E-Paper

হচ্ছে না পরীক্ষা, থমকে শিশুদের অস্ত্রোপচার

হাসপাতালের এক আধিকারিক মনে করাচ্ছেন, এখানে রোগীর ‘চাপ’ বেশি। জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, অন্তর্বিভাগ মিলিয়ে দিনে গড়ে ২,৫০০ জন রোগী আসেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:১৩
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

তাদের ইকো কার্ডিয়োগ্রাফ হওয়ার কথা। কিন্তু হচ্ছে না। ফলে, দু’শোরও বেশি শিশু অপেক্ষায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এর ফলে, পশ্চিম মেদিনীপুরের সব থেকে বড় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার-সহ শিশুদের চিকিৎসায় দেরি হচ্ছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এখানে ইকো কার্ডিয়োগ্রাফ মেশিন কম রয়েছে।কার্ডিয়োলজিস্টও কম। হাসপাতালের এক আধিকারিক মনে করাচ্ছেন, ‘‘ইকো কার্ডিয়োগ্রাফ কার্ডিয়োলজিস্ট ছাড়া অন্য কেউ করতে পারেন না।’’

শিশুসাথী প্রকল্পে ওই শিশুদের চিকিৎসা হওয়ার কথা। ইকো না হওয়ায় তাদের পরবর্তী চিকিৎসায় দেরি হয়ে যাচ্ছে। মাসের পর মাস হাসপাতালে ঘুরছেনশিশুর পরিজনেরা।

ইকোর অপেক্ষায় দু’শোরও বেশি শিশু। তাও হাসপাতাল সুপার জয়ন্ত রাউতের দাবি, ‘‘সময়ে পরিষেবা প্রদানের সব রকম চেষ্টা হয়।’’

হাসপাতালের এক আধিকারিক মনে করাচ্ছেন, এখানে রোগীর ‘চাপ’ বেশি। জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, অন্তর্বিভাগ মিলিয়ে দিনে গড়ে ২,৫০০ জন রোগী আসেন। রোগীর পরিজনেদের একাংশের অনুযোগ, এই হাসপাতালে কয়েকটি বিভাগের পরিকাঠামো দুর্বল। এর মধ্যে কার্ডিয়োলজি একটি।

মূলত, শিশুর হৃদ্‌যন্ত্রের জন্মগত সমস্যার চিকিৎসা এবং অস্ত্রোপচারে দেরি কমাতেই শিশুসাথী প্রকল্প শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে। শিশুদের বিনামূল্যে চিকিৎসায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর রাজ্যে প্রায় ১২ হাজার শিশু হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা নিয়ে জন্মায়।

তার মধ্যে প্রায় ২ হাজার শিশুর অবস্থা গুরুতর হয়। ২০১৩ সালে শিশুসাথী শুরু হয়েছিল এই লক্ষ্যে যে বছরে অন্তত এমন ৩ হাজার শিশুর দ্রুত অস্ত্রোপচার হবে নিখরচায়। জেলার এমন শিশুদের প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হওয়ার কথা মেদিনীপুর মেডিক্যালে। তারপর কোন অস্ত্রোপচার, কোন হাসপাতালে হবে, সেটা নির্দিষ্ট রয়েছে। যাবতীয় বন্দোবস্ত করে জেলাই।

করোনারি হার্ট ডিজ়িজ (সিএইচডি) থাকলে পাঠানো হয় এসএসকেএম বা কলকাতার আরেক বেসরকারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। ঠোঁটকাটা, তালুকাটা থাকলে পাঠানো হয় কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতাল- ডায়াবেটিস ইনস্টিটিউটে। ক্লাব-ফুটের ক্ষেত্রে (পায়ের বিকৃতি) অস্ত্রোপচার হয় মেদিনীপুর মেডিক্যালেই। এনটিডি রোগীদের (নিউরাল টিউব ডিফেক্ট) পাঠানো হয় কলকাতার এক মেডিক্যাল রিসার্চ- ওয়েলফেয়ার সোসাইটিতে।

ওই সব বেসরকারি হাসপাতাল, ইনস্টিটিউট, সোসাইটি সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। একাধিক মহল মনে করাচ্ছে, এটি আসলে কেন্দ্রের ‘রাষ্ট্রীয় বাল স্বাস্থ্য কার্যক্রম’ (আরবিএসকে)। এই খাতে কেন্দ্রের জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন থেকেওঅর্থ মেলে।

শিশুসাথীতে ইতিমধ্যে জেলার ৭৭৯ জন শিশুর হৃদ্যন্ত্র সংক্রান্ত জন্মগত সমস্যার চিকিৎসা এবং অস্ত্রোপচার হয়েছে। ১৫৪ জন ঠোঁটকাটা বা তালুকাটা শিশুর অস্ত্রোপচার হয়েছে। ৫৪ জন শিশুর পায়ের বিকৃতির চিকিৎসা হয়েছে। ৫ জন এনটিডি শিশু রোগীরও চিকিৎসা হয়েছে নিখরচায়। এদের কারও মাথার সামনে, কারও বা পিছনে বিরাট মাংসপিণ্ড। কারও আবারশিরদাঁড়ার উপরে।

জেলার এক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘হৃদ্‌পিণ্ডের সমস্যা সায়ানোটিক হলে অস্ত্রোপচার অবশ্যই করাতে হবে। কখনও মাইক্রো সার্জ়ারি, কখনও ওপেন সার্জ়ারি।’’ তবে গোড়ায় ইকো কার্ডিয়োগ্রাফি করতেই হয়। আর মেদিনীপুর মেডিক্যালে ক্রমশ ইকোর অপেক্ষায় থাকা শিশুর সংখ্যা ২১৯ জন।

হাসপাতালের এক আধিকারিকের আশ্বাস, ‘‘আরও একটিইকো কার্ডিয়োগ্রাফ মেশিন আসার কথা। এলেই শিশুদেরদ্রুত চিকিৎসা হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

midnapore

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy