Advertisement
E-Paper

রানির মুখেভাতে জমজমাট খড়্গপুর হাসপাতাল

ফুল, বেলুনে সাজানো ঘর। দুপুরের মেনুতে ভাত, ডাল, আলুভাজা, তরকারি, মাংস, পায়েস, চাটনি, পাপড় ও মিষ্টি। সাজ সাজ রব খড়্গপুরে মহকুমা হাসপাতালে।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৭ ০১:৪২
প্রথম: রানিকে পায়েস খাইয়ে দিচ্ছেন জেলার স্বাস্থকর্তারা। নিজস্ব চিত্র

প্রথম: রানিকে পায়েস খাইয়ে দিচ্ছেন জেলার স্বাস্থকর্তারা। নিজস্ব চিত্র

ফুল, বেলুনে সাজানো ঘর। দুপুরের মেনুতে ভাত, ডাল, আলুভাজা, তরকারি, মাংস, পায়েস, চাটনি, পাপড় ও মিষ্টি। সাজ সাজ রব খড়্গপুরে মহকুমা হাসপাতালে। সেজেগুজে তৈরি জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশ বেরা আর হাসপাতাল সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়। তাঁরাই তো ‘মামা’। ছোট্ট রানির অন্নপ্রাশনে তাঁরাই পায়েস খাইয়ে দিলেন।

গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে ‘সিক নিওনেটাল স্টেবলাইজেশন ইউনিটে’ (এনএনএসইউ) বেড়ে উঠেছে রানি। তার দেখভালের যাবতীয় দায়িত্ব সামলেছেন সুতৃষ্ণা ভট্টাচার্য, মালা রায়েরা— সকলেই মহকুমা হাসপাতালের নার্স। আর রানির বাড়ি হয়ে উঠেছে হাসপাতাল। মুঙ্গলি পরদেশি নামে এক আয়াকে সর্বক্ষণের জন্য রাখা হয়েছে। সুপার নিজে ব্যবস্থা করে দিয়েছেন রানির খাবারের। দেখতে দেখতে ছ’মাস পেরিয়ে গিয়েছে। তাই নিয়ম মেনে ফুটফুটে রানির অন্নপ্রাশনের ব্যবস্থা করেছেন তাঁরাই, চাঁদা তুলে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ছ’মাস আগে হাসপাতালের বাইরে ঘুরতে থাকা এক অন্তঃস্বত্ত্বা ভবঘুরে মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওই মহিলা একটি শিশুকন্যা প্রসব করেন। কিন্তু কিছুদিন পরেই মেয়েকে ছেড়ে চলে যান ওই ভবঘুরে মহিলা। রানির জীবনের গল্প আপাতত এটুকুই। কিন্তু পরের টুকু যাতে ভাল হয়, সে জন্য সব রকম চেষ্টা করে চলেছেন হাসপাতাল কর্মীরা। তাঁরা বলছিলেন, “রানিকে ছেড়ে থাকার কথা এখন আর ভাবতে পারি না। কিন্তু যদি ছাড়তেই হয় তবে আমরা শুধু চাই পরবর্তীকালে ওদের যেন এ ভাবেই ভাল রাখা হয়।”

রানিকে ছাড়তেই হবে। নিয়ম অনুযায়ী, হাসপাতালে কোনও সদ্যোজাত অনাথ শিশু সুস্থ হয়ে বেড়ে ওঠার পরে তাকে চাইল্ড লাইনে দিতে হয়। তাই সম্পূর্ণ সুস্থ রানিকেও চাইল্ড লাইনে যেতে হবে। আর তা শোনার পরেই চোখ ছলছল করে উঠছিল রানিকে বড় করে তোলা হাসপাতালের নার্স সুতৃষ্ণা ভট্টাচার্য, মালা রায়দের।

তার আগে এই উৎসবের আয়োজন। সকাল থেকেই উপস্থিত হয়েছিলেন জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা, সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়, অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস পাল, পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার, কর্মী সংগঠনের নেতা দিলীপ সরখেল প্রমুখ। মামা কে হবেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই এগিয়ে আসেন জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য ও সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়। দু’জনেই রানিকে পায়েস খাইয়ে দেন। পরে গিরীশবাবু বলেন, “আমাদের বহু হাসপাতালে অনেক অনাথ শিশু এ ভাবেই বড় হচ্ছে। তবে অন্নপ্রাশন সত্যিই বিরল। সারা রাজ্যে এই ঘটনা দৃষ্টান্ত হওয়া উচিত।”

শিশু বিভাগে ভর্তি অন্য শিশুদের পরিবারের অনেকেই রানির জন্য উপহার নিয়ে এসেছিলেন। কৌশল্যার বাসিন্দা সীমা পাল এনেছিলেন রানিকে জামা ও মিষ্টি। তাঁর কথায়, “পাঁচদিন ধরে আমার নাতনি এখানে ভর্তি রয়েছে। এই পাঁচদিনে আমার মন কেড়ে নিয়েছে রানি। তাই এই ছোট্ট উপহার। এরপরে ও যেখানে যাবে যেন ভাল থাকে।”

রানি একা নয়। কয়েক মাস আগে রানির জন্য ভাই রাজাও এসে গিয়েছে মহকুমা হাসপাতালে। গত ডিসেম্বরে খড়্গপুর গ্রামীণের বড়কোলা এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় এক সদ্যোজাত শিশুপুত্রকে। পরে পুলিশ তাকে রেখে যায় হাসপাতালে। তার পর থেকে রানির সঙ্গে হাসপাতালের নার্সদের কোলেই বড় হচ্ছে সে।

সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল থেকে একের পর শিশু চুরির ঘটনায় উদ্বিগ্ন কর্তৃপক্ষ। তাই কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে এই দুই হাসিখুশি শিশুকে। হাসপাতাল সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্যে শিশুপাচার নিয়ে যে সব অভিযোগ সামনে আসছে তাতে আমরা এই দুই শিশুকে নিয়ে সব সময় খুব উদ্বেগে থাকি। সর্বক্ষণ ওঁদের এসএনসিইউ-তে রেখে নজরদারি চালানো হয়। দেখতে দেখতে রানির
অন্নপ্রাশন হয়ে গেল। শিশুপাচারের কাজে যাঁরা যুক্ত তাদের এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।”

rice ceremony Child Kharagpur Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy