘‘দলে আলোচনা করে মহম্মদ হানিফকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দীপ্তিকুমারবাবু দলের নেতৃত্ব হিসেবে রয়েছেন। প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়ার বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ নয়।’’

জেলা তৃণমূলের সভাপতি শিশির অধিকারীর বক্তব্য, ‘‘দলের নীতি অনুযায়ী অনেক জায়গায় দলের পদাধিকারীরা এবার পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়াননি। তবে কিছু ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই দলের পদাধিকারীদের প্রার্থী করা হয়েছে। আবার পরিস্থিতি বিবেচনা করেই পাঁশকুড়ায় দীপ্তিকুমারবাবুকে প্রার্থী করা হচ্ছে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE