E-Paper

‘মেয়েটাকে মেরে দিল’, অঝোর কান্না মায়ের

চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। উপযুক্ত তদন্তের দাবি জানিয়েছে মৃতার পরিবার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আশ্বাস, তদন্ত হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৬
মেডিক্যাল চত্বরে কন্যাহারা মা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

মেডিক্যাল চত্বরে কন্যাহারা মা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালের আইসিইউ- র কাছে বসে হাউ হাউ করে কাঁদছিলেন রিঙ্কু রায়। বলছিলেন, ‘‘চিকিৎসা করতে পারবে না বলে জানিয়েই দিতে পারত। এ ভাবে মেয়েটাকে মারল কেন?’’ তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘হাসপাতালের গাফিলতির জন্যই আমার মেয়েটা মরে গেল। দু’- দু’বার অপারেশন করে আমার মেয়েটাকে শেষ করে দিল। আমি কী নিয়ে থাকব এ বার? ভুলভাল চিকিৎসা যারা করেছে, সেই ডাক্তার- নার্সদের শাস্তি চাই।’’ রবিবার রাতে মৃত্যু হয়েছে রিঙ্কুর মেয়ে, বছর তেরোর সুপ্রিয়া রায়ের। পেট ব্যথার দরুন শুক্রবার মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন তার পরিজনেরা।

এ ক্ষেত্রে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। উপযুক্ত তদন্তের দাবি জানিয়েছে মৃতার পরিবার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আশ্বাস, তদন্ত হবে। সোমবার ওই কিশোরীর দেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। এ দিন একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। জেলাশাসক তথা মেদিনীপুর মেডিক্যালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান খুরশিদ আলি কাদেরি বলেন, ‘‘তদন্ত হবে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করবে।’’ হাসপাতাল সুপার জয়ন্ত রাউত বলেন, ‘‘কী থেকে কী হয়েছে, তদন্ত কমিটি সবটা খতিয়ে দেখবে।’’ মেয়েটির পরিবারের নালিশ, চিকিৎসায় গাফিলতির কারণেই তার শারীরিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে গুরুত্বই দেয়নি। সুবিচার চেয়ে পুলিশেরও দ্বারস্থ হয়েছে পরিবার। জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

সোমবার হাসপাতালে এসেছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুরশ্রী পাল। মেয়েটির পরিজনেদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়ার ভিডিয়োগ্রাফি করা হয়েছে। মৃত কিশোরীর পরিবারের নালিশ, রবিবার রাতে তাদের মৃত্যুর খবর জানানো হয়। কিন্তু তার আগেই মেয়ে মারা গিয়েছিল। বিষয়টা লুকোনো হয়েছে। মেয়েটির মায়ের কথায়, ‘‘ওরা আগে (হাসপাতাল) আমাদের বলেনি। মারা যাওয়ার বিষয়টা চাপা দিয়ে রেখেছিল। আমার মেয়ের ভুলভাল কিছু কাটাকাটি করেছে। না হলে এ ভাবে মারা যেত না।’’ রবিবার সকালে মেদিনীপুর মেডিক্যালে এসেছিলেন মন্ত্রী তথা ঝাড়গ্রামের বিধায়ক বিরবাহা হাঁসদা। লালগড়ে গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে জখমেরা এখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে হাসপাতালে এসেছিলেন মন্ত্রী। মন্ত্রীকে কাছে পেয়ে তাঁর কাছেও ওই অভিযোগ জানিয়েছিল কিশোরীর পরিবার। এমনকি, কিশোরীর পরিজনেরা মন্ত্রীর হাত-পা ধরে কাতর আর্জিও জানিয়েছিলেন। মেয়েটির চিকিৎসা যাতে ঠিকঠাকভাবে হয়, তা দেখার অনুরোধ করেছিলেন। বিরবাহা বিষয়টি নিয়ে সুপারের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন।

রবিবার রাতে কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে শুনে বিরবাহার প্রতিক্রিয়া, ‘‘সত্যিই খুব মর্মান্তিক ঘটনা। দু:খজনক। মেয়েটাকে তো আর তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না।’’ চিকিৎসায় খামতির নালিশই তো উঠছে? বিরবাহার কথায়, ‘‘খামতি কাম্য নয়।’’ ওই কিশোরীর বাড়ি মেদিনীপুরের রাঙামাটির ঝর্ণাডাঙ্গায়। পরিবার সূত্রে খবর, গত শুক্রবার থেকে মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন ছিল সে। তার অ্যাপেনডিক্স অপারেশন হয়েছিল। মেয়েটির মায়ের কথায়, ‘‘শুক্রবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওটি-তে নিয়ে গিয়েছিল। অ্যাপেনডিক্স অপারেশন হয়। অপারেশনের আগে রক্ত পরীক্ষা-সহ কোনও পরীক্ষাই করা হয়নি। শনিবার আবার ওটি- তে নিয়ে গিয়েছিল। অপারেশনের পর মেয়ের শারীরিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘দু’বার অপারেশন হল কেন? চিকিৎসায় গাফিলতি হয়েছে। যেটা আমাদের কাছে লুকনো হচ্ছে। ডাক্তারকে জবাব দিতে হবে। শুনছি মেয়ের না কি কিডনি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। অ্যাপেনডিক্স অপারেশনের পরে কিডনি কী ভাবে নষ্ট হয়, সেটাও বুঝতে পারছি না।’’

দু’বার অপারেশন কেন? হাসপাতাল সুপার বলেন, ‘‘প্রয়োজনে একাধিকবার অপারেশন করতে হয়।’’ পরিবার সূত্রের খবর, মেডিক্যালে যে ইউনিটের অধীনে মেয়েটির চিকিৎসা চলেছে, সেই ইউনিটে ছিলেন চিকিৎসক সমরেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁর কাছে রিপোর্ট তলব করেছিলেন। সোমবার সুপারের কাছে রিপোর্ট দিয়েছেন ওই চিকিৎসক। মৃতার পরিবারের অভিযোগ, ভুল চিকিৎসা হয়েছে, কোথাও কি ত্রুটি ছিল? ওই চিকিৎসকের জবাব, ‘‘যা বলার হাসপাতাল সুপারকে বলেছি। যা বলার সুপারই বলবেন। আমি কিছু বলব না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ কী করেছি, না করেছি, সব লেখা রয়েছে রিপোর্টে’’

মেয়েকে বাঁচাতে পায়ে ধরেছিলেন মন্ত্রীর। একটু ভাল চিকিৎসার আশায়। এখন আশা হারিয়ে কেঁদেই চলেছেন রিঙ্কু।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

midnapore

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy