প্রতীকী ছবি।
কথায় আছে ‘নামে কি আসে যায়’। অথচ নাম নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি টানাপড়েন অব্যাহত স্বাস্থ্য প্রকল্পে। কেন্দ্র-রাজ্যের এই টানাপড়েনে কার্যত অনিশ্চিত ‘বাংলা মাতৃ প্রকল্প’।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘জননী সুরক্ষা যোজনা’ প্রকল্পে সন্তান প্রসব করার পরেও মায়েরা নিজেদের অধিকারের টাকা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। প্রায় তিন মাস ধরে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাজার খানেক সদ্যোজাতের মা জননী সুরক্ষা যোজনায় আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন না। এর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় তহবিল এসে পৌঁছয়নি বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে।
নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলা দফতর সূত্রের খবর, সেপ্টেম্বরের আগেও জননী সুরক্ষা যোজনার সুবিধা কাঁথি মহকুমা হাসপাতাল-সহ অন্য হাসপাতালগুলিতে সন্তান প্রসব করার পরেও মহিলারা যে পেয়েছেন তা নয়। নিয়ম অনুযায়ী, সরাসরি মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে যাওয়ার কথা। কিন্তু কাঁথি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চেকের মাধ্যমে এই টাকা সদ্যোজাতের মায়ের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে।
২০০৫ সালে কেন্দ্র চালু করেছিল ‘জননী সুরক্ষা যোজনা’। মূলত দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারীদের সন্তান প্রসবের খরচ দেয় কেন্দ্র। প্রসবের পর হাসপাতাল থেকে ছুটির সময় শহর এলাকার মহিলারা পাবেন ৯০০ টাকা আর গ্রামীণ এলাকার মহিলারা পাবেন নগদ এক হাজার টাকা। পূর্ব মেদিনীপুরে তমলুক জেলা সদর হাসপাতাল ছাড়াও সবচেয়ে বেশি সন্তান প্রসব হয় কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে। সেখানে ২০১৮ সালে সাড়ে সাত হাজার, ২০১৯ সালে ৭,২০০ জন এবং চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার মহিলা সন্তান প্রসব করেছেন। গত সেপ্টেম্বরে কাঁথি-৩ ব্লকের এক প্রসূতি ভর্তি হয়েছিলেন কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে। সন্তান প্রসবের পর তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকেনি বলে অভিযোগ। তাঁর স্বামীর দাবি, ‘‘শুধু বিনা পয়সায় অ্যাম্বুল্যান্সে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে।’’
শুধু ওই মহিলা নন, গত সেপ্টেম্বর থেকে এ যাবৎ সাড়ে আটশোর কাছাকাছি মহিলা জননী সুরক্ষা প্রকল্পে নগদ টাকা পাননি বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। সম্প্রতি ওই প্রকল্পে ১৮ লক্ষ ৩২ হাজার টাকার একটি তহবিল কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে পৌঁছেছে। ওই টাকা ১৮ হাজারের বেশি মহিলার বাড়িতে চেক মারফত পৌঁছে গিয়েছে। অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার শেখ মইদুল ইসলাম বলেন, ‘‘তহবিল ঠিকমতো এসে না পৌঁছনোয় মায়েদের কাছে হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার সময় টাকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে তহবিল সময়মতো এসে পৌঁছলে যে সব মহিলারা এখনও টাকা পাননি তাঁরাও পেয়ে যাবেন।’’
কেন্দ্রের ‘জননী সুরক্ষা যোজনা’ প্রকল্পে সমস্ত মহিলাকেই সুবিধা দিতে রাজ্য এর নামকরণ করে ‘বাংলা মাতৃ প্রকল্প’। এই প্রকল্পে সমস্ত মহিলারাই চিকিৎসার সুযোগ পেয়ে থাকেন। কেন্দ্রের প্রকল্পের নাম রাজ্য বদলে দেওয়ার কারণেই কেন্দ্র এই প্রকল্পে টাকা পাঠাতে গড়িমসি করছে বলে স্বাস্থ্য দফতরের একাংশের দাবি। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম দাস। তিনি বলেন, ‘‘প্রকল্পে রাজ্য সরকারের পাওনা দিতে পারছে না কেন্দ্র। তার জন্যই সমস্যা।’’
কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম বদলে ফেলা নিয়ে সুর চড়িয়েছে বিজেপি। উত্তর কাঁথির বিজেপি বিধায়ক সুমিতা সিংহ বলেন, ‘‘কেন্দ্রের সমস্ত প্রকল্পকে নাম বদলে নিজের প্রকল্প বলে চালাচ্ছে রাজ্য সরকার। তাতেই বিপত্তি। তবে গরিবদের সন্তান প্রসবের সময় যাতে সমস্যা না হয়, সে জন্য ব্লক প্রশাসনের মাধ্যমে সমন্বয়ে রক্ষার চেষ্টা করছি।’’
নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্যজেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন, ‘‘একজন প্রসূতিকেও বাদ দেওয়া হচ্ছে না। পর্যায়ক্রমে সকলকেই হাসপাতালগুলির মাধ্যমে টাকা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy