Advertisement
০২ মে ২০২৪

নদীর চরে জোড়া সিভিক ভলান্টিয়ারের দেহ

জেলা পুলিশ সুপার ভারতীদেবী ঘটনার সঙ্গে মাওবাদী যোগ এড়ালেও ভয় কাটছে না এলাকাবাসীর। একসময়ের মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল এই এলাকায় জোড়া খুনে জড়িত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে শনিবার গোয়ালতোড়-সারেঙ্গা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান এলাকার লোকেরা। মৃতের পরিজনেরাও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন।

 ক্ষোভ: অভিযুক্তদের গ্রেফতারি চেয়ে পথ অবরোধ। গোয়ালতোড়ের পাটাশোলে। নিজস্ব চিত্র

ক্ষোভ: অভিযুক্তদের গ্রেফতারি চেয়ে পথ অবরোধ। গোয়ালতোড়ের পাটাশোলে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোয়ালতোড় শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৭ ০৩:০৫
Share: Save:

অন্য দিনের মতোই শুক্রবার রাতে গোয়ালতোড়ের পিংবনি মোড়ে পাহারা দিচ্ছিলেন তাঁরা। এক বন্ধুর ফোন পেয়ে সহকর্মী সৌরভ মাহাতোকে নিয়ে বাইকে বেরিয়ে যান অমিত মাহাতো। শনিবার সকালে পিংবনি থেকে এক কিলোমিটার দূরে তমাল নদীর চরে এই দুই সিভিক ভলান্টিয়ার অমিত (৩০) ও সৌরভ (২৭)-এর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়।

পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলছেন, ‘‘গোয়ালতোড়ের এই ঘটনার সঙ্গে মাওবাদীদের কোনও যোগ নেই। তদন্তে নির্দিষ্ট সূত্র মিলেছে। সেই মতোই এগোনো হচ্ছে।’’ পুলিশের অনুমান, ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে পরিকল্পনা করেই অমিতকে খুন করা হয়েছে। অমিতের সঙ্গী সৌরভকেও রেয়াত করেনি দুষ্কৃতীরা।

জেলা পুলিশ সুপার ভারতীদেবী ঘটনার সঙ্গে মাওবাদী যোগ এড়ালেও ভয় কাটছে না এলাকাবাসীর। একসময়ের মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল এই এলাকায় জোড়া খুনে জড়িত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে শনিবার গোয়ালতোড়-সারেঙ্গা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান এলাকার লোকেরা। মৃতের পরিজনেরাও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন।

শুক্রবার রাতে অন্য ছ’জন সিভিক ভলান্টিয়ারের সঙ্গে পাহারা দিচ্ছিলেন অমিত ও সৌরভ। অমিতের সহকর্মীদের দাবি, রাত বারোটা নাগাদ অমিতকে কেউ একজন ফোন করে। ফোনে কথা শেষ হলেই সৌরভকে নিয়ে বাইকে করে কাদাশোলের দিকে চলে যান অমিত। কোথায় যাচ্ছেন সে বিষয়ে সহকর্মীদের কিছুই জানাননি তিনি। রাতে আর তাঁরা না ফেরায় সহকর্মীদের সন্দেহ হয়। যদিও তাঁরা কাউকে আর কিছু বলেননি।

শনিবার ভোরে তমাল নদীর চরে কিছুটা দূরত্বে দুই যুবকের দেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিশ গিয়ে কাদামাখা বিকৃত দেহ দু’টি শনাক্ত করে। পাশের ঝোপ থেকে অমিতের বাইক ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে মদের বোতল, খাবারও পেয়েছে পুলিশ। পুলিশের অনুমান, প্রথমে তমাল নদীর সেতুর রেলিংয়ে তাঁদের দু’জনের মাথা ঠুকে দেওয়া হয়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে বড় পাথর দিয়ে তাঁদের সারা শরীর থেঁতলে দেওয়া হয়। শুক্রবার রাতে কে অমিতকে ফোন করেছিল, তা জানতে তাঁর মোবাইলের কললিস্ট পরীক্ষা করছে পুলিশ।

তৃণমূলের সক্রিয় সদস্য অমিতের বাড়ি স্থানীয় ক্যানকেনালি গ্রামে। তাঁর দু’টি মেয়েও রয়েছে। অমিতের স্ত্রী হৈমন্তীদেবী বলছিলেন, ‘‘নাইট ডিউটি করে ও ভোরে ফিরত। ওঁর তো কোনও শত্রু ছিল না!’’ শনিবার অমিতের বাড়িতে যান স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো। তাঁর কাছে হৈমন্তীদেবী দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন। সৌরভের বাড়ি গোয়ালতোড় থানার পাটাশোল এলাকায়। তিন বোন, এক ভাইয়ের অভাবের সংসারে সৌরভই একমাত্র রোজগেরে। তাঁর দিদি দীপান্বিতা মাহাতো বলছিলেন, ‘‘এ বার সংসার কী করে চলবে কে জানে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE