Advertisement
০৪ মে ২০২৪
central team at Midnapore

ডিএম-কে এড়িয়ে রিপোর্ট চায় দিল্লি

কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত রয়েছে। এই সংঘাত পাওনা নিয়ে। রাজ্যের অনুযোগ, বাংলার পাওনা অর্থ আটকে রেখেছে কেন্দ্র। সংঘাতের মধ্যেই ফের জেলায় জেলায় পৌঁছেছে কেন্দ্রীয় দল।

রাজ্যে কেন্দ্রীয় দল।

রাজ্যে কেন্দ্রীয় দল। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:৪৬
Share: Save:

‘দ্য ইনকোয়ারি রিপোর্ট মে নট বি সেন্ট টু দ্য ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট’- কেন্দ্রীয় দলের প্রতি কেন্দ্রের বার্তা। এই বার্তা ঘিরে জল্পনা। প্রশাসনিক মহলে শুরু হয়েছে চর্চাও।

জেলায় পরিদর্শন শেষে রিপোর্ট সরাসরি পৌঁছতে হবে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকেই, জেলাশাসকের কাছে নয়। কেন্দ্রীয় পরিদর্শক দলের সদস্যদের এ কথা মনে করিয়েছে কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। পরিদর্শন রিপোর্ট গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকেই পৌঁছনোর কথা। সেখানে নতুন করে এ কথা কেন মনে করানো হয়েছে, তা নিয়ে জেলায় প্রশাসনিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে একাধিক মহলও।

কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত রয়েছে। এই সংঘাত পাওনা নিয়ে। রাজ্যের অনুযোগ, বাংলার পাওনা অর্থ আটকে রেখেছে কেন্দ্র। সংঘাতের মধ্যেই ফের জেলায় জেলায় পৌঁছেছে কেন্দ্রীয় দল। সরেজমিনে পরিদর্শন শুরু করেছে এই দল। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক সূত্রে খবর, কিছু অভিযোগ পৌঁছেছিল। তার প্রেক্ষিতেই এই পরিদর্শন। মূলত, একশো দিনের কাজের প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (গ্রামীণ) প্রকল্পের কাজ খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় দল। এই দুই প্রকল্পের কাজে অনিয়ম হয়েছে, এমনই অভিযোগ পৌঁছেছে মন্ত্রকে। বস্তুত, একশো দিনের কাজের টাকা-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্র রাজ্যের প্রাপ্য ১ লক্ষ ১৮ হাজার কোটি টাকা এখনও আটকে রেখেছে বলে দাবি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের। এরমধ্যে একশো দিনের কাজের টাকা হিসেবে বকেয়া রয়েছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। বকেয়া মেটানোর দাবিতে তৃণমূল কলকাতায় ধর্না কর্মসূচি করেছে। দিল্লিতেও ধর্না কর্মসূচি করেছে।

আগামী বুধবার দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বাংলার বঞ্চনা নিয়ে কথা বলতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী সেই সময় দিয়েছেন। বাংলার পাওনা অর্থ নিয়েই কথা হতে পারে। মমতাকে বলতেও শোনা গিয়েছে, ‘‘একশো দিনের টাকা, বাংলার বাড়ি, গ্রামীণ রাস্তা- এই সমস্ত খাতে বাংলার প্রাপ্য টাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সে নিয়েই কথা বলার রয়েছে।’’ মঙ্গলবার দিল্লিতে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক রয়েছে। তার পরের দিনই মোদী- মমতার বৈঠক হওয়ার কথা। ফের রাজ্যে এসেছে কেন্দ্রীয় দল। এ দফায় হুগলি, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম সহ কয়েকটি জেলায় পরিদর্শন হচ্ছে। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের নির্দেশে পরিদর্শনে এসেছেন ‘ন্যাশনাল লেভেল মনিটরেরা’ (এনএলএম)। জেলায় এসে কী করণীয়, সে ব্যাপারে এঁদের লিখিত বার্তাই দিয়েছে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে থাকা ‘ন্যাশনাল লেভেল মনিটরিং ডিভিশন’। এই ডিভিশনের লিখিত বার্তা পৌঁছেছে এনএলএম- দের কাছে।

সূত্রের খবর, এই লিখিত বার্তায় প্রয়োজনীয় নির্দেশ এবং পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একাধিক বিষয় সম্বন্ধে মনে করানো হয়েছে। বেশিরভাগ জেলায় দুই সদস্যের কেন্দ্রীয় দল এসেছে। চার দিনের পরিদর্শন হওয়ার কথা। ওই লিখিত বার্তায় স্পষ্ট জানানো হয়েছে, পরিদর্শন শেষে রিপোর্ট জমা করতে হবে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই। পরিদর্শন শেষের পরপরই প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট দিতে হবে। তারপর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সবিস্তার রিপোর্ট দিতে হবে। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শন করতে হবে। অনিয়ম-বেনিয়ম যে কাজে হয়েছে, সেই কাজের ছবিও তুলতে হবে। নিয়মানুযায়ী, কেন্দ্রীয় পরিদর্শক দল জেলা ঘুরে গিয়ে রিপোর্ট দেয় কেন্দ্রকেই। কেন্দ্র সেই রিপোর্ট রাজ্যকে পাঠিয়ে উল্লিখিত খামতি মেটাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেয়। সূত্রের খবর, এ বার এনএলএম- দের যে লিখিত বার্তা দেওয়া হয়েছে, সেখানে উল্লেখ রয়েছে, ‘দ্য ইনকোয়ারি রিপোর্ট মে নট বি সেন্ট টু দ্য ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট’। তবে কী কোথায় কোথায় খামতি রয়েছে, দিল্লিতে রিপোর্ট পৌঁছনোর আগেই তা জানতে পেরে যাচ্ছিলেন জেলাশাসক, দিল্লিতে রিপোর্ট পৌঁছনোর আগেই জেলায় সেই খামতির সংশোধন করে নেওয়া হচ্ছিল, তাই কি লিখিত বার্তায় এমন উল্লেখ, জল্পনা একাধিক মহলে। তাদেরও মতে, লিখিত বার্তায় এটা মনে করিয়ে দেওয়াটা তাৎপর্যপূর্ণই।

জেলায় জেলায় ঘুরছে কেন্দ্রীয় দল। অব্যাহত রাজনৈতিক চাপানউতোরও। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোত ঘোষের কথায়, ‘‘একই জিনিস দেখতে বারবার কেন্দ্রীয় দল আসছে। আসল উদ্দেশ্য কী? বাংলাকে বঞ্চিত করা। গরিব উপভোক্তাদের বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া। কেন্দ্রীয় দল পাঠানোর নেপথ্যে যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে, সেটা সাধারণ মানুষও বুঝতে পারছেন।’’ বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তুষার মুখোপাধ্যায়ের পাল্টা তোপ, ‘‘কেন্দ্রীয় দলকে এখন আর নিজেদের মর্জিমতো ঘোরাতে পারে না তৃণমূলের প্রশাসন। গোঁসা তো হবেই! তৃণমূলের একটা পঞ্চায়েতও অভিযোগমুক্ত নয়। কেন্দ্রের টাকা নয়ছয়, গরমিল, অনিয়মের সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত এফআইআর করা উচিত। যারা গরিব মানুষের সঙ্গে বঞ্চনা করেছে, তাদের জেলে যাওয়া উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

midnapore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE