ঘরে টিভি রয়েছে। কিন্তু তাতে দেখা যাচ্ছে না কোনও চ্যানেল। মেদিনীপুর শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলছে এই পরিস্থিতি। আচমকা কেবল্ পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন শহরবাসী।
কেবল্ সংযোগে টিভি চলছে না। সেট-টপ বক্স থাকলে তবেই মিলছে পরিষেবা। অথচ কেবল্ অপারেটরদের কাছে আবেদন করলেই বক্স মিলছে না। কারণ, পর্যাপ্ত বক্স নেই। আবার এক-এক জন কেবল্ অপারেটর বক্সের জন্য এক-এক রকম দাম নিচ্ছেন।
মেদিনীপুর শহর কেবল টিভি অপারেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৌরভ বসু বলেন, “যাঁদের সেট-টপ বক্স রয়েছে, তাঁরা টিভিতে সব চ্যানেল দেখতে পাচ্ছেন। শহরে কেবল্ ডিজিটাইজেশনের কাজ চলছে। সর্বত্র নতুন ব্যবস্থা চালু করতে একটু সময় লাগবেই।” কিন্তু আবেদন করলেও তো দ্রুত সেট-টপ বক্স মিলছে না? সৌরভবাবুর অবশ্য দাবি, “সেট-টপ বক্সের অভাব থাকার কথা নয়। দেখছি কেন এমন হচ্ছে।”
মেদিনীপুর শহরে কেবল্ পরিষেবা দেয় মূলত দু’টি সংস্থা। মাল্টি সার্ভিস অপারেটরের (এমএসও) অধীন প্রায় ৪০ জন কেবল্ অপারেটর রয়েছেন। শহরের এক কেবল্ অপারেটর মানছেন, “এখন সেট-টপ বক্সের চাহিদা বহুগুণ। তাই চাইলে সঙ্গে সঙ্গে বক্স দেওয়া যাচ্ছে না। এক-একটি বক্স বসাতে প্রায় কুড়ি মিনিট করে সময় লাগে। তাই একদিনে বেশি সংযোগ দেওয়াও যাচ্ছে না।’’
কিন্তু এমন সমস্যা হল কেন?
প্রশাসনের এক সূত্র জানাচ্ছে, এটা হওয়ারই ছিল। কারণ, ‘টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’ (ট্রাই)-র নির্দেশ রয়েছে, কেবল্ টেলিভিশনে অ্যানালগ সংযোগ পুরোপুরি বন্ধ করে ডিজিট্যাল সংযোগ চালু করতে হবে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে জেলাগুলোয় এই ব্যবস্থা চালু করার নির্দেশ ছিল। কিন্তু তা হয়নি। ওই সময় কলকাতায় এক বৈঠকে ঠিক হয়, রাতারাতি অ্যানালগ সংযোগ বন্ধ করলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত হবে। মাস কয়েকের মধ্যে ডিজিটাইজেশনের কাজ শেষ করা হবে। তবে যে গতিতে কাজ এগোনোর কথা ছিল, তা এগোয়নি।
সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় চাপ বাড়ছিল। গত মাসে মেদিনীপুরে এক প্রশাসনিক বৈঠকে শহরের কেবল অপারেটরদের জানিয়ে দেওয়া হয়, ডিজিটাইজেশনের কাজ দ্রুত করতে হবে। সেট-টপ বক্স না থাকলে আর কেবল্ পরিষেবা মিলবে না। একাংশ গ্রাহকের অবশ্য অভিযোগ, সেট-টপ বক্স যে এখনই বাধ্যতামূলক তা আগেভাগে জানাননি অপারেটররা। গৃহবধূ অনিতা দত্ত বলেন, “আগে না জানিয়ে কেবল্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। কোনও চ্যানেলই দেখা যাচ্ছে না। খুব অসুবিধা হচ্ছে।” অপারেটরদের অবশ্য বক্তব্য, বক্সের কথা আগেই জানানো হয়েছে। কিন্তু একাংশ গ্রাহক বিষয়টিতে গুরুত্ব দেননি। তাতেই জটিলতা বেড়েছে।
সেট-টপ বক্স নিয়েও জটিলতার অন্ত নেই। গ্রাহকদের অভিযোগ, শহরের এক-এক জায়গায় বক্সের জন্য এক-এক দাম নেওয়া হচ্ছে। কোনও অপারেটর ১৬০০ টাকা তো কেউ ১৭০০ আবার কেউ ১৮০০ টাকা নিচ্ছেন। এটা কেন হচ্ছে? শহরের কেবল্ টিভি অপারেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৌরভবাবুর ব্যাখ্যা, “কলকাতা থেকে সেট-টপ বক্স আনার খরচ রয়েছে। তাই দামের একটু হেরফের হচ্ছে। তবে প্রশাসন বক্সের দাম বেঁধে দিলে ভাল হয়।” তিনি আরও বলেন, “ইতিমধ্যে একাংশ গ্রাহক কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছেন। সেগুলো খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।”
সমস্যা মেটাতে আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসনও। মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক দীননারায়ণ ঘোষ বলেন, “দেখছি কেন এ রকম সমস্যা হল। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy