Advertisement
০৬ মে ২০২৪

বিরোধী দলনেতার পদ বয়কটের সিদ্ধান্ত কংগ্রেসের

পুরবোর্ড গঠনের সময় দল না ভাঙলেও তিন কাউন্সিলরকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে সরব হয়েছিল রেলশহরের কংগ্রেস। সেই সূত্রেই তৃণমূলের পুরসভায় বিরোধী দলনেতার পদ-সহ বিভিন্ন কমিটি বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিল দল। রবিবার খড়্গপুরের গোলবাজারে শহর কংগ্রেস কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে এ কথা জানিয়েছেন নেতৃত্ব।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৫ ০০:২৫
Share: Save:

পুরবোর্ড গঠনের সময় দল না ভাঙলেও তিন কাউন্সিলরকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে সরব হয়েছিল রেলশহরের কংগ্রেস। সেই সূত্রেই তৃণমূলের পুরসভায় বিরোধী দলনেতার পদ-সহ বিভিন্ন কমিটি বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিল দল। রবিবার খড়্গপুরের গোলবাজারে শহর কংগ্রেস কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে এ কথা জানিয়েছেন নেতৃত্ব। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রেলশহরের ‘চাচা’ বর্ষীয়ান কংগ্রেস বিধায়ক জ্ঞান সিংহ সোহনপাল, কাউন্সিলর রবিশঙ্কর পাণ্ডে, শহর কংগ্রেস সভাপতি অমল দাস প্রমুখ। গত ৪ জুন পুরসভার দায়িত্বভার হস্তান্তরের সময়ে আয়-ব্যয়ের হিসেব দিয়ে এ দিন সভা শুরু হয়। পরে নবগঠিত পুরবোর্ডে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেন রবিশঙ্করবাবু।

এ বারের পুরভোটে কংগ্রস ও তৃণমূল দুই দলই ১১টি করে আসন পেয়েছিল। পরে বাম-বিজেপি ভেঙে ১৮-তে পৌঁছয় তৃণমূল। বিরোধী ভাঙানোর খেলায় মরিয়া তৃণমূল পুলিশ ও দুষ্কৃতীদের মাঠে নামিয়েছিল বলে অভিযোগ। সেই সময়ই রবিশঙ্করবাবু-সহ তিন কংগ্রেস কাউন্সিলরের নামে মামলা রুজু হয়। এই ‘মিথ্যে মামলা’র জেরে দলে কালো দাগ পড়েছে বলে কংগ্রেসের মত। তারই প্রতিবাদে পুরবোর্ডে বিরোধী দলনেতার পদ কংগ্রেস নেবে না। পুরসভার স্ট্যান্ডিং এবং পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির প্রতিনিধি পদেও থাকবেন না কোনও কংগ্রেস কাউন্সিলর। প্রদেশ কংগ্রেস সদস্য রবিশঙ্করবাবুর কথায়, ‘‘আমি-সহ আমাদের তিন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে যে মিথ্যে মামলা রুজু হয়েছে তাতে আমাদের গায়ে দাগ লেগেছে। তাই যত দিন আমাদের উপর মামলা থাকবে ততদিন আমাদের কাউন্সিলরেরা পুরসভার এই তিনটি পদে বসব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

তৃণমূলের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার অবশ্য বলেন, ‘‘আমার কাছে কংগ্রেস এখনও এ কথা জানায় নি। তবে কংগ্রেস এমন সিদ্ধান্ত নিলে আমি নিজে রবিশঙ্কর পাণ্ডে ও কংগ্রেস কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনায় বসে বোঝানোর চেষ্টা করব। কারণ মামলা-মোকদ্দমা আইনের বিষয়। কিন্তু পুরসভা শহরের উন্নয়নের পক্ষে কাজ করবে। সেখানে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।’’ এ প্রসঙ্গে রবিশঙ্করবাবুর বক্তব্য, ‘‘জনগণের উন্নয়নের পক্ষে কাজে কংগ্রেস সহযোগিতা করবে। কিন্তু দুর্নীতি ও অনুন্নয়ন দেখলে প্রতিবাদ চলবে।’’

এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিশঙ্করবাবু জানান, ২০১৩ সালে অনাস্থায় জিতে পুরবোর্ড দখলের সময় তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের থেকে তাঁরা ৬৪ কোটি ৬০ লক্ষ ২৬ হাজার ৫৬১ টাকা পেয়েছিলেন। তখন পুরসভার দেনা ছিল ১৩ কোটি ৪৪ লক্ষ ৯৩ হাজার ২৪৯ টাকা। এমনকী ১২ কোটি টাকা বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের বোঝা বইতে হয়েছে তাঁদের। গত ৪ জুন নতুন পুরপ্রধান প্রদীপবাবুর হাতে ৫২ কোটি ৬৬ লক্ষ ৪৮ হাজার ৪৫০ টাকা তুলে দিয়েছেন রবিশঙ্করবাবু। সেখানে দেনা কমিয়ে ২ কোটি ৭৫ লক্ষ ৭১ হাজার ৯৪৮ টাকায় আনা হয়েছে বলে জানানো হয়।

তৃণমূল যে ভাবে সন্ত্রাস ছড়িয়ে বোর্ড গড়েছে, তার বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন হবে বলেও জানিয়েছেন শহর কংগ্রেস সভাপতি অমলবাবু। তিনি জানান, তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাড়ি বাড়ি লিফলেট বিলি করা হবে, সাঁটানো হবে পোস্টার। ৩৫টি ওয়ার্ডেই জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে পথসভা ও থানায় স্মারকলিপি পেশ করা হবে। বামেরাও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। এ দিন সিপিআই জেলা সহ-সম্পাদক বিপ্লব ভট্ট বলেন, ‘‘এই পুরবোর্ডকে আমরা মানছি না। আর আমাদের মনে হয় পুরপ্রধানকে বয়কট করা উচিত। এখন থেকে ৪ জুন শহরে কালা দিবস হিসেবে পালিত হবে।’’ সিপিএম জোনাল সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডলের কথায়, ‘‘আমরা পুরসভায় কী অবস্থান নেব তা বামফ্রন্টের আলোচনায় ঠিক হবে। তবে যে পদ্ধতিতে তৃণমূল পুরবোর্ড গড়েছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জারি থাকবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE