Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

‘রেফার’ রোগে ভুগছে দাঁতনের হাসপাতাল

পরিচ্ছন্নতায় জুড়ি মেলা ভার। দোতলা হাসপাতাল ভবনের চারিদিক ঝকঝকে। যদিও চিকিৎসক-নার্সের অভাবে এই দাঁতন গ্রামীণ হাসপাতালই ভুগছে ‘রেফার’ রোগে।

শূন্য: হাসপাতালে ফাঁকা পড়ে শয্যা। নিজস্ব চিত্র

শূন্য: হাসপাতালে ফাঁকা পড়ে শয্যা। নিজস্ব চিত্র

দেবমাল্য বাগচী
দাঁতন শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৭ ০১:০৭
Share: Save:

পরিচ্ছন্নতায় জুড়ি মেলা ভার। দোতলা হাসপাতাল ভবনের চারিদিক ঝকঝকে। যদিও চিকিৎসক-নার্সের অভাবে এই দাঁতন গ্রামীণ হাসপাতালই ভুগছে ‘রেফার’ রোগে।

অভিযোগ, ৩০ শয্যার হাসপাতালের অধিকাংশ বেডই ফাঁকা পড়ে থাকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগীর ছুটি হয়ে যাওয়ার কারণেই শয্যা ফাঁকা পড়ে রয়েছে। যদিও রোগীর পরিজনেদের দাবি, রোগীদের অহরহ ‘রেফার’ করে দেওয়ায় শয্যা ফাঁকাই পড়ে থাকছে। এ ছাড়াও চিকিৎসায় গাফিলতি বাড়তে থাকায় হাসপাতালের ওপর ভরসা হারাচ্ছেন রোগীরা।

হাসপাতালের সমস্যার মূল কারণ যে চিকিৎসকের অভাব, তা মানছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বছর তিনেক আগে গ্রামীণ হাসপাতালের তকমা পেয়েছে এই হাসপাতাল। যদিও হাসপাতালে ৬ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও রয়েছেন ৪ জন। নেই কোনও স্ত্রী রোগ ও শিশু বিশেষজ্ঞ। ৪ জন চিকিৎসকের মধ্যে ৩ জন (জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার) জিডিএমও হলেও একজন (অ্যাসিট্যান্ট মেডিক্যাল অফিসার) এএমও। কম নার্সের সংখ্যাও। ১১ জন নার্সের পদ থাকলেও রয়েছেন ৯ জন নার্স। নেই নার্স সুপার ও পাবলিক হেলথ নার্স।

নেই-এর তালিকা এখানেই শেষ নয়। হাসপাতালে ৮ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ৩ জন। আর ৪ জন সাফাইকর্মীর পদ থাকলেও রয়েছেন মাত্র একজন। হাসপাতাল সাফসুতরো রাখতে ৪ জন অস্থায়ী সাফাইকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। যদিও চিকিৎসকের অভাবে হাসপাতালে যথাযথ পরিষেবা মিলছে না বলে অভিযোগ।

গত ২ এপ্রিল ব্লকের মেনকাপুরের বাসিন্দা বৃদ্ধা নীলমণি পাত্র বুকে ব্যথা ও জ্বরের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। নীলমণিদেবীর চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে সরব তাঁর পরিজনেরা। রোগীর স্বামী গিরিধারি পাত্রের অভিযোগ, “তিন দিন ধরে স্ত্রী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। আমরা স্বাস্থ্যবিমার কার্ডও জমা দিয়েছি। কিন্তু স্যালাইন দেওয়া ছাড়া কোনও চিকিৎসা হয়নি। চিকিৎসকেরা ছুটি দিয়ে দিতে চাইছেন।”

শুধু চিকিৎসার গাফিলতি নয়, ‘রেফার’-এর প্রবণতা বাড়ার অভিযোগও উঠছে। রোগীর পরিজনেদের অভিযোগ, চিকিৎসা না করেই রোগীদের মহকুমা বা জেলা হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দেওয়া হচ্ছে। গত ৪ এপ্রিল মাথা ব্যথার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসেন দাঁতনের বামুনপুকুরের বাসিন্দা সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সোমালি মাহালি। যদিও চিকিৎসা না করেই তাকে ‘রেফার’ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। সোমালির মা মালতি মাহালির অভিযোগ, “হাসপাতালে ভর্তি নেওয়ার পর একদিন স্যালাইন দেওয়া ছাড়া মেয়ের কোনও চিকিৎসা হয়নি। এখন বলছে মেদিনীপুর নিয়ে যেতে।”

ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক মৌসম মান্না বলছেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্সের অভাব রয়েছে। তার পরেও আমরা যতটা সম্ভব রোগীদের চিকিৎসা করি। কিন্তু রোগীর কোনও জটিলতা দেখলে তো ‘রেফার’ করা ছাড়া গতি থাকে না।” এমন পরিস্থিতির সমাধান কেন হচ্ছে না? পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “সব ব্লক ও গ্রামীণ হাসপাতালেই চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। কিন্তু চিকিৎসা যেটুকু হওয়ার কথা তা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে তো রোগীকে ‘রেফার’ করতেই হবে। কিন্তু প্রয়োজন ছাড়া রোগী ‘রেফার’ বা চিকিৎসায় গাফিলতি হচ্ছে কি না নিশ্চয় দেখব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hospitals Doctors Nurses
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE