বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।
জঙ্গলমহলে পুলিশের মিলন অনুষ্ঠানে এসে সম্প্রীতির বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
জানিয়ে দিলেন, একমাত্র এই বাংলাতেই একসঙ্গে দুর্গাপুজো ও মহরমের অনুষ্ঠান হয়। বুধবার বিকেলে ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে ওই অনুষ্ঠানে সব ধর্মের ও বিভিন্ন অরাজনৈতিক ও সেবা মূলক সংস্থার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “উৎসবের মধ্যেই আমরা বেঁচে আছি। একতা আমাদের বেঁচে থাকার শক্তি।”
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হলে এলাকায় অশান্তি ছড়ায়। আমরা কেউ অশান্তি চাই না। এই যে মহরম ওদের দশ দিন হয়। আমাদের চারদিনের পুজো একসঙ্গে হয়। এত ভাল শান্তি সংহতির জায়গা আর কোথাও দেখাতে পারবেন না। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘‘দু’-একটা জায়গায় ব্যক্তিগত শত্রুতার জন্য একটি রাজনৈতিক দল গোলমাল করেছে। আর কোথাও কিছু হয়নি।”
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী ছটপুজোর ছুটি ঘোষণাও করেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, সরকারি জমিতে থাকা আদিবাসীদের দেবস্থানগুলিকেও (জাহের থান) পাট্টা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। করবস্থান, শ্মশানগুলিকে প্রাচীর দিয়ে সাজিয়ে দেওয়া হবে। এজন্য পঞ্চায়েতস্তরে সমীক্ষা হচ্ছে। কয়েকশো পুজো কমিটি, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘টিভিতে আমি জেলার পুজো দেখেছি। আপনাদের ভাবনা আমাদের প্রাণিত করে। সেই কারণে অভিনন্দন জানাতে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’’ রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে ঝাড়গ্রাম একলব্য স্কুলের পরিচালনার ভার দেওয়ার পরে আদিবাসী পড়ুয়াদের মানোন্নয়নে সন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে লালগড়ে নার্সিং ট্রেনিং স্কুলে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় আদিবাসীরা না থাকায় কিছুটা হতাশ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘জামবনির সভামঞ্চে ওই ট্রেনিং স্কুলটির উদ্বোধন করব।’’ আদিবাসীরা যাতে নার্সিং পেশায় আরও বেশি করে আসেন সে জন্য স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ছেলেমেয়েরা মোটর বাইক, স্কুটার চালানোর সময় একটু কষ্ট করে হেলমেট পরুন। এই নিয়ে ৮ তারিখ মিটিং ডেকেছি। আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেব।”
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর এই অনুষ্ঠানে ছিলেন বেলুড় রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের স্বামী শুভকরানন্দ, ঝাড়গ্রাম শ্রীরামকৃষ্ণ সারদাপীঠ কন্যাগুরুকুলের পরিব্রাজিকা আত্মহৃদয়া, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের স্বামী মিলনানন্দ, বৌদ্ধ ভিক্ষু গুণবংশ, খড়্গপুর গুরুদ্বারা কমিটির প্রধান গ্রন্থি চিরঞ্জিত সিংহ, মেদিনীপুর নির্মল হৃদয় স্কুলের ফাদার আলফানসো মুর্মু, মেদিনীপুরে মুসলিম কমিটির রসিদ আলি আলকাদরি প্রমুখ। এ ছাড়াও ছিলেন জেলার সমস্ত জনপ্রতিনিধি, শাসক দলের নেতা ও প্রশাসনের কর্তারা।
কলকাতা থেকে হেলিকপ্টারে ঝাড়গ্রাম হেলিপ্যাডে নামেন মুখ্যমন্ত্রী। সোজা চলে আসেন ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে মিলন অনুষ্ঠানে। বিকেলে অনুষ্ঠান সেরে পর্যটন দফতরের রাজবাড়ি ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সে যান। সন্ধ্যায় ওই কমপ্লেক্স থেকে একশো মিটার দূরে পুরাতন ঝাড়গ্রামের একটি সর্বজনীন কালী পুজো ও সর্বধর্ম সমন্বয়ের মিলন উৎসবের অনুষ্ঠানে মঞ্চে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন সুব্রত বক্সী। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জামবনিতে প্রশাসনিক সভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy