Advertisement
০৯ অক্টোবর ২০২৪

পাতা কুড়োনোর ফাঁকে কোপ পড়ছে শাল গাছে

অভিযোগ, প্রতিদিন শহরের রাস্তার ধারে ভূমি দফতরের জমি থেকে কেটে ফেলা হচ্ছে শাল গাছ। বিশেষ করে গত কয়েকদিনে চিড়িয়াখানা যাওয়ার রাস্তার ধারের জঙ্গল ফাঁকা করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

এভাবেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে শালের জঙ্গল। নিজস্ব চিত্র

এভাবেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে শালের জঙ্গল। নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:০৭
Share: Save:

দেখলে মনে হবে জঙ্গল থেকে ডাল, পাতা কুড়োচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু রাস্তা ফাঁকা হলেই ঝোলা থেকে বেরিয়ে প়ড়ছে কুড়ুল, রামদা বা অন্য কোনও ধারাল অস্ত্র। সে সব দিয়েই সরু, লম্বা শাল গাছে পড়ছে কোপ। সেসময় কেউ চলে এলেই আবার শুরু ডাল, পাতা কুড়ানোর কাজ। অরণ্য শহরে প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে এমনই অভিজ্ঞতা হচ্ছে অনেকের।

অভিযোগ, প্রতিদিন শহরের রাস্তার ধারে ভূমি দফতরের জমি থেকে কেটে ফেলা হচ্ছে শাল গাছ। বিশেষ করে গত কয়েকদিনে চিড়িয়াখানা যাওয়ার রাস্তার ধারের জঙ্গল ফাঁকা করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। কিন্তু ডাল, পাতা কুড়ানোর নাম করে কারা এই শাল গাছ কাটছেন? প্রাতর্ভ্রমণকারীদের অভিযোগ, কিছু অসাধু কাঠ ব্যবসায়ী স্থানীয় গরিব বাসিন্দাদের গাছ কাটার কাজে ব্যবহার করছেন। এমন গাছ বেছে নেওয়া হচ্ছে যেগুলি কয়েক কোপেই কাটা যাবে। গাছ কাটা পড়লে আশপাশ থেকে জড়ো হচ্ছেন অনেকে। মুহূর্তে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেই কাটা শাল গাছ। মূলত ভোর এবং সন্ধ্যার দিকে এমন গাছ চুরির ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ।

পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, ঝাড়গ্রামের নতুন এসপি অফিস ও পুলিশ লাইন তৈরির জন্য সরকারি ভাবে কয়েক হাজার শালগাছ কেটে সাফ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারি নির্মাণ কাজের জন্য বনভূমির চরিত্র বদলে দেওয়া হচ্ছে। ঝাড়গ্রাম মূল শহরের রাস্তার ধারের ৯০ শতাংশ শালগাছ আর নেই। কদমকানন থেকে চিড়িয়াখানা যাওয়ার রাস্তার ধারে ধবনীর শালজঙ্গলটি ছিল দেখার মতো। কিন্তু অভিযোগ, সরকারি নির্মাণ কাজের জন্য জঙ্গল ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। টাটা-খড়্গপুর শাখার তৃতীয় লাইন তৈরির জন্য ওই রাস্তার ধারের আরও কয়েক হাজার শাল ও অন্যান্য বহু পুরনো গাছ কেটে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ। তার মধ্যে শুরু হয়েছে গাছ চুরি।

ঝাড়গ্রাম শহরে গাছ কাটার বিরুদ্ধে গত কয়েক মাস ধরে আন্দোলন সংগঠিত করেছেন পরিবেশ কর্মীরা। শহরের বিশিষ্টজনের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে ঝাড়গ্রাম নাগরিক উদ্যোগ। সরকারি ভাবে গাছ কাটার তীব্র বিরোধিতা করে গত অগস্টে জেলাশাসককে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। ঝাড়গ্রাম নাগরিক উদ্যোগের আহ্বায়ক শ্রীমন্ত রাউত বলেন, “উন্নয়ন-কাজের দোহাই দিয়ে শহরের মূল সৌন্দর্য হাজার হাজার শালগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। সরকারি ভাবে এত গাছ কাটা দেখে শহর লাগোয়া গ্রামের গরিব মানুষদের একাংশও নিজেদের প্রয়োজনে গাছ কাটায় উত্সাহী হচ্ছেন। এই প্রবণতা খুবই উদ্বেগজনক।” ঝাড়গ্রামের এডিএফও সমীর মজুমদার বলেন, “ওই জঙ্গল এলাকা এখন ভূমি দফতরের। তাই যৌথ বন কমিটি আর জঙ্গল নজরদারির দায়িত্বে নেই।” আর জেলাশাসক আয়েষা রানির মন্তব্য, “বিষয়টি খতিয়ে দেখে
পদক্ষেপ করব।”

অন্য বিষয়গুলি:

Tick Forest Tree Cut
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE