Advertisement
১১ মে ২০২৪

ভাবনা হাত আর পদ্ম, জেতা ওয়ার্ডেও স্বস্তিতে নেই তৃণমূল

দু’জনেই বিদায়ী কাউন্সিলর। গত বছর খড়্গপুরে ভিন্ন ওয়ার্ড থেকে দু’জনেই জয়ী হয়েছিলেন বামেদের সমর্থনে। এ বার তাঁরা খড়্গপুরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস ও বিজেপি প্রার্থী। দু’জনেরই লক্ষ্য ওই ওয়ার্ডের ‘ঘরের ছেলে’ তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস চৌধুরীর থেকে জয় ছিনিয়ে নেওয়া। এই দু’জন হলেন ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর সত্যদেও শর্মা এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর বান্থা মুরলিধর।

প্রচারে যুযুধান: পাড়ায় পাড়ায় প্রচার সারছেন বিজেপি প্রার্থী বান্থা মুরলিধর।

প্রচারে যুযুধান: পাড়ায় পাড়ায় প্রচার সারছেন বিজেপি প্রার্থী বান্থা মুরলিধর।

দেবমাল্য বাগচি
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০১:১৩
Share: Save:

দু’জনেই বিদায়ী কাউন্সিলর। গত বছর খড়্গপুরে ভিন্ন ওয়ার্ড থেকে দু’জনেই জয়ী হয়েছিলেন বামেদের সমর্থনে। এ বার তাঁরা খড়্গপুরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস ও বিজেপি প্রার্থী। দু’জনেরই লক্ষ্য ওই ওয়ার্ডের ‘ঘরের ছেলে’ তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস চৌধুরীর থেকে জয় ছিনিয়ে নেওয়া। এই দু’জন হলেন ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর সত্যদেও শর্মা এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর বান্থা মুরলিধর। সত্যদেও এ বার লড়ছেন ‘হাত’ প্রতীকে। আর মুরলিধরের প্রতীক ‘পদ্ম’। সব মিলিয়ে এ বারের পুর-নির্বাচনে জমজমাট লড়াই এই ওয়ার্ডে।

১৭ নম্বর ওয়ার্ডের এই তিন প্রার্থীরই দলবদলের ইতিহাস রয়েছে। প্রয়াত সিপিআই সাংসদ নারায়ণ চৌবের হাত ধরে আটের দশকে রাজনীতিতে এসেছিলেন দেবাশিস চৌধুরী ওরফে মুনমুন। তখন তিনি ছিলেন সিপিআই কর্মী। তবে ১৯৯৫ সালে নির্দল হিসেবে নিজের ওয়ার্ড থেকে পুর-নির্বাচনে জিতেছিলেন। এর পর টানা ১০ বছর কাউন্সিলর ছিলেন তিনি। তত দিনে অবশ্য তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ২০০৫ সালে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জেতেন দেবাশিস। ২০১০ সালে ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাসে ৯ নম্বরের সঙ্গে ১১ নম্বর সংযুক্ত হয়ে ১৯ নম্বর হলে দেবাশিসের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন সত্যদেও শর্মা। সে বার সত্যদেওর কাছে হার স্বীকার করতে হয় দেবাশিসকে। পরে তৃণমূলের জেলা যুব সভাপতি থেকে খড়্গপুর দলের শহর সভাপতির দায়িত্ব পান তিনি।

নিজের ওয়ার্ডে জনসংযোগে ব্যস্ত তৃণমূলের দেবাশিস চৌধুরী।

সেই দেবাশিসই এ বার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী। গত বারও ওই ওয়ার্ড ছিল তৃণমূলের দখলে। জিতেছিলেন দলীয় প্রার্থী রিনা শেঠ। তা সত্ত্বেও দেবাশিসের লড়াই এ বার কঠিন। কারণ, বিগত পুর-নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী সত্যদেও এ বার এই ওয়ার্ডেই কংগ্রেসের প্রার্থী। সত্যদেও নিজেই বলছেন, “আমার লড়াই দেবাশিস চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এত বছর এই ১৭নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল থাকলেও উন্নয়ন হয়নি। এলাকার মানুষ দেবাশিস চৌধুরী বা কাউন্সিলর রিনা শেঠকে পাশে পায়নি। আমার ওয়ার্ড পাশে হওয়ায় ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষ নানা কাজে আমার কাছে এসেছেন। তাই দেবাশিসকে হারাতে মানুষ প্রস্তুত।’’ সত্যদেওয়ের বিগত দিনের জয়ের ধারা দেবাশিসকে ভাবাচ্ছে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। দেবাশিস নিজেও বলছেন, “এখানে কোনও প্রার্থীই সে ভাবে যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। তবে লড়াই কংগ্রেসের সঙ্গেই হবে।’’

একসময়ে রেলের লোহা নিলামের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ী সত্যদেও নির্দল প্রার্থী হয়ে ১৯৯০ সালে প্রথম পুরনো ১১ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী হন। ১৯৯৫ সালে কংগ্রেসের টিকিটে ফের জেতেন তিনি। ২০০০ সালে তাঁর স্ত্রী মীরাদেবী শর্মা তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হন। তবে শেষ ১০ বছর নির্দল হয়ে লড়েই কাউন্সিলর হয়েছেন সত্যদেও। ২০১০ সালের শেষ পুরভোটে নতুন ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে দেবাশিসকে হারাতে নির্দল সত্যদেওকে সমর্থন জানায় বামেরা। এ বার আবার কংগ্রেসের টিকিটে দেবাশিসের বিরুদ্ধে তিনি লড়াইয়ে নেমেছেন। সে জন্য নিজের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড ছেড়ে সত্যদেও প্রার্থী হয়েছেন ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে।

১৭ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেস প্রার্থী সত্যদেও শর্মার প্রচার।

দেবাশিসকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন বিজেপি প্রার্থী বান্থা মুরলিধরও। তিনি ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর। ২০১০ সালে সিপিএমের টিকিটে প্রথমবার জিতেছিলেন পরিবহণ ব্যবসায়ী মুরলিধর। ২০১২ সালে সিপিএম ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেন তিনি। এ বার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে দেবাশিসকে হারাতে মুরলিধরকে বেছেছে বিজেপি। কাকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন? মুরলিধর বলেন, “এলাকার কোনও উন্নয়ন হয়নি। তাই যে দল বা প্রার্থীকে মানুষ যোগ্য মনে করবেন তিনিই জয়ী হবেন। তবে আমি দেবাশিস চৌধুরীকেই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছি।’’ এই পরিস্থিতিতে একই লক্ষ্যে এগিয়ে চলা মুরলিধর ও সত্যদেওকে কী ভাবে আটবেন দেবাশিস তা নিয়েই জল্পনা চলছে শহর জুড়ে। দেবাশিস নিজে অবশ্য আশাবাদী। বলছেন, “এই ওয়ার্ডের মানুষের সঙ্গে আমার আর আমার দলের গভীর সম্পর্ক। কিন্তু বহিরাগত দুই প্রার্থী বিগত পাঁচ বছরে ওঁদের এলাকায় কী কাজ করেছেন মানুষ জানে। আর কংগ্রেস ও বিজেপি যে আমাকে হারাতে জোট বেঁধেছে সেটাও কারও অজানা নয়। ওয়ার্ডের মানুষ দুই প্রার্থীর এই রাজনীতি মেনে নেবেন না।’’

ছবি তুলেছেন রামপ্রসাদ সাউ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE