Advertisement
E-Paper

কেন্দেমারি জেটি নির্মাণে ত্রুটি, শিকেয় নিরাপত্তা

প্রায় ন’মাস আগে চালু হয়েছে নন্দীগ্রামের কেন্দেমারি ফেরিঘাটের ভাসমান জেটি। কিন্তু জেটিতে নির্মাণগত ত্রুটি থাকায় সমস্যায় পড়েছেন মোটরবাইক ও সাইকেল আরোহীরা। তাঁদের অভিযোগ, জেটিটি ছোট এবং জেটি থেকে নৌকোয় ওঠার পথ (গ্যাংওয়ে) ঢালু ও আয়তনে ছোট হওয়ায় নৌকোয় মোটরবাইক ও সাইকেল তুলতে সমস্যা হচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৫ ০০:৫৭
অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নিত্য দিন এভাবেই চলে পারাপার। ছবি: আরিফ ইকবাল খান।

অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নিত্য দিন এভাবেই চলে পারাপার। ছবি: আরিফ ইকবাল খান।

প্রায় ন’মাস আগে চালু হয়েছে নন্দীগ্রামের কেন্দেমারি ফেরিঘাটের ভাসমান জেটি। কিন্তু জেটিতে নির্মাণগত ত্রুটি থাকায় সমস্যায় পড়েছেন মোটরবাইক ও সাইকেল আরোহীরা। তাঁদের অভিযোগ, জেটিটি ছোট এবং জেটি থেকে নৌকোয় ওঠার পথ (গ্যাংওয়ে) ঢালু ও আয়তনে ছোট হওয়ায় নৌকোয় মোটরবাইক ও সাইকেল তুলতে সমস্যা হচ্ছে। ফলে সাহায্য নিতে হচ্ছে নৌকোর কর্মীদের। নৌকোয় মোটরবাইক নিয়ে নদী পারাপারের জন্য ১৩ টাকা ভাড়া দিতে হয়। কিন্তু নৌকোয় মোটরবাইক তুলতে নৌকোর কর্মীদের সাহায্য নেওয়ার জন্য ভাড়া ছাড়াও অতিরিক্ত ১৫ টাকা দিতে হচ্ছে। তাই স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, জেটিটি বড় করতে হবে। হলদিয়া শহরের দিকেও একটি ভাসমান জেটি তৈরি করা হোক। একইসঙ্গে, বিধি ভেঙে নৌকোয় অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েই চলে যাতায়াত। যে কোনও সময় মাঝ নদীতে নৌকো উল্টে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও হুঁশ নেই প্রশাসনের।

হলদিয়ার দিকে জেটি না থাকায় নৌকোতে একার পক্ষে মোটরবাইক তোলা সম্ভব নয়। অন্য দিকে, নন্দীগ্রামের দিকে হলদিয়া উন্নয়ন সংস্থা (এইচডিএ) জেটি তৈরি করলেও সেই জেটি ছোট হওয়ায় সেখানেও নৌকোয় বাইক তুলতে সমস্যা হয়। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন মালপত্র ও সব্জি নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত টাকা গুণতে হয় বলে অভিযোগ। এইচডিএ-র চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার উজ্জলকুমার সেনগুপ্ত বলেন, “ওই ভাসমান জেটির বিষয়ে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল সারফেস ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন’-কে দিয়ে পুনরায় সমীক্ষা করে দেখা হবে। ভাসমান জেটিটি পাল্টানো যায় কি না, সে বিষয়েও তাঁদের পরামর্শ নেওয়া হবে। তার পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ মণ্ডলের কথায়, “হলদিয়া শহরের দিকেও একটি ভাসমান জেটি তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ বিষয়ে এইচডিএ-র চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে।”

হলদিয়া ও নন্দীগ্রামের ফেরিঘাট দিয়ে প্রতিদিন গড়ে দু’-তিন হাজার মানুষ নদী পারাপার করেন। প্রতিদিন শতাধিক মোটরবাইকও ওই ঘাট দিয়ে নদীর এ পার থেকে ও পারে যায়। আগে নদীর দু’পারেই কোনও ভাসমান জেটি ছিল না। ফলে বাসিন্দারা সমস্যায় পড়তেন। সেই সমস্যা সমাধানে এইচডিএ প্রায় দু’কোটি টাকা ব্যয়ে নন্দীগ্রামের কেন্দেমারির দিকে প্রায় ১২০ মিটার গ্যাংওয়ে-সহ জেটি তৈরি করে। ভাসমান জেটিটি লম্বায় ১৮ মিটার ও চওড়ায় ৫ মিটার। জোয়ারের সময় খুব একটা সমস্যা না হলেও ভাটার সময় জেটিটি নিয়ে সমস্যা হয়। ভাটার সময় গ্যাংওয়ে অনেকটা ঢালু হয়ে যায়। ভাসমান জেটিও ছোট হওয়ায় সমস্যা পড়েন যাত্রীরাও।

নন্দীগ্রামের বাসিন্দা গৌরব বেরা বলেন, “নদীর দু’পারেই একার পক্ষে মোটরবাইক তোলা সম্ভব নয়। নৌকোর কর্মীদের সাহায্য নিয়ে মোটরবাইক তুলতে হয়। এ জন্য অতিরিক্ত ১৫ টাকা গুণতে হয়।” তাঁর দাবি, আমরা তো নৌকায় নদী পারাপারের জন্য টিকিট কাটি। তা সত্ত্বেও মোটরবাইক নৌকায় তুলতে অতিরিক্ত ১৫ টাকা গুণতে হচ্ছে। হলদিয়ার বাসিন্দা বাপ্পা চক্রবর্তী বলেন, মোটরবাইক তুলতে অতিরিক্ত টাকা খরচ হলেও তা দেখার কেউ নেই। নৌকো ছাড়ার সময়সীমা বাড়ানোর দাবি করে তাঁর বক্তব্য, “হলদিয়া থেকে শেষ খেয়া যায় রাত ৮টা ১৫ মিনিটে। তার পরে কেউ নদী পার হতে গেলে তাঁকে নৌকো ভাড়া করে যেতে হয়। শেষ খেয়া রাত ৯টার পরে ছাড়ার ব্যবস্থা করতে সুবিধা হয়।”

ওই খেয়াঘাটের ঠিকাদার রবীন্দ্রনাথ দাস বলেন, “পুরসভা যে নির্দিষ্ট ভাড়া বেঁধে দিয়েছে, সেই ভাড়াই আমরা নিই। মোটরবাইক বা মালপত্র তোলার জন্য মুটেরা খরচ নিয়ে থাকে। নৌকোর কর্মী ও স্থানীয় কিছু লোক মুটের কাজ করেন। এর সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই।”

নদীঘাটে ভাড়ার তালিকা টাঙানো নেই কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে ঠিকাদার বলেন, “আমি এ মাসেই কাজের টেন্ডার পেয়েছি। আমরা নদীঘাটে ভাড়ার তালিকা টাঙিয়ে দেব।” নৌকোয় অধিক যাত্রী ওঠানো প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “হলদিয়া বা নন্দীগ্রামে বড় অনুষ্ঠান থাকলে বা উত্‌সবের সময় ফেরিঘাটে ভিড় হয়। সেই সময় কিছুটা অতিরিক্ত যাত্রী নৌকায় ওঠে। আমরা যাত্রীদের নিষেধ করেও আটকাতে পারি না।”

এক পুলিশ আধিকারিকের মতে, “ফেরিঘাটের বিষয়টি পুলিশ নয়, জেলা পরিষদ দেখে।” পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি মধুরিমা মণ্ডলের কথায়, “নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ করতে দেওয়া যাবে না। শীঘ্রই এ বিষয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে জেলার সমস্ত ফেরিঘাটের ঠিকাদারদের নিয়ে বৈঠক করা হবে।”

ফেরি ভাড়া বাড়ায় ক্ষোভ যাত্রীদের

নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া

যাত্রী ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদ-সহ একাধিক দাবিতে নন্দীগ্রামের কেন্দেমারি ফেরিঘাটে অবস্থান বিক্ষোভ করল এসইউসি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কেন্দেমারি ফেরিঘাটে বিক্ষোভ চলে। এসইউসি-র এক প্রতিনিধি দল এ দিন নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের বিডিও, নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির কাছে স্মারকলিপিও জমা দেন। এসইউসি-র নন্দীগ্রাম লোকাল কমিটির সম্পাদক মনোজ দাস জানান, গত সপ্তাহ থেকে কেন্দেমারি-হলদিয়া ফেরি রুটে যাত্রী ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। আগে ওই রুটে যাত্রীপিছু বাড়া ছিল সাড়ে ৩ টাকা। এখন তা বাড়িয়ে ৪ টাকা করা হয়েছে। ফেরিতে সাইকেল নিয়ে যেতে হলে ভাড়া দেড় টাকা থেকে বাড়িয়ে দু’টাকা করা হয়েছে। মোটবাইকের নিয়ে যাওয়ার ভাড়াও এক টাকা বেড়ে হয়েছে ১৩ টাকা। তাছাড়াও নৌকোয় মোটরবাইক তোলা ও নামাতে সাহায্য করার জন্য অতিরিক্ত ১৫ টাকা করে নেওয়া হয়। তাঁরা বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। আর ওই অতিরিক্ত টাকাও নেওয়া যাবে না। হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ মণ্ডল বলেন, “ফেরিঘাটের ঠিকাদার ৫০ পয়সা করে ভাড়া বাড়াতে পারেন বলে অনেক আগেই আমরা তাঁকে জানিয়েছিলাম। ওরা এখন সেই ভাড়াই কার্যকরী করেছে।” নন্দীগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আবু তাহের জানান, ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি হলদিয়া পুরসভা থেকে তাঁদের জানানো হয়নি। চিঠি লিখে পুরসভার কাছে বিষয়টি জানতে চাইব। একইভাবে, নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের বিডিও অমর্ত্য চক্রবর্তী বলেন, “ফেরিঘাটের বিষয়টি হলদিয়া পুরসভা দেখে। ওদের দাবি-দাওয়ার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

Haldia ferry kedemari agitation Kendemari jetty security nandigram
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy