Advertisement
E-Paper

দেড়শো টাকা দিলেই মিলবে ছাড়!

‘মাথার দাম দেড়শো টাকা’। হেলমেট ছাড়া বাইক চালানোয় বুধবার খড়্গপুরে এক যুবককে আটকায় পুলিশ। বাইকের অন্য কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকায় দেড়শো টাকার চালান হাতে ধরিয়েই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। হেলমেট পরেননি কেন?

বরুণ দে ও দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৬ ০১:৪৬
হেলমেটহীন বাইক আরোহীকে বোঝাচ্ছে পুলিশ। মেদিনীপুরের কেরানিতলা মোড়ে।

হেলমেটহীন বাইক আরোহীকে বোঝাচ্ছে পুলিশ। মেদিনীপুরের কেরানিতলা মোড়ে।

‘মাথার দাম দেড়শো টাকা’।

হেলমেট ছাড়া বাইক চালানোয় বুধবার খড়্গপুরে এক যুবককে আটকায় পুলিশ। বাইকের অন্য কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকায় দেড়শো টাকার চালান হাতে ধরিয়েই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। হেলমেট পরেননি কেন? ওই যুবকের উত্তর, ‘‘বাইকের বিমা, দূষণের ছাড়পত্রের কাগজ ঠিকঠাক থাকলেই হল। না হলে কয়েক হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। আর হেলমেট না পরলে জরিমানা মাত্র দেড়শো টাকা। তাই আর হেলমেট পরিনা। পুলিশ ধরলে টাকা দিয়ে দিই।’’

কম বেশি একই ছবি দেখা গেল মেদিনীপুর শহরেও। হেলমেট না পরায় বুধবার দুপুরে মেদিনীপুরে কেরানিতলা মোড়ে এক বাইক আরোহীকে ধরে পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গেই কাচুমাঁচু মুখে তিনি বলেন, ‘এই ভুল আর হবে না স্যার’! কিন্তু পুলিশ ছেড়ে দিতেই ফের অতিরিক্ত গতিতে বাইক চালিয়ে এলাকা থেকে উধাও হয়ে গেলেন তিনি।

সচেতনতার বালাই নেই। কেউ হেলমেট ছাড়াই দ্রুত গতিতে বাইক নিয়ে ছুটছেন আবার কেউ চার জনকেও তুলে নিচ্ছেন বাইকে। বাইকের দৌরাত্ম্য রুখতে মেদিনীপুর শহরের কিছু জায়গায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। অভিযান চালানো হয় খড়্গপুরেও জরিমানাও আদায় করা হয়। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা নিতান্তই কম বলে অভিযোগ।

অভিযোগ, হেলমেট ছাড়া বাইক চালালে নিয়ম মানার কথা বলা অথবা জরিমানা করা ছাড়া পুলিশ আর কিছুই করে না। হেলমেট না পরলে জরিমানার অঙ্কও এতটাই কম যে সেটা অনেকে ধর্তব্যের মধ্যেই ধরেন না। প্রিমিয়াম না দেওয়ায় বাইকের বিমা নষ্ট হয়ে যাওয়ার এক বছরের মধ্যে পুলিশের হাতে ধরা পড়লে জরিমানা দিতে হয় এক হাজার টাকা। বিমা নষ্ট হওয়ার পর দু’বছর পেরিয়ে গেলে জরিমানার অঙ্ক বেড়ে দাঁড়ায় তিন হাজার টাকায়। আর বাইকের দূষণের ছাড়পত্র না থাকলে গুণতে হয় সাড়ে সাতশো টাকা জরিমানা।

শহরের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘হেলমেট না পরলে পুলিশ বাইকের রেজিস্ট্রেশনের কাগজ নিয়ে একটা দেড়শো টাকার চালান হাতে ধরিয়ে দেয়। সেই চালান নিয়ে ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিয়ে নিকটবর্তী থানায় গেলেই বাইকের কাগজ ফেরত পাওয়া যায়। নিয়মটা এতই সহজ আর জরিমানার টাকার অঙ্কও এত কম, যে অধিকাংশ লোকই তা পরোয়া করেন না। এ নিয়ে পুলিশের আরও কড়়া হওয়া উচিত।’’

আর এই সুযোগেই অন্য দিনের মতো বুধবারও দিনভর খড়্গপুরের ইন্দা, পুরাতনবাজার, কৌশল্যা, ঝাপেটাপুর, ভান্ডারিচক, বড়বাতি মোড়-সহ বিভিন্ন এলাকায় হেলমেট ছাড়াই দাপিয়ে বেড়িয়েছে বাইক আরোহীরা। ছবিটা কমবেশি একই মেদিনীপুর শহরে। হেলমেট না পরেই বুধবার মেদিনীপুরে এসেছিলেন ডেবরার বাসিন্দা রফিজুল আলি। হেলমেট না পরা নিয়ে রফিজুলের যুক্তি, “জোরে বাইক চালাই না। তাই হেলমেট রাখিনি!” যদি বিপদ ঘটে? এ বার ডেবরার ওই যুবকের জবাব, “ঘরে হেলমেট রয়েছে। দূরে কোথাও গেলে ওটা নিই! তবে পুলিশ বলছে, হেলমেট সঙ্গে রাখতে। এ বার সব সময় সঙ্গে নেব!”

হেলমেট না পরেই বাইক নিয়ে বেরিয়েছিলেন খড়্গপুরের সাঁজোয়ালের বাসিন্দা পেশায় রেলকর্মী রঞ্জন দে। প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, “পুরাতনবাজারে এসেছিলাম। তাই এ টুকু রাস্তার জন্য আর হেলমেট পরে বেরনো হয়নি।’’ পুলিশ কিছু বলেনি? তাঁর অভিযোগ, ‘‘অনেক সময় তো পুলিশকে গোপনে টাকা দিয়ে খুশি করেও বাইক চালকেরা ছাড়া পেয়ে যান। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে পুলিশ অনেক বাইক আরোহীকে ধরেছে বলে শুনেছি।”

পথ নিরাপত্তার বেহাল দশা নিয়ে সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পথ নিরাপত্তার হাল ফেরাতে প্রচার অভিযানে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। শহরে অবশ্য এখনও সেই প্রচার অভিযান শুরু হয়নি। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “রাজ্য থেকে নির্দেশ এলেই পদক্ষেপ করা হবে।” জেলা পুলিশের এক কর্তা মানছেন, “পথ দুর্ঘটনা আমরা কিছুতেই আটকাতে পারছি না। এ বার সচেতনতা কর্মসূচি হবে।” পাশাপাশি তাঁর আশ্বাস, “ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ করা হবে।”

ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল, রামপ্রসাদ সাউ।

Helmet Rule
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy