E-Paper

সাংগঠনিক জেলা ভাগে বোঝাপড়া অমিল!

সাংগঠনিক জেলা বদলে ক্ষোভ দানা বাঁধে কর্মীদের মধ্যেও। গত অগস্টে বিজেপি কর্মীদের একাংশ মেদিনীপুর শহরে দলের জেলা কার্যালয়ে বিক্ষোভ দেখান।

কিংশুক গুপ্ত  ও রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৫২
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

চলতি মাসের ঘটনা। ঝাড়গ্রামে দলীয় বৈঠক। গড়বেতা থেকে যাবেন ৫-৬ জন। কী ভাবে যাবেন? প্রথমে ঠিক হল বাসে। কিন্তু সময়মতো বাস কই! ট্রেন! সে তো সরাসরি নেই। ভায়া খড়্গপুর হয়ে যেতে হবে, সময় লাগবে প্রচুর। অগত্যা উপায় ছোট গাড়ি ভাড়া। কিন্তু ভাড়ার টাকা জোগাবে কে! ঝাড়গ্রাম আপ- ডাউন ভাড়া দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। দেবে কে? দলের জমানো টাকাও নেই। দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। লোকসভা ভোটের আগে সাংগঠনিক বিস্তারে যা খুবই প্রয়োজনীয়। অগত্যা গড়বেতার ওই নেতারা নিজেরা ৪০০-৫০০ টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করে দলের সাংগঠনিক জেলা ঝাড়গ্রামে গিয়েছিলেন। সন্ধ্যায় ফিরে ওই দলের মণ্ডল স্তরের এক নেতার মন্তব্য ছিল, ‘‘এ ভাবে হয় না!’’

সামনে লোকসভা ভোট। তার আগে দলের সাংগঠনিক কাঠামো মজবুত করতে লোকসভা কেন্দ্র ধরে ধরে এক একটি জেলা করেছে বিজেপি। যেমন, ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রকে ধরে দলের একটি সাংগঠনিক জেলা। এই জেলার মধ্যে ঢুকেছে গড়বেতা ও শালবনি বিধানসভা কেন্দ্র। এই কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান বিধানসভা কেন্দ্র, এটিও পুনর্গঠিত ঝাড়গ্রাম সাংগঠনিক জেলার মধ্যে এনেছে বিজেপি। দলের রাজ্য ও জেলা নেতারা বলছেন, এতে সাংগঠনিক ক্ষেত্রে দলের শক্তিবৃদ্ধিই ঘটবে।

নেতারা প্রকাশ্যে শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা না করলেও, দলের অন্দরে নেতা থেকে কর্মী - অনেকের কথাতেই অসন্তোষের সুর। গড়বেতার মণ্ডল স্তরের এক নেতা বলছেন, ‘‘গড়বেতা থেকে ঝাড়গ্রাম শহরের দূরত্ব প্রায় ৮৫ কিলোমিটার। সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ নেই। বাসও নিয়মিত নেই। মিটিং - মিছিলে গাড়ি ভাড়া করে যেতে হলে নিজেদের পকেট থেকে টাকা দিয়ে যেতে হবে। এ রকম মাসে ৩-৪ বার যেতে হলে, দলের কাজ করার ইচ্ছেটাই চলে যাবে।’’ শালবনি বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত চন্দ্রকোনা রোডের এক পদ্ম নেতার আক্ষেপ, ‘‘আগে ৪০-৪৫ কিলোমিটার দূরে মেদিনীপুরে জেলা অফিস কত সহজে যাওয়া যেত, বাস, ট্রেন, এমনকি জরুরি ক্ষেত্রে বাইকেও চলে যাওয়া যেত। খরচও অনেক কম। দলগত বোঝাপড়াও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। ঝাড়গ্রামে যাওয়া চাপ হয়ে যাচ্ছে।’’

শুধু দূরবর্তী হওয়ায় যোগাযোগের সমস্যাই নয়, ঝাড়গ্রাম সাংগঠনিক জেলার সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া গড়বেতা, শালবনি কেন্দ্রের বিজেপির অনেক বুথ স্তরের কর্মী বলছেন, জেলা শহর মেদিনীপুরেই সব সরকারি দফতর, ডিএম অফিস থেকে আদালত। ভোটের প্রচারে কর্মীরা কোনও সমস্যায় পড়লে সেই মেদিনীপুরের নেতাদের মাধ্যমেই মেটাতে হবে, ঝাড়গ্রামের নেতাদের কথা কতটা এই জেলার প্রশাসন গুরুত্ব দেবে সেটাও দেখার। গোয়ালতোড়ের বুথ স্তরের কয়েকজন কর্মী বলেন, ‘‘জেলা শহর মেদিনীপুরে আমাদের নিত্য যাতায়াত, কাজের ফাঁকে জেলা অফিসে গিয়ে দলের কাজও করা যেত, এখন সেই সুযোগ নেই।’’ গড়বেতায় দলের একাংশ কর্মী বলছেন, প্রথম থেকে মেদিনীপুরের সঙ্গে যুক্ত থাকায়, এই জেলার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে একটা আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। হঠাৎ করে ঝাড়গ্রাম হয়ে যাওয়ায়, সেখানকার নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলাও সময়সাপেক্ষ। কর্মীদের একাংশের আশঙ্কা, লোকসভা ভোটের অল্প কয়েকমাস আগে এতবড় সিদ্ধান্ত বুমেরাং না হয়!

সাংগঠনিক জেলা বদলে ক্ষোভ দানা বাঁধে কর্মীদের মধ্যেও। গত অগস্টে বিজেপি কর্মীদের একাংশ মেদিনীপুর শহরে দলের জেলা কার্যালয়ে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতিকে সরাতে হবে, কেননা তিনি চন্দ্রকোনা রোডের বাসিন্দা, চন্দ্রকোনা রোড ঝাড়গ্রাম সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ঢুকেছে। কিছুদিন আগে গড়বেতাতেও এক সভায় মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতির উপস্থিতিতে বিজেপি কর্মীরা মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন দলের সাংগঠনিক রদবদলের অভিযোগ তুলে।

কর্মীদের অসুবিধার কথা মানছেন এই গড়বেতা ও শালবনি বিধানসভা কেন্দ্রের গেরুয়া শিবিরের নেতারাও। এই দুই কেন্দ্রের দলের আহবায়ক তারাচাঁদ দত্ত ও রঘুনাথ মান্না বলেন, ‘‘দূরত্ব বেশি হওয়ায় যোগাযোগের সমস্যা আছে, মানিয়ে নিতে কিছুদিন অসুবিধা তো হবেই, তবে এটা সাময়িক। সাংগঠনিক জেলাকে মান্যতা দিয়েই প্রতি বুথে সাফল্য ছিনিয়ে আনতে আমরা বদ্ধপরিকর।’’ এই দুই কেন্দ্রের দুই প্রবীণ বিজেপি নেতা তথা দলের রাজ্য কমিটির সদস্য প্রদীপ লোধা ও ধীমান কোলের যুক্তিও প্রায় এক। তাঁদের কথায়, ‘‘এতদিনের অভ্যাস বদল হওয়ায় কর্মীদের প্রথমে একটু ঝাঁকুনি আসবে। পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। সাংগঠনিক ক্ষেত্রে অসুবিধা হবে না, প্রশাসনিক ক্ষেত্রে হলেও হতে পারে।’’ প্রদীপ বলেন, ‘‘লোকসভা কেন্দ্রিক সাংগঠনিক জেলা হলে, যিনি প্রার্থী হবেন, বা দায়িত্বে থাকবেন, তাঁর পক্ষে দল পরিচালনা করতে সুবিধা হবে।" ঝাড়গ্রাম জেলার বিজেপি সভাপতি তুফান মাহাতো বলছেন, ‘‘ধীরে ধীরে সব সড়গড় হয়ে যাবে। সাংগঠনিক সুবিধার জন্য এটা সর্বত্র হয়েছে। যোগাযোগও নিবিড় হচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

BJP Jhargram

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy