ঝাড়গ্রাম শহরের রাস্তায় আদিবাসী দম্পতি নিমাই হেমব্রম ও নীলমণি হেমব্রম। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।
ফের ডাইনি সন্দেহে মারধর। অপবাদ দিয়ে ঘরছাড়া করা হল প্রৌঢ় দম্পতিকে। তবে প্রশাসনের তৎপরতায় ঘরে ফিরলেন তাঁরা।
ঝাড়গ্রাম শহর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে বৃন্দাবনপুর গ্রামের ঘটনা। গত শুক্রবার জানগুরুর নির্দেশে নিমাই হেমব্রম ও তাঁর স্ত্রী নীলমণি হেমব্রমকে মারধর করে গ্রামছাড়া করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযোগ এই অত্যাচারের নেতৃত্বে ছিলেন নিমাইবাবুর জ্ঞাতি ভাইরাই। টানা দু’দিন জঙ্গলে জঙ্গলে লুকিয়ে কাটিয়েছেন ওই দম্পতি।
জানা গিয়েছে বছর পঞ্চাশের নিমাই হেমব্রম পেশায় চাষি। গ্রামে তাঁর জমিজমা ও বিভিন্ন গাছগাছড়ার বাগান আছে। সম্পত্তি নিয়ে শরিকি বিবাদ রয়েছে। তাঁর খুড়তুতো ভাই শ্রীনাথ হেমব্রম গত বছর পথ দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত পান। এক বছর টানা চিকিৎসার পর এখনও তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হননি। প্রায়ই জ্ঞাতি ভাইরা এই নিয়ে ওই দম্পতিকে ডাইন বলে গালি দিতেন বলে অভিযোগ। সম্প্রতি শ্রীনাথবাবুর জ্বর হয়। এরপরই শ্রীনাথবাবুর দাদা হিকিম হেমব্রমের নেতৃত্বে স্থানীয় বাসিন্দার একাংশ জামবনির এক জানগুরুর শরণাপন্ন হন। ওই জানগুরুর নিদান দেন, গ্রামে ‘রক্তচোষা ডাইন’ দম্পতি রয়েছে। তাদের কুদৃষ্টিতেই শ্রীনাথবাবু সুস্থ হচ্ছেন না। এরপরই গত শুক্রবার সকালে বাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে বাইরে এনে লাঠিপেটা করা হয় হেমব্রম দম্পতিকে। ঢোল বাজিয়ে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়।
দুবরাজপুর গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন নিমাইবাবু। কিন্তু গ্রামের মাতব্বররা সেখানেও ধাওয়া করে এসে ওই দম্পতিকে তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ। প্রাণ ভয়ে নিমাইবাবু ও নীলমণিদেবী ঝাড়গ্রাম শহর লাগোয়া জঙ্গলে আত্মগোপন করেন।
রবিবার রঘুনাথপুর এলাকায় নীলমণিদেবীকে নিয়ে রাস্তার ধারে বসেছিলেন নিমাইবাবু। তিনি বলেন, “মানুষ কখনও ডাইন হয় নাকি। আমার জমি ও বাগান দখলের জন্যই এই সব ষড়যন্ত্র করছে আমার জ্ঞাতিরা।” নীলমণিদেবী জানান, “বাড়িতে কালীপুজো করি বলে পড়শিরা বলত, আমি নাকি ডাইনি বিদ্যা শিখেছি। আসলে অপবাদ দিয়ে আমাদের সম্পত্তি হাতানোর চেষ্টা।’’
খবর পেয়ে এ দিন দুপুরে বিডিও অনির্বাণ বসু ঝাড়গ্রাম শহরের রঘুনাথপুর এলাকায় এসে হেমব্রম দম্পতির অভিযোগ শোনেন। বিডিও-এর উদ্যোগে নিমাইবাবু ও নীলমণিদেবীকে সরকারি গাড়িতে করে পুলিশ প্রহরায় বৃন্দাবনপুর গ্রামে পাঠানো হয়। বিডিও গ্রামবাসীদের সতর্ক করে বলেন, “এই দম্পতির কোনও ক্ষতি করা হলে আপনাদের কাউকে রেয়াত করা হবে না। এরপর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অনির্বানবাবু আশ্বাস দেন, “গ্রামে সচেতনতা মূলক প্রচার চালানো হবে। ডাইন বিরোধী অঙ্গন নাটক দেখানো হবে বাসিন্দাদের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy