পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা সহ উপকূলবর্তী রাজ্যগুলির উদ্বেগ বাড়িয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’। তার জেরে ইতিমধ্যে দিঘা, মন্দারমণি-সহ এ রাজ্যের উপকূল জুড়ে জারি হয়েছে চরম সর্তকতা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দিঘায় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা পর্যটকদের সতর্ক করতে নেমে পড়েছেন। ফণীর আতঙ্কে দিঘা প্রায় সুনসান। ওল্ড দিঘার সি হক গোলার ঘাট থেকে অ্যাকোরিয়াম ঘাট, নিউ দিঘার পুলিশ হলিডে হোম ঘাট—সব জায়গা কার্যত পর্যটক শূন্য। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ নাগাদ সমুদ্র স্নানের একেবারে মোক্ষম সময়ে পর্যটকশূন্য সৈকত দেখে পরিচিত দিঘাকে মেলাতে কষ্ট হচ্ছিল।
ফণীকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার দিঘায় এমন ছবি নজরে পড়লেও দিঘা থেকে তালসারির পথে উদয়পুর সৈকতে একেবারেই উল্টো ছবি ধরা পড়ল। নিউ দিঘার সৈকত লাগোয়া হলেও উদয়পুর মানচিত্রে পাশের রাজ্য ওড়িশার উপকূল এলাকায় পড়ে। সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও ‘ফণি’ নিয়ে এ দিন সেখানে কোনওরকম তৎপরতা চেখে পড়ল না কী বাংলা কী ওড়িশা প্রশাসনের। দিব্যি চলছে সমুদ্রের বিশাল বিশাল ঢেউয়ের মধ্যেই পর্যটকদের স্নান। উত্তাল সমুদ্রের রূপ উপভোগ করতে সৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকেরা। সারিবদ্ধ ভাবে অস্থায়ী দোকানও বসেছে সৈকতের এদিক ওদিকে। স্থানীয়দের দাবি, উদয়পুর এখন ‘ভাগের মা’। কী পশ্চিমবঙ্গ, কী ওড়িশা কোনও প্রশাসনকেই এখানে দেখা যায় না। তবে ঘূর্ণিঝড় আসার কথা জানিয়ে দু’একবার মাইকে প্রচার করা হয়েছে।
শেখ লালা নামে এক পর্যটক জানান, ‘‘ওড়িশার পুলিশ সকালে এসেছিল। তবে সৈকতে ঘোরাফেরায় বাধা দেয়নি।’’ উদয়পুরে সৈকতের ধারে অস্থায়ী দোকান রয়েছে ওড়িশার বাসিন্দা নিখিল বেরার। তাঁর দাবি, ‘‘বুধবার পুলিশ এসে বলেছিল সমুদ্রে নামা যাবে না। ব্যস, ওই পর্যন্তই। আজ সকাল থেকেই সমুদ্রে প্রচণ্ড ঢেউ রয়েছে। পর্যটকরাও দিব্যি সমু্দের স্নান করছেন।’’ দিঘা থানার তরফে জানানো হয়েছে, এলাকাটি যেহেতু ওড়িশার অন্তর্গত তাই তারা ওড়িশার তালসারি থানাকে সতর্ক করেছে। কাঁথির এসডিও শুভময় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওড়িশা প্রশাসনের সঙ্গে আমরা যোগাযোগের চেষ্টা করছি।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বুধবার সকাল থেকেই দিঘা-মন্দারমণির সৈকত জুড়ে মাইকে করে ফণীর সতকর্তা প্রচার শুরু হয়। বৃহস্পতিবার দিঘা এসে পৌঁছয় ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এনডিআরএফ)- এর ৩১ জনের একটি দল। তাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ শুরু করেছে নুলিয়া, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, দিঘা উপকূল থানার পুলিশ। সকাল ১১ টা থেকেই সৈকত থেকে সমস্ত পর্যটকদের সরিয়ে দেওয়া শুরু হয়। আপৎকালীন প্রস্তুতি হিসাবে পর্যটকদের শুকনো খাবার সংগ্রহে রাখার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সৈকত লাগোয়া সমস্ত দোকাটপাট বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে উপকূল এলাকায় যাঁদের কাঁচা বাড়ি আছে, তাঁরা যেন সাইক্লোন সেন্টারে চলে যান।
এনডিআরএফ-এর পক্ষ থেকে দিঘা লাগোয়া পদিমা -১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে বৈঠক করা হয়েছে। পঞ্চায়েতের আধিকারিক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়ে বৈঠকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ঝড়ের সময় কী করতে হবে। রামনগর ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ফণীর মোকাবিলায় বেশ কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই ব্লকে ৮ টি সাইক্লোন সেন্টারকে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। ব্লকের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অফিসার অভিজিৎ জানা বলেন, “অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাইস্কুলগুলিকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া চিড়ে, গুড়, মুড়ি, বেবি ফুড সহ শুকনো খাবার মজুত রাখা হয়েছে। ব্লক অফিসে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।’’
দিঘা শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, “বেশিরভাগ পর্যটকই ফিরে গিয়েছেন। খুব অল্প সংখ্যক পর্যটক থেকে গিয়েছেন। তাঁদের আমরা ঝড়ের সময়ে হোটেলের বাইরে বেরোতে নিষেধ করেছি। সামনে শনিবার ও রবিবার থাকায় হোটেলগুলিতে অনেক বুকিং ছিল। প্রায় সবই বাতিল করেছেন পর্যটকেরা। ফলে হোটেল ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। পর্যটকদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সে জন্য সমস্ত রকম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’’