দাসপুরে তৃণমূলের উচ্ছ্বাস। কৌশিক সাঁতরা
জঙ্গলমহলের হাসি কি এখনও অমলিন! ঝাড়গ্রাম জেলার সার্বিক ফলাফলে উঠছে প্রশ্ন।
কারণ, কার্যত বিরোধীশূন্য জঙ্গলমহলে শাসক দলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে এ বার প্রস্তুত বিরোধীরা। ঝাড়গ্রাম জেলার মোট গ্রাম পঞ্চায়েতের ৮০৬ টি আসনের মধ্যে ভোট হয়েছিল ৭৮০টি আসনে। এর মধ্যে ৩৭৩ টি আসন পেয়েছে তৃণমূল। ৩২৯ টি আসনে জয়ী হয়েছে বিজেপি। বামেরা পেয়েছে ১৪ টি আসন। নির্দল প্রার্থীরা জয়ী হয়েছে ৬৩ টি আসনে। প্রার্থীর মৃত্যুতে একটি আসনে গণনা স্থগিত রয়েছে। জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যা ৭৯ টি। গতবার ৭৭ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করেছিল তৃণমূল। এ বার ৪১টি পেয়েছে তারা। ২৪ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি। আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চের দখলে এসেছে দু২টি গ্রাম পঞ্চায়েত। অমীমাংসিত রয়েছে ১২ টি গ্রাম পঞ্চায়েত। ঝাড়গ্রাম জেলার আটটি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে সাঁকরাইল ও গোপীবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি। বাকি ৬ টি পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছে তৃণমূল। বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, ‘‘তৃণমূল অনেক ছাপ্পা দিয়েছে। না হলে আরও ভাল ফল হতো। আদিবাসী-মূলবাসী সহ সব স্তরের মানুষকে ধন্যবাদ। রাজ্যে বদলের সূচনা ঝাড়গ্রাম জেলা থেকে তাঁরাই সূচনা করলেন।’’
রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবর ঝাড়গ্রামকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে চলেছেন। একাধিক সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, ব্লকে ব্লকে সরকারি কলেজ, রাস্তাঘাট, যোগাযোগের সেতু, মডেল স্কুল হয়েছে। এমনকি ঝাড়গ্রামের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় হতে চলেছে। মাওবাদী প্রভাবিত ঝাড়গ্রাম জেলার উন্নয়নে বরাদ্দ হয়েছে কোটি কোটি টাকা। তারপরও কেন এমন হল?
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, বাস্তবে আদিবাসী অধ্যুষিত ঝাড়গ্রামের প্রান্তবাসীর কাছে উন্নয়নের সুফল পৌঁছয়নি। বরং পঞ্চায়েত স্তরে শাসক দলের জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজন পোষণের ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠেছে। ঝাড়গ্রাম ব্লকের চন্দ্রি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানকে মৃত উপভোক্তার নামে বরাদ্দ টাকা ব্লক প্রশাসনকে ফেরত দিতে হয়েছে। যা সাধারণ মানুষের মনে শাসকের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল। আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মাতৃভাষায় অলচিকি লিপিতে পঠন পাঠনের উপযুক্ত পরিকাঠামো এখনও গড়ে তোলা যায়নি।
আদিবাসী ক্ষোভ যে বাড়ছে তার আঁচ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বছর ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে মন্ত্রী চূড়ামণিকে ধমক দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, এলাকার মাটির সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখছেন না। এ বছরের গোড়ায় ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা বেলপাহাড়ি ব্লক তৃণমূলের সভাপতি বংশীবদন মাহাতোকেও সতর্ক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধুই কি আদিবাসী ক্ষোভ? নাকি শাসক দলের সংগঠনের দুর্বলতাও অন্য একটি কারণ? তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি দলের সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা মানছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি নীচুতলায় গা জোয়ারি রাজনীতি করেছে। কোথায় কোথায় আমাদের ত্রুটি আছে দেখতে হবে। পর্যালোচনা করে দেখা হবে। বিজেপির এই আসন পাওয়া বাজে প্রবণতা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy