মাঠগুলো ধুঁকছে। খেলাধুলোর পরিকাঠামোও সে ভাবে নেই। যে শহরে একসময় দাপিয়ে গিয়েছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতো ক্রিকেটার, সেই খড়্গপুরেই পাড়ায়-পাড়ায় খেলাধুলোর সংস্কৃতি হারিয়ে যেতে বসেছিল। পরিস্থিতি বদলাতে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা। ৩৫টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নিয়ে দল গড়ে শুরু হচ্ছে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট।
আজ, রবিবার থেকে খড়্গপুরের বিএনআর ময়দানে শুরু হবে এই পুর-ক্রিকেট। সব মিলিয়ে খেলবে ৩৫টি দল। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের যুবকদের নিয়েই গড়া হয়েছে দল। তা ছাড়া, পুরকর্মীদের একটি দল গঠন করা হয়েছে। মোট ১৮ জোড়া দলে ৬ ওভারের এই খেলা হবে। খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের কথায়, “এই শহরকে মানুষ দুষ্কর্মের আখড়া বলে চেনে। একমাত্র খেলাধুলো পারে যুব সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।” এই টুর্নামেন্ট ঘিরে রেলশহর এখন উত্তেজনায় ফুটছে। শনিবার জোরকদমে প্রস্তুতি চালিয়েছে প্রতিটি দল। ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সোমশেখর রাও বলছিলেন, “শহরে যে সব প্রতিযোগিতা হয় তাতে বাইরে থেকে ভাড়া করে খেলোয়াড় আনা হয়। শহরের হাতে গোলা কয়েকজন সেখানে সুযোগ পায়। কিন্তু এই টুর্নামেন্টে আমাদের দলে ওয়ার্ডেরই ১১ জন খেলবে। অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছে।” খড়্গপুর শহরে একসময় প্রতিটি পাড়ায় ছিল ক্রিকেট ও ফুটবলের দল। রেলের স্পোর্টস কোটায় চাকরির সুযোগ পেতে শহরের যুবকদের খেলাধুলো বাড়তি আগ্রহ ছিল। রেলের উদ্যোগে বছরভর বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হওয়ায় রেলকর্মীরাও নিয়মিত খেলাধুলোর চর্চা করতেন। রেলের মাঠ এবং অন্য মাঠে নিয়মিত ক্রিকেট-ফুটবলের অনুশীলন চলত। খড়্গপুরের প্রবীণদের মুখে এখনও খালসা স্পোর্টস, অন্ধ্র স্পোর্টস, মহামেডান স্পোর্টসের মতো সংগঠনগুলির কথা শোনা যায়। হকি, ফুটবল, লন টেনিস, ক্রিকেট, ব্যডমিন্টনের সঙ্গে জড়িত বেঙ্গলি ক্লাব, শ্রীরাম ক্লাব, ট্রাফিক ক্লাব, লাইট অফ বেঙ্গলের মতো ক্লাবগুলির কথাও উঠে আসে সেই স্মৃতিচারণায়।
সেই স্বর্ণযুগ আর নেই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগের অভাব ও মাঠে পরিকাঠামোর অভাবে খেলাধুলোর চর্চা এখন ফিকে হয়ে গিয়েছে। সেরসা স্টেডিয়ামে দু’-তিনজন কোচের কাছে শহরের কয়েকজন কিশোরের ক্রিকেট-ফুটবল অনুশীলন করে। এর বাইরে খেলাধুলোর চর্চা বিশেষ দেখা যায় না। পুর-উদ্যোগে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট সেই পরিস্থিতি বদলাবে বলেই আশা। একসময় চুটিয়ে ক্রিকেট খেলা অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী মিন্টু চৌধুরীর কথায়, “আমাদের সময়ে পাড়ায়-পাড়ায় ডিউস বলে নিয়মিত ক্রিকেট খেলা হত। পুরসভার এই উদ্যোগ যথেষ্ট ভাল। এতে কিছুটা হলেও পাড়ায় খেলাধুলোর চর্চা বাড়বে। তবে পাড়ায়-পাড়ায় মাঠের পরিকাঠামো গড়ে তোলাও জরুরি।”
বিরোধীরাও তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার এই উদ্যোগে খুশি। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর স্মৃতিকনা দেবনাথ বলেন, “আমি চাই প্রতি বছর এই ধরনের টুর্নামেন্ট হোক।” ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর বিষ্ণুবাহাদুর কামীরও বক্তব্য, “এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy